নিজস্ব সংবাদদাতা, ঢাকা: স্কুলপাঠ্যে ইতিহাস, সাহিত্য বদলাচ্ছে 'নতুন' বাংলাদেশে। নতুন বছরে মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকারের সৌজন্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পড়ুয়ারা দেশের মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতার ব্যাপারে নতুন তথ্য পড়বে পাঠ্যবইয়ে। পাঠ্যপুস্তকের বেশ কিছু অংশ বাদ দিয়ে নতুন বইয়ে নতুন তথ্য যোগ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পড়শি দেশের প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যম ‘প্রথম আলো’।
গত জুলাইয়ের গণ অভ্যুত্থানের জেরে শেখ হাসিনাকে ৫ আগস্ট ক্ষমতার পাশাপাশি দেশও ছাড়তে হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন, তার পরবর্তী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ধাক্কায় ক্ষমতাচ্যুত হন মুজিবকন্যা। ইউনুস জমানায় বাংলাদেশের অতীত মুছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সত্তরে যে শেখ মুজিবর রহমানের আওয়ামি লিগের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পথে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ, তাঁর মূর্তি ভাঙা হয়েছে। এবার নতুন পাঠ্যবইয়ে দেশের স্বাধীনতার ঘোষণাকারী হিসাবেও তাঁর নাম বাদ পড়ছে।
এতদিন পাঠ্যপুস্তকে লেখা হয়েছে, ১৯৭১-এর ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন মুজিবুর। বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সূত্র উদ্ধৃত করে ‘প্রথম আলো’ জানিয়েছে, পঞ্চম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বিষয়ের নতুন বইয়ে ‘পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা’ শিরোনামে লেখায় লেখা হচ্ছে, ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। পরে ২৭ মার্চ আবার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন মুজিবুর। পাঠ্যবইয়ে আরও বলা হয়েছে স্বাধীনতার ঘোষণা সংক্রান্ত মুজিবুরের বার্তাও জিয়াউর রহমান ২৭ মার্চ দেশবাসীকে জানিয়েছিলেন।
এই বিষয়ের চতুর্থ শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বিষয়ের নতুন পাঠ্যবইয়ে একই বদল করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই বইয়ে ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক লেখায় মুজিবুরের ৭ মার্চের বক্তৃতার পাশাপাশি জায়গা পেয়েছে মেজর জিয়াউর রহমানের ছবি। পঞ্চম শ্রেণির এই বিষয়ের পাঠ্যবইয়ে ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’ শিরোনামে অধ্যায়ে মুজিবুর এবং অন্য চার নেতা ছাড়াও রয়েছে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানির ছবি। আগের পাঠ্যবইয়ে ওই অংশে মুজিবুর এবং অন্য চার নেতার ছবি ছিল। নতুন সংস্করণে ওই অংশে প্রথমে রয়েছে ভাসানির ছবি। তার পাশে রয়েছে মুজিবের ছবি। বাকি চার নেতার ছবিও রয়েছে তার সঙ্গে। বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষাক্রম এবং পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সূত্রে এ কথা জানা গিয়েছে।
পাঠ্যবইয়ের এই পরিবর্তন নিয়ে সে দেশের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম রিয়াজুল হাসান ‘প্রথম আলো’-কে বলেন, “জুলাই বিপ্লবের পর বিপ্লবের গ্রাফিতি-সহ বিষয়গুলোকে স্থান দেওয়ার গণদাবি তোলা হয়েছিল। এবার ইতিহাসের বইয়ে না দিয়ে বাংলা-ইংরেজি বইয়ে জুলাই বিপ্লবের বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। আর মুক্তিযুদ্ধে অন্য নায়কদের আগে অবহেলা করা হয়েছে। এ বার তাঁদেরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অতিবন্দনা পরিহার করা হয়েছে। পাঠ্যবইকে রাজনৈতিক দলের প্রচারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা বন্ধ করা হয়েছে।”
পাশাপাশি পঞ্চম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবইয়ে রাখা হয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ। ‘প্রথম আলো’ জানিয়েছে, ওই বইয়ে ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ শীর্ষক প্রবন্ধে আবু সাঈদ এবং মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের ছবি-সহ গণঅভ্যুত্থানে প্রয়াতদের স্মরণে লেখা সংযোজিত হয়েছে। ওই আন্দোলনের সময়ে পুলিশের রবার বুলেটে মৃত্যু হয় নিরস্ত্র আবুর। মুগ্ধও ছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী। বাংলাদেশে হাসিনা-বিরোধী আন্দোলনের সময়ে আন্দোলনকারীদের কাছে জলের বোতল বিলি করতেন মুগ্ধ। আন্দোলনের সময়ে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় তাঁরও।