সৌরভ মাজি, বর্ধমান: সাত মাসের শিশুকন্যার শ্বাসনালীতে আটকে গিয়েছিল বরবটির টুকরো। প্রাণ সংশয় দেখা দিয়েছিল। স্থানীয় হাসপাতাল অপারগতার কথা জানিয়ে দেয়। শেষ পর্যন্ত বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বিপদমুক্ত করল। চিকিৎসকরা প্রাণ বাঁচালেন ওই দুধের শিশুর। ফের জটিল অস্ত্রোপচারে বড় সাফল্য পেল এই হাসপাতাল। আরও বড় সাফল্য এই যে, ইএনটি বিভাগের চিকিৎসকরা যে পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করে শিশুর শ্বাসনালীর ভিতর থেকে বরবটির টুকরো বের করেছেন, তা সম্পূর্ণ রক্তপাতহীন। রক্ষা পেয়েছে শিশুর জীবন। বর্তমানে সুস্থ রয়েছে শিশুটি৷ তাকে হাসপাতালের শিশুবিভাগের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়েছে।
[টার্গেট মতুয়া ভোট ব্যাংক, নাগরিকত্ব বিল নিয়ে তৃণমূলকে আক্রমণ শাহের]
এর আগে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এধরনের অস্ত্রোপচারে সাফল্যের নজির আছে একাধিক। ইএনটি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক গণেশ গাইন ও ওই বিভাগের চিকিৎসক নওয়াজ রহমান জানান, রাজ্যের একমাত্র বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই ধরনের অস্ত্রোপচার জরুরি ভিত্তিতে করা হয়। অস্ত্রোপচারের পরিকাঠামো রয়েছে এখানে। এর আগেও এই পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করে শ্বাসনালীতে আটকে থাকা আতার বীজ বের করা হয়েছিল। এছাড়া অন্য এক শিশুর শ্বাসনালীতে আটকে থাকা মোবাইল চার্জারের ধাতব টুকরো বের করা হয়েছে এই হাসপাতালেই। গত ১ ডিসেম্বর এক শিশুর শ্বাসনালীতে আটকে থাকা বাদামের টুকরোও বের করা হয়েছিল এই হাসপাতালে।
[মর্মান্তিক! সন্তানকে বাঁচাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু গৃহবধূর]
তবে আগের ঘটনাগুলির তুলনায় এবারে ৭ মাসের শিশুর পরিস্থিতি আরও সংকটজনক ছিল বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। বীরভূমের সাইঁথিয়ার বাসিন্দা জ্যোতিরাজ দিপ। তাঁর স্ত্রী জ্যোৎস্নারানী দিপ। ওই দম্পতির সাত মাসের কন্যাসন্তান জেসিকা দিপ। তাঁদের আদিবাড়ি ওড়িশার সম্বলপুরে। তাঁরা সাঁইথিয়াতেই বর্তমানে থাকেন। জ্যোৎস্নারানী জানান, সোমবার সকাল ১০টা নাগাদ তিনি সবজি কাটছিলেন। সেই সময় তাঁর মেয়ে জেসিকা বরবটির টুকরো গিলে ফেলে। চরম শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে সাঁইথিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখান থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, এই অস্ত্রোপচার করার পরিকাঠামো নেই তাঁদের। শিশুটিকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। শিশুবিভাগে ভরতি করা হয়। প্রাথমিক পরীক্ষার পর শিশুটিকে ইএনটি বিভাগে স্থানান্তরিত করা হয়।
[পথ দুর্ঘটনা ঘিরে রণক্ষেত্র পলাশিপাড়া, পুড়ল পুলিশের গাড়ি]
বিভাগীয় প্রধান গণেশ গায়েন জানান, ‘পরীক্ষায় দেখা যায় শ্বাসনালীর ভিতরে কিছু আটকে রয়েছে। ওই শিশুর শ্বাসপ্রশ্বাস ৪০ শতাংশ কমে গিয়েছিল। খুবই সংকটজনক অবস্থা ছিল তার। ফুসফুসের একাংশ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।’ জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত হয়। চিকিৎসক গণেশ গায়েনের নেতৃত্বে চিকিৎসক দেবব্রত দাস, অনুরাগ প্রধান, নওয়াজ রহমান, মইনান সামন্ত, মৌমিতা দেবকে নিয়ে মেডিক্যাল টিম গড়ে অস্ত্রোপচার করা হয়৷ বরবটির টুকরো বের করা হয়েছে শিশুর শ্বাসনালী থেকে। বর্তমানে শিশুটি সুস্থ রয়েছে।
ছবি: মুকুলেসুর রহমান
The post জটিল অস্ত্রোপচারে ৭ মাসের শিশুর গলা থেকে বেরল আটকে থাকা বরবটি appeared first on Sangbad Pratidin.
