চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: “জীবন খাতার প্রতি পাতায়, যতই লেখ হিসাব নিকাশ, কিছুই রবে না…” কিন্তু শিল্পাঞ্চলবাসী বলছেন, আলবাত লেখা হয়। মানব জীবনের হিসাবরক্ষকের নাম চিত্রগুপ্ত। আর শিল্পাঞ্চলের চিত্রগুপ্ত হলেন জামুড়িয়ার নণ্ডী গ্রামের দেবশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়। জামুড়িয়াবাসীর জন্ম, মৃত্যু, বিবাহের হিসেবনিকেশ বন্দি রয়েছে তাঁর ডায়েরিতে (Diary)। প্রাক্তন খনিকর্মীর বয়স যখন কুড়ি-বাইশ বছর তখন থেকেই তিনি এই ডায়েরি বন্দি করছেন স্থানীয় ও বিশেষ মানুষের জন্ম ও মৃত্যুর হিসেবের তথ্য।
দেবশংকরবাবু বলেন, “১৯৫৬ সাল থেকে শুরু হয় ডায়েরি লেখার কাজ। যখন যা তথ্য পেতাম ডায়েরিতে লিখে রাখতাম। পরে আলাদা করে চিত্রগুপ্তের খাতা বানাই। সেখানেই সমস্ত খতিয়ান তুলে রাখি।” প্রথমদিকে এসবের গুরুত্ব না থাকলেও বর্তমানে কদর বেড়েছে। আর্কাইভে থাকা জন্ম, মৃত্যুর খোঁজখবর নিতে আসেন স্থানীয়রাও। এমনকি সরকারের দরকারেও কাজে লাগে চিত্রগুপ্তের খাতা। তবে শুধুমাত্র জন্ম, মৃত্যুর বিয়ের নথি নয়। সাম্প্রতিক ঘটনার আর্কাইভ থেকে স্থানীয় ঘটনার নিউজ পেপার ক্লিপিংসের স্ক্র্যাপবুকও রয়েছে সংগ্রহে। ইন্দিরা গান্ধীর প্রধানমন্ত্রী হিসেব শপথ থেকে জ্যোতি বসুর মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ। কয়লাক্ষেত্রকে রাষ্ট্রীয়করণের ঘটনা এমনকি জামুড়িয়ার (Jamuria) সাম্প্রতিকতম ধসের ঘটনাও রয়েছে তাঁর নিউজ পেপার ক্লিপিংসের স্ক্র্যাপবুকে।
[আরও পড়ুন: রাজ্যে দৈনিক আক্রান্তের তুলনায় সুস্থতার হার অনেক বেশি, চিন্তা বাড়াচ্ছে কলকাতার কোভিড গ্রাফ]
তাঁর এই নেশার সঙ্গে মিল পাওয়া যায় সত্যজিৎ রায়ের অমর সৃষ্টি সিধু জ্যাঠার। দেবশংকরবাবুর ছেলে রাসবিহারী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাবা নিজেই সমস্ত নথি সংগ্রহ করে রাখেন। তাঁর এই কীর্তি দেখতে বাইরে থেকে লোকজনও আসেন। তবে এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা ওনাকে ‘গুগল দাদু’ বলেও সম্বোধন করেন।” দেবশংকরবাবুর স্ত্রী সন্ধ্যা দেবী বলেন, “স্বামীর এই নেশায় আমি কোন সাহায্য করতে পারি না। তবে বাইরের লোকজন যখন তাঁর প্রশংসা করেন তখন ভালই লাগে।” সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্টি সিধু জ্যাঠা ছিলেন একেবারেই ফটোগ্রাফিক মেমোরি। তবে গুগলবাবার সময়ে সিধু জ্যাঠা কতটা প্রাসঙ্গিক এই প্রসঙ্গ উঠলেও জামুড়িয়ার সিধু জ্যাঠা অর্থ্যাৎ দেবশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু বেফিকির। এসব নিয়ে তাঁর কোনও ভাবনা নেই। ৮৭ বছর বয়সেও স্থানীয় তথ্য সমৃদ্ধ ডায়েরি লেখার কাজ তাঁর চলছেই।