সুকুমার সরকার, ঢাকা: মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১১ লক্ষ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ (Bangladesh)। করোনা আবহে প্রবল অর্থনৈতিক চাপের মুখেও উদ্বাস্তুদের ভরণপোষণ দিচ্ছে হাসিনা সরকার। এহেন পরিস্থিতিতে আর্থিক সাহায্যের বদলে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের নাগরিকের মর্যাদা দেওয়ার শর্ত আরোপ করেছিল বিশ্ব ব্যাংক। কিন্তু ঢাকার প্রবল আপত্তির মুখে নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসে এবার সাফাই দিল আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।
[আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা-সহ বাংলাদেশে বানে মৃত অন্তত ২২, কক্সবাজারে জলবন্দি লক্ষাধিক মানুষ]
বিতর্কের মুখে এবার বিশ্ব ব্যাংক সাফাই দিয়েছে যে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে বাংলাদেশকে সুনির্দিষ্টভাবে কোনও সুপারিশ তারা করেনি। মায়ানমার থেকে প্রাণের ভয়ে পালিয়ে আসা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর জন্য বাংলাদেশকে আর্থিক সহায়তায় প্রদান করছে বিশ্ব ব্যাংক। আর শরণার্থীদের ভবিষ্যত নিয়ে যে পর্যালোচনা, সেটি রাষ্ট্রসংঘের শরণার্থী সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে হয়েছে। মঙ্গলবার তাদের ওয়েবসাইটে প্রচারিত এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে বিশ্ব ব্যংক। বিবৃতিতে বিশ্ব ব্যাংক আরও জানিয়েছে, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ও নিরাপদে মায়ানমারে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ওপর রোহিঙ্গাদের নেতিবাচক প্রভাব কমাতেও বিশ্ব ব্যাংক সহায়তা করছে। বলে রাখা ভাল, সোমবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিদেশমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, “রোহিঙ্গারা শরণার্থী নয়। সে কারণে শরণার্থীদের ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিশ্ব ব্যাংক যে রূপরেখা দিয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে, সেটা বাংলাদেশের জন্য নয়, ১৬টি দেশের জন্য প্রযোজ্য। যেসব দেশে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, সেখানে যাতে আত্মীকরণ করা যায়, যাতে শরণার্থী ও স্থানীয় লোকজনের মধ্যে বিবাদ কমে, শরণার্থীদের সুন্দর ভবিষ্যৎ দেওয়া যায়, সে জন্য বিশ্ব ব্যাংক এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।”
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদের জন্য সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করছে বাংলাদেশ। অন্যান্য অনেক দেশ শরণার্থীদের দেখভালের জন্য রাষ্ট্রসংঘকে অর্থ প্রদান করে। এই অর্থ প্রদানের পরিমাণ দিনদিন কমে আসছে এবং এর ফলে বাড়তি বোঝা বাংলাদেশের ওপর চাপানোর একটি চেষ্টা আছে বিদেশিদের বলে অভিযোগ। এই বিষয়ে আরেকজন আধিকারিক বলেন, “বিদেশি অর্থদাতারা চাইছে রোহিঙ্গাদের উপার্জনের ব্যবস্থা, যাতে তারা নিজেদের খরচ নিজেরাই মেটাতে পারে। এছাড়া তাদের জন্য শিক্ষা, দক্ষতা বৃদ্ধি, অবাধ চলাচলের বিষয়েও তারা জোর দিচ্ছে। এজন্য রোহিঙ্গাদের পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন-সহ অন্যান্য বিষয়গুলো চালু করার প্রস্তাব করছে তারা।” এই বিষয়ে বাংলাদেশের বিদেশ সচিব মাসুদ বিন মোমেন আগেই জানিয়েছিলেন, বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণের জন্য এইসব শর্ত মেনে নিলে দেশের দীর্ঘমেয়াদি যে লক্ষ্য আছে তার সঙ্গে সংঘাত হতে পারে। এজন্য খুব সতর্ক থাকতে হবে। সহজ কথায়, বাংলাদেশ এই প্রস্তাব মানবে না বলেই জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।