অর্ণব দাস, বারাসত: এ যুগেও পণপ্রথার অভিশাপ! দাবিমতো ৫ লক্ষ টাকা না পেয়ে নববধূকে খুনের মতো গুরুতর অভিযোগ স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে। বারাসতের অশ্বিনীপল্লি এলাকার থানায় এনিয়ে অভিযোগ দায়ের হতেই গ্রেপ্তার হল মৃতার স্বামী সৌম্য দত্ত। দাবিমতো ৫ লক্ষ টাকা না পেয়ে এহেন কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। তদন্তে নেমেছে বারাসত থানার পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতার নাম সুনীতা সরকার, বয়স ২৩স বছর। সম্বন্ধ করে বারাসতের অশ্বিনীপল্লির বাসিন্দা সৌম্যর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় চলতি বছরের ৩ আগস্ট। সৌম্যর পোশাকের ব্যবসা, তাঁর বাবা পুলিশকর্মী। অভিযোগ, বিয়েতে নগদ ছাড়া বাকি সমস্ত জিনিসপত্র দিয়েছিল সুনীতার পরিবার। আর তাই বিয়ের পর থেকে বাপের বাড়ি থেকে ব্যবসার জন্য অতিরিক্ত টাকা নিয়ে আসার জন্য সুনীতার উপর চাপ সৃষ্টি করত স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু টাকাও দিয়েছিলেন সুনীতার বাবা রাজ্য সরকারের কর্মী সর্বেন্দ্রদেব সরকার।
কিন্তু ক্রমেই শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকার দাবি বাড়তে থাকে। তা দিতে অস্বীকার করলে সুনীতার উপর শারীরিক নির্যাতন চালানো শুরু হয় বলেই অভিযোগ শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন পাঁচ-ছয় আগে ব্যবসার জন্য ৫ লক্ষ টাকা দাবি করেন সুনীতার শ্বশুরবাড়ির লোকজন। কিন্তু এত পরিমাণ টাকা একসঙ্গে দিতে না পারার কথা বাপের বাড়ির তরফে জানানো হলে নববধূর উপর অত্যাচার বাড়তে থাকে বলেই অভিযোগ।
এরইমধ্যে গত মঙ্গলবার সৌম্য তাঁর শ্বাশুড়ির থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছিল বলেই জানা গিয়েছে। এর পরেরদিন বুধবার রাতে হঠাৎই সুনীতার শ্বশুর ফোন করে বাপের বাড়ির লোকেদের আসতে বলেন। তাঁরা মেয়ের বাড়িতে গিয়ে দেখেন, সুনীতা বিছানার উপর নিস্তেজ হয়ে শুয়ে আছে। হাতে, পায়ে, নাকে, মুখে আঘাতের চিহ্ন। দ্রুত তাঁকে বারাসতের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপরই মৃতের পরিবারের তরফে বারাসত থানায় অতিরিক্ত পনের দাবিতে মারধর করে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয় মেয়ের স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে। তারপরই গ্রেপ্তার হয় সুনীতার স্বামী সৌম্য।
অভিযুক্ত বাকি দু'জনের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেই জানিয়েছে পুলিশ। মৃতের বাবা সর্বেন্দ্রদেব বলেন, "মেয়েকে চার মাস আগে বিয়ে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম সুখে সংসার করবে। বিয়ের পর থেকেই জামাই শুধু টাকার দাবি করত। কয়েকদিন আগে ব্যবসার জন্য ৫ লক্ষ টাকার দাবিও করেছিল। না দেওয়ায় ওরা অত্যাচার চালিয়ে মেয়েকে খুন করল।"
