অর্ণব দাস, বারাসত: বরাবরই নেশা ট্রেকিংয়ে। এই নেশা থেকেই প্রতিবছরই ট্রেকিংয়ে যেতেন উত্তর ২৪ পরগনার হৃদয়পুরের বাসিন্দা চিন্ময় মণ্ডল। এর আগেও হিমাচল প্রদেশের (Himachal Pradesh) মাউন্ট আলি রত্নি টিব্বায় ট্রেকিং করতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তখন সফল না হওয়ার আগস্ট মাসে আরও পাঁচজন পর্বতারোহীর সঙ্গে ওই দুর্গম শৃঙ্গ জয় করতে বেরিয়ে পড়েন চিন্ময়। সেখানে পৌছেই খারাপ আবহাওয়ার মুখে পড়ে গত ৭ই সেপ্টেম্বর থেকে খোঁজ মিলছে না বারাসতের যুবকের। তাঁর সঙ্গে নিখোঁজ কলকাতার বাসিন্দা অভিজিৎ বণিক, দিবস দাস এবং বিনয় দাসও।
শুক্রবার যুবকের নিখোঁজের খবর হওয়ার খবর হৃদয়পুরের (Hridaypur)বাড়িতে পৌঁছতে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। ছেলের দুশ্চিন্তায় সারারাত দু’চোখের পাতায় করতে পারেনি চিন্ময়ের মা। ইতিমধ্যেই নিখোঁজ এই পর্বতআরোহীদের পরিবারের পক্ষ থেকে রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের (Aroop Biswas) সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
[আরও পডুন: টালার পর ধনধান্যের পালা, নভেম্বরেই খুলতে পারে বিশ্বমানের অডিটোরিয়াম, কী কী থাকছে?]
স্থানীয় এবং পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বারাসত পুরসভার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের হৃদয়পুরের শান্তিনগর এলাকার বাসিন্দা বছর চল্লিশের চিন্ময় মন্ডল। বাড়িতে বাবা, মা, দিদি, ভাই এবং ভাইয়ের স্ত্রী আছেন। বাড়িতেই একটি ব্যাগের কারখানা আছে চিন্ময়ের। এই ব্যবসার পাশাপাশি বরাবরেরই নেশা ট্রেকিংয়ের যুবকের। এই নেশা থেকেই হিমাচল প্রদেশের ‘মাউন্ট আলি রত্নি টিব্বা’ জয় করতে গত ১৮ই আগস্ট বাড়ি থেকে রওনা দেন চিন্ময়। সঙ্গে ছিল আরও পাঁচ জন।
হিমাচল প্রদেশের মানালি হয়ে গত ২২ আগস্ট তারা পৌছান জারিতে। পরের দিন হাঁটা শুরু করে ২৫ আগস্ট ৩৬০০ মিটার উচ্চতার বেসক্যাম্পে পৌঁছান তারা। গত ৭ই সেপ্টেম্বর চিন্ময় সহ মোট চারজন মাউন্ট আলি রত্নি টিব্বা অভিযানে রওনা দেন। অসুস্থতার কারণে বাকি দুজন সেরপার সঙ্গে বেসক্যাম্পেই ছিল। কিন্তু ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেল চার পর্বতারোহী বেসক্যাম্পে না ফেরায় দুশ্চিন্তায় পড়েন বাকি দুজন। এরপরই সেরপা নিচে নেমে স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি জানায়। চিন্ময়ের নিখোঁজ হওয়ার খবর শুক্রবার তার হৃদয়পুরের বাড়িতে জানানো হলে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছে পরিবারের সদস্যরা।
[আরও পডুন: টিটাগড় গণধর্ষণ: পালানোর ছক বানচাল, গ্রেপ্তার TMC কাউন্সিলরের ভাই]
শনিবার সকাল থেকেই পাড়ার ছেলের খোঁজ নিতে বাড়িতে ভিড় করছে স্থানীয়রা। প্রতিনিয়ত আত্মীয়-স্বজনরাও খোঁজ নিয়ে চলেছেন চিন্ময়ের। আর ছেলের ছবি হাতে নিয়ে অঝরে কেঁদে চলেছেন মা। এদিন চিন্ময়ের মা প্রমীলা মণ্ডল বলেন, “ছেলের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না জানার পর থেকেই খুবই দুশ্চিন্তায় রয়েছি। রাতে দু চোখের পাতা এক করতে পারেনি। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ চারজনকেই সুস্থ্য অবস্থায় দ্রুত ফিরিয়ে আবার ব্যবস্থা করা হোক।” নিখোঁজ যুবকের ভাই হিরন্ময় মন্ডল বলেন, “এর আগেও দাদা মাউন্ট আলি রত্নি টিব্বা জয় করতে গিয়েছিল। কিন্তু সেবার আবহাওয়া খারাপের জন্য সামিট না করেই ফিরে আসতে হয়েছিল। তাই আবারও ওই শৃঙ্গ জয় করতে গিয়েছিল। শুনেছি উদ্ধার কাজের জন্য ২২ জনের একটি দল রওনা দিয়েছে।”