অসিত রজক, বিষ্ণুপুর: চাষের কাজে গিয়েছিলেন জমিতে। দলছুট হাতির হানায় মৃত্যু হল কৃষকের। হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারালেন তিনি। শুক্রবার রাতে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়ার বাঁকাদহ রেঞ্জের গভীর জঙ্গলে। ঘটনায় শোকের ছায়া এলাকায়।
মৃতের নাম রামপদ হেমব্রম। তিনি কুড়চিডাঙা এলাকার বাসিন্দা। পরিবারে রয়েছেন স্ত্রী ও দুই ছেলে। শুক্রবার গভীর রাত বারোটা নাগাদ জমিতে আলু লাগিয়েছিলেন তা দেখতে গিয়েছিলেন। ১টা ৩০ মিনিট নাগাদ বাঁকাদহ রেঞ্জের আমডহরা বিটের বেলশুলিয়া অঞ্চলের আস্থাশোল জঙ্গল এলাকায় হাতির হানায় প্রাণ হারান তিনি।কী করে এই দুর্ঘটনা?
জানা গিয়েছে, ২৩টি হাতির একটি দল বাঁকুড়া সীমানা পেরিয়ে মেদিনীপুরের জঙ্গলে প্রবেশ করছিল। মেদিনীপুর সীমান্ত থেকে মাত্র আধ কিলোমিটার দূরে কিছু হাতি এগিয়ে যায়, পিছনে থেকে যায় ২-৩টি হাতি। সেই সময় চাষের জমিতে ছিলেন রামপদ। আচমকাই পিছন দিক থেকে দৌড়ে আসে একটি হাতি। অন্ধকার জঙ্গলে পালানোর সুযোগ না পেয়ে হাতির পায়ের নিচেই পিষ্ট হন তিনি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। দুর্ঘটনার পর ঘাতক হাতি-সহ ১৫টি হাতি মেদিনীপুরের জঙ্গলে প্রবেশ করে। তবে বাকি ৮টি হাতি মেদিনীপুরে না ঢুকে বাঁকাদহ রেঞ্জের আস্থাশোল জঙ্গলেই ফিরে আসে। গোটা পরিস্থিতির উপর কড়া নজরদারি চালাচ্ছে বনদপ্তর।রামপদ হেমব্রমের স্ত্রী সজনী হেমব্রম বলেন, "জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। রাত বারোটা নাগাদ সেখানে গিয়েছিলেন। তারপর এই ঘটনায় শুনছি। দু'টো ছোট ছোট ছেলে রয়েছে কী করে সংসার চলাব।"
বাঁকাদহ রেঞ্জের বন আধিকারিক সোনিয়া মজুমদার জানান, রামপদ হেমব্রম কেন ওই সময় জঙ্গলে গিয়েছিলেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তিনি হাতি দেখতে গিয়েছিলেন না কি, অন্য কোনও কাজে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে তিনি স্পষ্ট করে জানান, হাতির চলাচলের সময় অতিরিক্ত মানুষের ভিড়ই এই ধরনের দুর্ঘটনার অন্যতম বড় কারণ। আধিকারিকের কথায়, শনিবার রাতে হাতি দেখতে ৪০০ থেকে ৫০০ জন মানুষ ভিড় করেছিলেন। ছবি তোলা, ভিডিও বা রিল বানানোর নেশায় অনেকেই বিপজ্জনকভাবে হাতির খুব কাছে চলে যান। এতে হাতিরা আতঙ্কিত হয়ে তাদের স্বাভাবিক চলার পথ হারিয়ে ফেলে, যার ফলেই এমন দুর্ঘটনা ও চাষের জমিতে ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে। মৃতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বনদপ্তর। সরকারি ক্ষতিপূরণ ও সব সহযোগিতা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।
