স্টাফ রিপোর্টার, বারাসত: একদিন আগেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থেকেছেন কোটি কোটি ভারতীয় নাগরিক। সংবাদমাধ্যমে, সোশ্যাল মিডিয়ায় বা খালি চোখে প্রায় সকলেই প্রত্যক্ষ করেছেন চন্দ্রযান-৩ উৎক্ষেপণের দৃশ্য। তা নিয়ে ইসরোর বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি গর্বের অন্ত নেই আপামর ভারতবাসীর। আর, তার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন এক বঙ্গসন্তান, একথা জানার পর থেকেই আনন্দ যেন দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মছলন্দপুরের নকপুল গ্রামের ছেলে নীলাদ্রি মৈত্র চন্দ্রযান-৩-তে ইসরোর টিমের অন্যতম সৈনিক ছিলেন। শুক্রবার চাঁদের দক্ষিণ মেরুর উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছে চন্দ্রযান-৩। তারপর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভেচ্ছাবার্তায় ভেসে যাচ্ছেন নীলাদ্রি।
অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র নীলাদ্রির স্কুল জীবন শুরু বাংলা মিডিয়াম থেকেই। তিনি মাধ্যমিক পাস করেছেন মছলন্দপুরের নকপুল স্বামীজি সেবা সংঘ থেকে। এরপর মছলন্দপুরের রাজবল্লভপুর হাইস্কুলে ২০১০ সালে উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হন নীলাদ্রি। একই বছর জয়েন্ট পরীক্ষা দিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন খড়গপুর এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। একইসঙ্গে ইসরোতেও পরীক্ষা দিয়ে বিজ্ঞানী হওয়ার সুযোগ পান। নাসাতেও সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু দেশের হয়ে কিছু করতে হবে, এই ভাবনা থেকে ইসরোতেই ৫ বছরের প্রশিক্ষণ শেষ করে চাকরিতে যোগ দেন তিনি। এখন কর্মসূত্রে বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে কেরলের তিরুবনন্তপুরমে থাকেন।
[আরও পড়ুন: চন্দ্রযান-৩ সফল উৎক্ষেপণে শামিল বাংলার বিজ্ঞানী! আনন্দে ভাসছে বীরভূমের কৃষক পরিবার]
পরিবার এবং পরিচিত সূত্রে জানা গিয়েছে, চন্দ্রযান তৈরি থেকে উৎক্ষেপণে ইসরোর টিমের অন্যতম সৈনিক ছিলেন নীলাদ্রি। মূলত তিনি টেকনিক্যাল বিষয় দেখতেন। এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শেষ কয়েক বছর মছলন্দপুরের বাড়িতেও আসতে পারেননি তিনি। তাঁর অংশীদারিত্বে শুক্রবার চন্দ্রযান-৩ সফল উৎক্ষেপণের পর গর্বিত গ্রামবাসী থেকে আত্মীয়, পরিচিত সকলে। আবেগাপ্লুত নীলাদ্রির মা কৃষ্ণা মৈত্র বলেন, ‘‘ছোট থেকেই ওর মহাকাশ বিজ্ঞানী হওয়ার ইচ্ছা ছিল। চন্দ্রযান ৩-এর বডি, ক্যামেরা-সহ টেকনিক্যাল দিকের দায়িত্বে ছিল ছেলে। অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে ছেলে এখন কেরলে ফিরেছে।’’
বাবা নির্মল মৈত্র বলেন, ‘‘রাজবল্লভপুর হাইস্কুলের শিক্ষকদের অবদান এক্ষেত্রে অনস্বীকার্য। নকপুল গ্রামের সকলের ভালবাসায় আমার ছেলে আজ এই জায়গায় পৌঁছেছে।’’ নীলাদ্রি কবে গ্রামের বাড়িতে ফিরবেন, এখন সেই অপেক্ষাতেই সকলে।