রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: এ যেন একেবারে বামন হয়ে চাঁদ ছুঁয়ে ফেলার গল্প! পিছিয়ে পড়া চা বাগান এলাকায় অত্যন্ত কষ্ট করে পড়াশোনার পর একেবারে জাতীয় স্তর থেকে সাফল্যের স্বাদ পেল পাঁচ ছাত্রছাত্রী। সর্বভারতীয় স্তরে ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষা NEET তালিকায় নাম উঠে এল আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) কালচিনির। জেলার চা বাগান অধ্যুষিত এই ব্লক থেকেই এবার ডাক্তারি পড়তে যাচ্ছে ৫ জন। সফলদের মধ্যে চারজনই ছাত্রী।
NEET-এ সফল ছাত্রীরা রীতা লামা, নিধি লামা, অঞ্জনা লাখড়া, সইনম লামা, মণীশ মিঞ্জ। রীতা ভাটপাড়া চা বাগানের বি ডিভিশনের টপ লাইনের বাসিন্দা। নিধি থাকে কালচিনি চা বাগানের বুকিমারি লাইনে। অঞ্জনার বাড়ি উত্তর লতাবাড়ি গ্রামে। সইনম মেচুপাড়া চা বাগানের ৮ নম্বর লাইনের বাসিন্দা। আর মণীশ মিঞ্জের জয়গাঁর ভার্নাবাড়ি চা বাগানে। গত সপ্তাহে সফল পাঁচ ছাত্রছাত্রীকে সংবর্ধনা জানালেন জেলার পুলিশ সুপার (SP) ওয়াই রঘুবংশী ও বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর পারভিন কাশোয়ান। কালচিনি থানার তরফে ওই পাঁচজনকে স্টেথোস্কোপ ও মেডিক্যালের অভিধান (Medical Dictionary) তুলে দেওয়া হয়েছে। যা সবচেয়ে বেশি কাজে লাগবে তাদের।
[আরও পডুন: ‘পালিয়ে যাইনি, ট্রেকিংয়ে ছিলাম’, যাদবপুর কাণ্ডে অন্যতম সন্দেহভাজন অরিত্রর আত্মপ্রকাশ!]
তাদের সংবর্ধনা দেওয়ার পর আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, “জেলার চা বাগান (Tea Garden) অধ্যুষিত এলাকা থেকে পাঁচ ছাত্রছাত্রী ডাক্তারি পড়ার সর্বভারতীয় পরীক্ষায় সফল হয়েছে। এটা অত্যন্ত গর্বের বিষয়। এই পাঁচজন পিছিয়ে পড়া সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। এদের জেদ, অধ্যাবসায়কে কুর্নিশ জানাই। ওদের দেখে আরও অনেকে এগিয়ে আসবে। আমরা ভবিষ্যতেও এই সব ছাত্রছাত্রীদের পাশে থাকব।” রীতা, নিধি, সইনম সকলেই জানাচ্ছেন, এই সাফল্যের নেপথ্যে নিজেদের পরিশ্রম তো আছেই, সেইসঙ্গে জেলা প্রশাসন খুব সাহায্য করেছে।
[আরও পডুন: সীমা হায়দারের পুনরাবৃত্তি? কোলের সন্তান নিয়ে স্বামীর জন্য ভারতে বাংলাদেশি যুবতী]
এই ‘পঞ্চরত্নে’র মধ্যে ভার্নাবাড়ি চা বাগানের মণীশ মিঞ্জ জেলা পুলিশ প্রশাসন পরিচালিত কোচিং সেন্টারে প্রশিক্ষণ নিত। মণীশের মা সরিতা খাড়িয়া ভার্নাবাড়ি চা বাগানের শ্রমিক। বাবা রঘু মিঞ্জ বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কাজের সঙ্গে জড়িত। হাসিমারা কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের এই ছাত্রের দিদি রূপসী মিঞ্জও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে (North Bengal Medical College and Hospital) ডাক্তারি পড়ছে। এবার NEET-তে উত্তীর্ণ হয়ে মণীশ মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছে। মণীশ বলেন, “পিছিয়ে পড়া সমাজকে এগিয়ে নিতে চাইলে আগে নিজেকে বদলাতে হয়। আমরা নিজেকে বদলানোর কাজে লেগেছিলাম। সকলের সহযোগিতায় আমরা এই সফলতা পেয়েছি। ভবিষ্যতে ডাক্তার হয়ে সমাজসেবা করতে চাই। সমাজের গরিব দুস্থ মানুষদের চিকিৎসা করতে চাই। জেলা পুলিশ সুপারের অনুপ্রেরণা আমাকে এই সাফল্য এনে দিয়েছে।”