সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়ার পর কি আরও এক মহিলার উত্থান হতে চলেছে? তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমানের সাম্প্রতিক কিছু কার্যকলাপ নজরে রেখে এই প্রশ্নই এখন জোরালো হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে।
১৭ বছরের স্বেচ্ছানির্বাসন কাটিয়ে সদ্যই দেশে ফিরেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক। সে দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নজরে রেখে, ভোটের মুখে 'ডার্ক প্রিন্স'-এর এই প্রত্যাবর্তনে উজ্জীবিত বিএনপি। কিন্তু তারেক একা ফেরেননি। ফিরেছেন কন্যা জাইমা এবং স্ত্রী জুবায়দা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে। তখন থেকেই নজরে জাইমার গতিবিধি। লন্ডন থেকে তারেকের ফেরার সময় বাবা-মেয়ের একসঙ্গে ছবি তোলা, দেশে ফেরার পরেও বাবার সঙ্গে থাকা এবং বিএনপি বৈঠকে জাইমার অংশগ্রহণ দেখেই তাঁর রাজনীতিতে যোগদানের জল্পনা তৈরি হয়। সেই জল্পনাই আরও জলবাতাস পেল জাইমার সাম্প্রতিক ফেসবুক পোস্টে।
সমাজমাধ্যমে তারেককন্যা নিজেই রাজনীতিতে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন। লিখেছেন, "আমি কখনওই নিজের শিকড় ভুলিনি। বাংলাদেশকে নতুন করে গড়তে আমিও বড় ভূমিকা পালন করতে চাই।" জাইমার এই মন্তব্যেই অনেকে মনে করছেন, শীঘ্রই তিনি রাজনীতিতে নামতে পারেন। শুধু নামবেনই না, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে তাঁরও বড় ভূমিকা থাকবে। খালেদার মতোই মাঠেঘাটে নেমে রাজনীতি করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারেককন্যা। ঘটনাচক্রে, শনিবার বাবা তারেকের মতো তিনিও নির্বাচন কমিশনে গিয়ে বাংলাদেশের ভোটার হয়েছেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মত, গত প্রায় তিন দশক ধরে বাংলাদেশের রাজনীতির চালিকাশক্তি মহিলারাই। সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়াকে ঘিরে সে দেশের রাজনীতি আবর্তিত ছিল এতদিন। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে জাইমার উত্থান ঘটলে, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। এর আগে হাসিনার আমলে বিএনপি যখন কোণঠাসা, খালেদা জেলবন্দি এবং তারেকও দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ, তখন জুবায়দার রাজনীতিতে নামা নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত সে রকম কিছু ঘটেনি। তারেকই লন্ডন থেকে দল পরিচালনা করেছেন। কিন্তু জাইমার ক্ষেত্রে তেমনটা না হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ এখন বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিএনপি-র অনুকূলে।
তবে খুব শিগগিরই যে জাইমা শীর্ষ পদে পৌঁছে যাবেন, তা প্রায় কেউই মনে করছেন না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত, তারেক দেশে প্রত্যাবর্তনের পর তাঁকে ঘিরে বাংলাদেশে যে উন্মাদনা দেখা গিয়েছে সাধারণ জনতার মধ্যে, তারেকও তাঁর ভাষণে 'আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান' বলে যে বিশ্বাস তৈরি করেছেন, আপাতত সেটাকেই ভোটের ময়দানে কাজে লাগাতে চায় বিএনপি।
আবার পাল্টা অভিমতও রয়েছে। অনেকের মত, বর্তমানে বাংলাদেশে যা পরিস্থিতিতে, তাতে সেখানকার সাধারণ মানুষ একেবারে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কাউকেই মসনদে দেখতে চাইছেন। এ দিকে, তারেকের বিরুদ্ধে অতীতে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। যদিও সেই সমস্ত মামলা থেকেই তিনি এখন মুক্ত। তা সত্ত্বেও ভোট যত এগোবে, তত তারেকের রাজনৈতিক জীবন নিয়ে কাঁটাছেড়া শুরু হবে। জামাত বা এনসিপি-র মতো বিরোধীরা তারেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগকেই হাতিয়ার করতে পারে। সে দিক দিয়ে জাইমা একেবারে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির। তিনি পেশায় একজন ব্যারিস্টারও। ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
জাইমা নিজের ফেসবুক পোস্টে খালেদার কথাও লিখেছেন। খালেদাকে ছোট থেকে 'দাদু' বলেই সম্বোধন করেন তিনি। খালেদা যে সময়ে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সেই সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে দেখা যেত ছোট্ট জাইমাকে। সমাজমাধ্যমের পোস্টে ওই সময়ের কথাই লিখেছেন তারেককন্যা। তার পর পদ্মা-মেঘনা দিয়ে রাজনীতির জল অনেক দূর গড়িয়ে গিয়েছে। ফের বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাইমার নাম ভেসে ওঠে হাসিনা-আমলে ২০২১ সালে। আওয়ামি লিগের নেতা তথা তৎকালীন মন্ত্রী মুরাদ হাসান জাইমা সম্পর্কে কিছু আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন। পরে পদত্যাগ করতে হয় হাসানকে। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছিল সেই সময়ে। জুলাই আন্দোলনের সময়েও সমাজমাধ্যমে নিজের মতামত ব্যক্ত করতেন জাইমা। সম্প্রতি ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের 'ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট'-এও অংশ নিতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
বিএনপি-র দলীয় কর্মসূচিতেও সাম্প্রতিক কালে সক্রিয় ছিলেন জাইমা। গত ২৩ নভেম্বর দলের একটি বৈঠকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ইউরোপীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে প্রবাসী ভোটারদের একটি বৈঠকেও। সেই সময় দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তৃতাও করেছিলেন জাইমা। অর্থাৎ, রাজনীতির ময়দানে সরাসরি এখনও হাতেখড়ি না হলেও, রাজনীতির অঙ্গনে আগেই চলে এসেছিলেন তারেককন্যা। ফলে কোনও জল্পনাই অমূলক নয়। কবে মেয়ে সরাসরি রাজনীতিতে নামবেন, একটি সাক্ষাৎকারে সেই প্রশ্নও করা হয়েছিল তারেককে। কৌশলী জবাবে তিনি বলেছিলেন, "সময় এবং পরিস্থিতিই বলে দেবে সেটা।" এখন সে দিকেই তাকিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহল।
