সুকুমার সরকার, ঢাকা: জামাত-ই-ইসলামি ও ইসলামি ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকার। এবার সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে গেল! জামাতকে নিষিদ্ধ করে যে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে নব গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার। আজ বুধবার এই মর্মে নয়া বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
ছাত্র আন্দোলনকে হিংসাত্মক করে তোলার অভিযোগে জামাতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। গত ১ আগস্ট এনিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল তৎকালীন হাসিনা সরকার। এর চার দিন পর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে আওয়ামি লিগ সরকারের পতন হয়। পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়েন। গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। দায়িত্ব গ্রহণের ২৩ দিনের মাথায় জামাত-ই-ইসলামি ও ইসলামি ছাত্র শিবিরের আদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে এই নয়া সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, 'যেহেতু বাংলাদেশ জামাত-ই-ইসলামি এবং তার ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবির-সহ দলটির সকল অঙ্গ সংগঠনের সন্ত্রাস ও হিংসায় যুক্ত থাকায় সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই সরকার বিশ্বাস করে যে বাংলাদেশ এই দলটি কোনও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত নয়। সেজন্য দলটির নিষিদ্ধ ঘোষণা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি বাতিল করা হল।'
[আরও পড়ুন: বাংলাদেশে পুরোদমে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু আদানির, হাসিনার প্রস্থানে ধাক্কা খাবে ব্যবসা?]
দুদিন আগেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন জামাত নিযুক্ত আইনজীবী মহম্মদ শিশির মনির। তিনি বলেছিলেন, "সন্ত্রাস দমনের যে আইনে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, সে আইনেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার সুযোগ আছে।" সেই ব্যাখ্যা তিনি স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়কে দিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইউনুসের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি, জামাতের মতো রাজনৈতিক দল। উপস্থিত ছিলেন জামাতের আমির শফিকুর রহমান ও দলের অন্যান্য সদস্যারা। বৈঠকে শফিকুর সাফ জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে নেওয়ার জন্য হঠাৎ করে জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেওয়া হল। মানুষ এটা গ্রহণ করেনি। কেউ আমাদের নিষিদ্ধ করে দিল বলেই আমরা নিষিদ্ধ হয়ে গেলাম? এটা আমরা মনে করি না।” ফলে এখন প্রশ্ন, ফের কী স্বমহিমায় ফিরবে জামাত?
বলে রাখা ভালো, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন শেখ হাসিনা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, "জামাত শিবির আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে ধ্বংসের চেষ্টা করবে। বাংলাদেশের মাটিতে জঙ্গিদের ঠাঁই হবে না। আমি দেশবাসীকে সজাগ থাকতে বলব। এদের জঙ্গি সংগঠন হিসেবে মোকাবিলা করতে হবে।” বিশ্লেষকদের মতে, রাজনীতির ময়দানে এখন আওয়ামি লিগের জোর না থাকায় প্রভাব বিস্তার করতে চাইবে জামাত। জনমত গড়ে তুলতে তারা কাজে লাগাতে পারে বাংলাদেশের মানুষদের ভারতবিরোধীতার আবেগকেও।