অর্ণব দাস, বারাসত: রেশন বণ্টন মামলায় জামিন পাওয়ার পরই রাজনীতিতে ফের সক্রিয় হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা হাবড়ার বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। বিধানসভায় তাঁকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আসন্ন বাজেট অধিবেশনে মন্ত্রীদের জন্য নির্দিষ্ট ট্রেজারি বেঞ্চের পাশে অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ আসনে থাকবেন তিনি। এসবের পর এবার ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে হাতছাড়া হওয়া হাবড়ার রাশ টানতে ঝাঁপালেন জ্যোতিপ্রিয়। জামিনের পর এই প্রথমবার সেখানে বিশাল মিছিল হল তাঁর নেতৃত্বে। এক কিলোমিটার দীর্ঘ পথ হাঁটলেন তিনি।
পরনে হলুদ পাঞ্জাবিতে যেন নব বসন্তের ছোঁয়া, নতুন উদ্যমে কাজের হাতছানি। দীর্ঘ ১৪ মাস পর নিজের বিধানসভা কেন্দ্র হাবড়ায় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে পা রাখতে দেখে এমনই বলছেন এলাকাবাসী। রবিবার হাজারও কর্মী, সমর্থকের ভিড়ে মিশে মিছিলে পা মেলালেও রাজনৈতিক কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। শুধুমাত্র বললেন হাবড়ার উন্নয়নের কথাই। রেশন বন্টন দুর্নীতি মামলায় শর্তসাপেক্ষ জামিনের পর প্রথমবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানালেন, "হাবড়ার উন্নয়ই এখন আমার কাছে পাখির চোখ। আমরা মিছিল-মিটিং সব করব, কিন্তু সবার আগে উন্নয়ন করতে হবে।"
হাবড়া ২ নম্বর রেলগেট সংলগ্ন যশোর রোড থেকে পুরসভা পর্যন্ত মিছিলে জ্যোতিপ্রিয়র সঙ্গে বহু কর্মী, সমর্থক। নিজস্ব চিত্র।
এলাকার বিধায়কের সঙ্গে দেখা করতে রবিবার সকাল নটার আগে থেকেই হাবড়া ২নম্বর রেলগেট সংলগ্ন যশোর রোডে জমায়েত শুরু হয়েছিল নেতা-কর্মী থেকে সাধারণ মানুষের। সাড়ে দশটা নাগাদ যখন গাড়ি থেকে নামলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে সকলের প্রিয় 'বালুদা', উচ্ছ্বাস যেন বাঁধভাঙা! কর্মীদের আবেগ বুঝে তৎক্ষণাৎ গাড়ি থেকে নেমে পড়লেন তিনিও। একবছর দুমাস পর দলীয় পতাকা হাতে দলের স্লোগানে গলা মিলিয়ে প্রায় ১ কিলোমিটার মিছিলে হেঁটে হাবড়া পুরসভায় পৌঁছন বিধায়ক। মূলত হাবড়া বিধানসভা এলাকার নেতা, কর্মী, সমর্থকরা এদিন উপস্থিত হয়েছিলেন জ্যোতিপ্রিয়কে স্বাগত জানাতে। তবে পার্শ্ববর্তী গোবরডাঙা, অশোকনগর এমনকি বারাসত থেকেও তৃণমূল নেতারা এদিন পুরসভায় গিয়েছিলেন জ্যোতিপ্রিয় সঙ্গে দেখা করতে। পুরসভায় বসেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বললেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এলাকায় যে উন্নয়ন আমরা শুরু করেছিলাম, সেগুলির কিছু এখনও অসমাপ্ত। সেই কাজ শেষ করা হবে। বিধায়ক তহবিলের বেশিরভাগ টাকা এলাকার স্কুল, কলেজ ও হাবড়া হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়নে খরচ করা হবে। বাওগাছীতে প্রসূতি মায়েদের জন্য অত্যাধুনিক পরিকাঠামো চিকিৎসালয় তৈরি পরিকল্পনা করা হচ্ছে।"
তারপর পুরসভায় কাউন্সিলরদের সঙ্গে এলাকার রাস্তাঘাট থেকে পুকুরের গার্ডওয়াল, পানীয় জল, হাবড়া-মগরা রোডের সম্প্রসারণ, আলো, হাবড়া হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়ন, বস্ত্রহাট চালু করা, বৈদ্যুতিক চুল্লি এবং শহরের বেশ কয়েকটি স্কুলের পরিকথাগত উন্নয়ন নিয়েও এদিন সঙ্গে প্রায় ঘন্টা তিনেক বৈঠক করেন জ্যোতিপ্রিয়। পুরসভা থেকে বেড়িয়ে কলতান প্রেক্ষাগৃহ পরিদর্শনের পর ১৬ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ড সহ মছলন্দপুর ও কুমড়া পঞ্চায়েত এলাকায় দলীয় কর্মীদের পিকনিকেও যান তিনি। বিধানসভা এলাকায় এসে রাজনৈতিক কোনো আলোচনা বা মন্তব্য না করলেও রাজনৈতিক মহলের মতে, হাতের তালুর মত চেনা উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের অনুপস্থিতিতে সংগঠনের রাশ অনেকটাই আলগা হয়েছে। তাই ফের জেলাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে এদিন থেকেই ময়দানে নামলেন বালু।