shono
Advertisement

Breaking News

Raiganj

মাদকাসক্ত স্বামীরা 'অকর্মণ্য', রোজগেরে হয়ে সংসার চালান জয়িতা-নীতারা, নারী দিবসে প্রকাশ্যে লড়াইয়ের কাহিনি

আন্তর্জাতিক নারী দিবস নিয়ে তেমন কোনও মাথাব্যথা নেই তাঁদের।
Published By: Suhrid DasPosted: 07:48 PM Mar 08, 2025Updated: 07:48 PM Mar 08, 2025

শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: তীব্র মাদকাসক্ত স্বামীকে নেশামুক্তি কেন্দ্রে ভর্তি করতে বাধ্য হয়েছিলেন নিরুপায় স্ত্রী। বাড়িতে দুই সন্তান। তাদের পড়াশোনার খরচ, উপরন্তু স্বামীর চিকিৎসার দায়িত্ব। এই অসহনীয় আবহে সংসারের হাল ধরলেন নিজেই। সংসারের জোয়াল টানতে চা বিক্রি শুরু করলেন জয়িতা দাস। দিন আনা দিন খাওয়ার সংসারে একদিন উপার্জন না হলেই বাড়ে দুশ্চিন্তা। তবুও স্বপ্ন দেখেন জয়িতা। একদিন বড় ব্যবসায়ী হবেন তিনি। আন্তর্জাতিক নারী দিবস নিয়ে তাঁর তেমন কোনও মাথাব্যথা নেই।

Advertisement

নারী দিবসের দুপুরে ফুটপাতে চা বিক্রি করার ফাঁকে বছর ৩৫-এর জয়িতাদেবী বলেন, "স্বামীর চিকিৎসার খরচ, তারপর ছেলেমেয়ের পড়াশোনা খরচ। কীভাবে কী হবে, জানি না।" উত্তর দিনাজপুরের কর্ণজোড়া জেলাপ্রশাসন ক্যাম্পাসের রাস্তার ধারে তিনি চায়ের দোকান দিয়েছেন। মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে আর ছেলে কর্ণজোড়া হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। স্বামীকে সুস্থ করা ও সন্তানদের পড়াশোনার দায়িত্ব পালনে মরিয়া তিনি।

অন্যদিকে, জীবনে প্রতিদিন লড়াই করছেন রায়গঞ্জের চল্লিশোর্ধ নীতা শীল। স্বামী দীর্ঘ পাঁচমাস ধরে অসুস্থ হয়ে ভর্তি আছেন। তিন মেয়ে আর এক ছেলের মুখে নিত্যদিন খাবার তুলে দিতে হবে। এদিকে একটা দিনও বিনা উপার্জনে চলা সম্ভব নয়। প্রতিকূল জীবনে শেষপর্যন্ত তিনি হোটেলে রান্নার কাজ শুরু করেছেন। দিনরাত এখন একটাই লক্ষ্য, স্বামীকে সুস্থ করা, ছেলেমেয়েকে বড় করা। তবে সুপ্ত ইচ্ছাও তৈরি হয়েছে। জীবন সঠিক গতিতে প্রবাহিত হলে হোটেল করার স্বপ্নও রয়েছে তাঁর।

রায়গঞ্জের বহু পুরুষ নেশায় আসক্ত হয়ে একাধিক জায়গায় ভর্তি। রোজগার যে খুব একটা আগে করতেন, তেমনটাও নয়। উপার্জনের প্রায় সবটাই নেশাতে উড়িয়ে দিতেন তাঁরা। ফলে সংসারের হাল ধরতে এগিয়ে এসেছেন স্ত্রীরা। কেউ হোটেলে রাঁধুনির কাজ করছেন। কেউ আবার মিড ডে মিলের রান্না করছেন স্কুলে। অনেকে বাধ্য হয়ে কোনও কোনও বাড়িতে পরিচারিকার কাজও শুরু করেছেন। তবে তাঁরা দিনবদলের স্বপ্ন দেখেন। আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠানও হয়েছে এই দিনে। কিন্তু প্রান্তিক এলাকার এইসব বাসিন্দাদের এব্যাপারে কোনও উৎসাহ, আবেগ নেই। দিনের নির্দিষ্ট সময়েই কাজ শুরু করেছেন তাঁরা। এই দিনের বিশেষ কোনও ছাপ তাঁদের উপর পড়েওনি।

জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পূরণকুমার শর্মা বলেন, "জেলার রুপাহারে একমাত্র একটি নেশামুক্তি কেন্দ্রে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। দু'টি কেন্দ্র লাইসেন্সের জন্য আবেদন জমা দিয়েছে। তবে নেশামুক্তি কেন্দ্র চালানোর জন্য রাজ্যের 'মেন্টাল হেলথ' বিভাগের অনুমোদন এখনও মেলেনি। তবে ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী বিনা লাইসেন্সে নেশামুক্তি কেন্দ্র সম্পূর্ণ বেআইনি।" এত মানুষ নেশাগ্রস্ত কীভাবে হয়ে পড়ছেন, সেই বিষয়টিও ভাবাচ্ছে ওয়াকিবহাল মহলকে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • তীব্র মাদকাসক্ত স্বামীকে নেশামুক্তি কেন্দ্রে ভর্তি করতে বাধ্য হয়েছিলেন নিরুপায় স্ত্রী।
  • বাড়িতে দুই সন্তান। তাদের পড়াশোনার খরচ, উপরন্তু স্বামীর চিকিৎসার দায়িত্ব।
  • এই অসহনীয় আবহে সংসারের হাল ধরলেন নিজেই। সংসারের জোয়াল টানতে চা বিক্রি শুরু করলেন জয়িতা দাস।
Advertisement