shono
Advertisement
Durga Puja 2025

লুকিয়ে অঞ্জলি দিতে আসতেন বিপ্লবীরা! আজও যমশেরপুর জমিদার বাড়িতে পুজো হয় ঐতিহ্য মেনে

'কাজলা দিদি'র কবির বাড়িতে কবে থেকে শুরু হয় পুজো?
Published By: Kousik SinhaPosted: 05:03 PM Sep 15, 2025Updated: 05:04 PM Sep 15, 2025

রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: কালের স্রোতে ফুরিয়েছে রাজপাট, হারিয়েছে জৌলুস, স্মৃতির দেওয়াল থেকে খসে পড়ছে বাগচী বাড়ির ইটের চাঙর! তবুও নদিয়ার দুর্গাপুজো বলতে এখনও যতীন্দ্রমোহন বাগচীর স্মৃতি বিজড়িত যমশেরপুর বাগচী বাড়ির দুর্গাপুজো সকলের কাছেই সমাদৃত। ৩৫৬ বছরের পুজোর বিশেষত্ব দশমীতে কচু শাক-ইলিশ ভোগের মধ্য দিয়ে ঘটে পুজোর সমাপ্তি।

Advertisement

"বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই, মাগো আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই" খ্যাত কবি ঔপন্যাসিক যতীন্দ্রমোহন বাগচীর স্মৃতিবিজড়িত যমশেরপুর জমিদার বাড়ি। চাঁদ আজও নিয়ম করে উকি দেয়, কিন্তু ধ্বংসের স্মৃতিচিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই রাজবাড়ি। জমিদারি না থাকলেও পুরাতন সাবেকিয়ানায় রীতি মেনে আজও দুর্গাপুজো হয়ে আসছে নদিয়া জেলার ঐতিহাসিক বাগচী বাড়িতে। বাগচীদের আদি নিবাস ছিল অবিভক্ত বঙ্গ দেশের রাজশাহী জেলায়, পরবর্তীতে তাঁরা নদিয়ার যমশেরপুর এসে বসতি স্থাপন করে।

স্থানীয় গোয়ালা সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে সখ্যতা এতদঞ্চলের তাদের জমিদারী স্থাপনে উৎসাহ যোগায়। মূলত গোয়ালাদের উদ্যোগে বাগচী জমিদারদের আর্থিক সহায়তায় এলাকায় প্রথম দুর্গাপূজার সূচনা হয়। ১৭১১ সালে বাগচী বাড়ির আদিপুরুষ সৃষ্টিধর বাগচীর উদ্যোগ প্রথমবার দুর্গাপুজো হয়। এরপর পুজোয় কোনওদিন ছেদ পড়েনি! একটা সময় বহু গুণী ব্যক্তির আগমন ঘটেছিল বাগচীদের জমিদার বাড়িতে। এমনকী নজরুল, বাঘাযতীনের মতো ব্যক্তিত্বের পদচিহ্ন পড়েছে। ফলে জমিদার বাড়ির ছত্রে ছত্রে লুকিয়ে আছে অনেক অজানা কাহিনি।

এমনকী স্বাধীনতা সংগ্রামের নানা ইতিহাস লুকিয়ে এই বাড়ির আনাচে কানাচে। পুজো দেখতে আসা লোকজনের কাছে বাড়তি আকর্ষণ বাগচীদের বিশাল দুই অট্টালিকা। যদিও বয়সের ভারে এখন জীর্ণ হয়েছে সেগুলি! তবে ভাঙন ধরলেও এখনও যেটুকু আছে, তা দেখার মতো।

বাগচী পরিবারের এক সদস্য জানান, ''যমশেরপুর জমিদার বাড়িতে সাবেকি ঘরানার একচালার দেবীর গায়ের রং হালকা হলুদ। এখানে দুর্গার বাহন সিংহের রং সাদা, অসুর সবুজ, গণেশ গোলাপি ও কার্তিক মায়ের মতো হালকা হলুদ রঙের। ডাকের সাজে সজ্জিত মাতৃপ্রতিমা।'' বাগচী বাড়ির অষ্টম বংশধর শেখরনাথ বাগচী আরও জানান, ''গবেষক মোহিত রায়ের ‘রূপে রূপে দুর্গা’ গ্রন্থটি থেকে পুজো সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানা যায়।''

শেখরনাথ বাগচীর কথায়, ''রীতি মেনে পূর্ণ বৈষ্ণব মতে পূজিতা হন দেবী, চারদিন দেওয়া হয় নিরামিষ ভোগ। পুজো শেষে দশমীর দিন ইলিশ মাছের বিশেষ ভোগে সমাপ্তি হয় পাঁচ দিনের অনুষ্ঠানের।'' তাঁর কথায়, ''সাড়ে তিনশো বছরের প্রাচীন নাটমন্দিরে একচালা ডাকের সাজে পূজিত হন মা দুর্গা। নাটমন্দিরের দু'দিকে অতিথি অভ্যাগতদের জন্য থাকা খাওয়া ও ব্যালকনিতে বসে পুজো দেখার ব্যবস্থা ছিল, পুজোর ক'দিন বসতো নাটক-যাত্রার আসর। কলকাতা থেকে নামি দামী যাত্রাশিল্পীরা আসতেন'' এমনকী স্বাধীনতা আন্দোলনের যুগে বঙ্গদেশের প্রথম সারির বিপ্লবীদের আনাগোনা এই বাড়িতে ছিল বলেও এদিন জানান শেখরবাবু।

এখানেই শেষ নয়! তাঁর কথায়, পুজোর সময় পলাতক বন্দিরা রাতে লুকিয়ে অঞ্জলি দিতে আসতেন। আবার ভোর হওয়ার আগে চলে যেতেন। তিনি আরও জানান, ''আধুনিক যুগেও হারায়নি সাবেকিয়ানা, বড় প্যান্ডেলের বদলে টাঙানো হয় পেল্লায় চাঁদোয়া। স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে বসে যাত্রার আসর। বর্তমান প্রজন্ম কর্মসুত্রে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকলেও পুজোর কটা দিন সবাই একসঙ্গে হুল্লোড়ে ভরিয়ে তোলেন জমিদার বাড়ি। পুরনো প্রথা মেনে এখনও প্রতিমার বোধন থেকে বিসর্জন সবটাই হয় স্থানীয় গোয়ালাদের দিয়ে । চারদিন ধরে অতিথি অভ্যাগতদের জন্য থাকে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা হয়।''

দশমীর দুপুরে স্থানীয় ঘোষ সম্প্রদায়কে পাত পেড়ে আপ্যায়ন করা হয়। বিকেলে তাঁরাই প্রতিমা কাঁধে নিয়ে বিসর্জনের ব্যবস্থা করেন। রীতি মেনে দেবীকে কালীতলার বিলে বিসর্জন দেওয়া হয়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • নদিয়ার দুর্গাপুজো বলতে এখনও যতীন্দ্রমোহন বাগচীর স্মৃতি বিজড়িত যমশেরপুর বাগচী বাড়ির দুর্গাপুজো সকলের কাছেই সমাদৃত।
  • ৩৫৬ বছরের পুজোর বিশেষত্ব দশমীতে কচু শাক-ইলিশ ভোগের মধ্য দিয়ে ঘটে পুজোর সমাপ্তি।
Advertisement