সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: প্রায় আড়াই মাস পর অবশেষে কাকদ্বীপের ৯৫ জন মৎস্যজীবীকে মুক্তি দিতে চলেছে বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে রিলিজ অর্ডার জারি হয়েছে বলে সূত্রের খবর। আগামী তিনদিনের মধ্যে তাঁরা দেশে ফিরবেন। মৎস্যজীবীদের মুক্তির জন্য পদক্ষেপ নিতে কেন্দ্রকে লাগাতার চাপ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভায় দাঁড়িয়ে সে কথা তিনি নিজেই জানান। তাঁর সেই তৎপরতায় অবশেষে ভারত সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করল। অন্যদিকে, ভারতে আটকে পড়া ৯০ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকেও মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দুদেশের মধ্যে বন্দি বিনিময় চুক্তি অনুসারে এই সিদ্ধান্ত।
ঘটনা গত অক্টোবরের। মাছ ধরতে ধরতে বাংলাদেশের জলসীমা ছুঁয়ে ফেলেছিল কাকদ্বীপের ৬টি মাছ ধরার ট্রলার। তাতে ছিলেন মোট ৯৬ জন মৎস্যজীবী। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হাতে ধরা পড়ার পর এক মৎস্যজীবী জলে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। বাকি ৯৫ জনকে বাংলাদেশের নৌবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। মামলা হয় তাঁদের বিরুদ্ধে। সেই থেকে সেখানকার জেলে বন্দি ছিলেন কাকদ্বীপের মৎস্যজীবীরা। পরিবার আতান্তরে পড়ে।
গত মাসেই তাঁদের ফেরানোর জন্য কেন্দ্রের উপর চাপ বাড়াতে তৎপর হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নভেম্বরে বিধানসভা অধিবেশনে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, বিষয়টি এখন দুদেশের। তাই মৎস্যজীবীদের ফেরাতে উদ্যোগ নিতে হবে কেন্দ্রকেই। আইনজীবী নিয়োগের কথাও বলেছিলেন। কেন্দ্রের কাছে বারবার আবেদনও জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। দিন কয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে ফোন করে সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী মণ্টুরাম পাখিরাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর মাধ্যমে পরিবারগুলিকে আশ্বস্ত করেন। তাঁর সেই উদ্যোগ এবার সার্থক হতে চলেছে। ৯৫ জন মৎস্যজীবীর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করে তাঁদের ফিরিয়ে দিতে রাজি ইউনুস সরকার। এদিকে, এখানে আটকে থাকা ৯০ জনকেও ফেরাবে ভারত।
এ বিষয়ে কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী সংগঠন সূত্রে জানানো হয়েছে, শনিবার তাঁদের মুক্তির অর্ডার জারি করা হয়েছে। দু-তিনদিনের মধ্যে তাঁরা ফিরে আসবেন। এই খবরে অত্যন্ত খুশি পরিবারগুলি। বাংলাদেশের যেসব মৎস্যজীবীরা এদেশে আটকে পড়েছেন, তাঁরা তো জলে ডুবে বিপদে পড়েছিলেন, এখানকার জেলেরা তাঁদের উদ্ধার করেছেন। কিন্তু এদিকের মৎস্যজীবীদের তো বাংলাদেশের নৌবাহিনী ধরে নিয়ে গিয়েছিল। মামলাও দায়ের হয়। তাই হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় এতটা দেরি হচ্ছে বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের।