shono
Advertisement
Leopard

তরাই-ডুয়ার্সে জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে ক্রমশ বাড়ছে চিতাবাঘের হানা, আতঙ্কে চা শ্রমিকরা

ইতিমধ্যে বছরের শুরুর তিনমাসে সাতটি ঘটনায় জখম হয়েছেন ৯ জন।
Published By: Suhrid DasPosted: 11:52 AM Mar 07, 2025Updated: 12:44 PM Mar 07, 2025

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: এবার ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়েছে চায়ের মরশুম। তার আগে থেকেই তরাই-ডুয়ার্সের জনপদে চিতাবাঘের হামলা বেড়ে চলায় আতঙ্কের ছায়া নেমেছে চা শ্রমিক মহলে। ইতিমধ্যে বছরের শুরুর তিনমাসে সাতটি ঘটনায় জখম হয়েছেন ৯ জন। গত বছর উত্তরের চা-বাগান এলাকায় চিতাবাঘের হামলায় মৃত্যু হয় চারজনের। জখম হন অন্তত ২৫ জন। এবার বৃষ্টির অভাবে এখনও গাছে তেমনভাবে দু’টি পাতা একটি কুড়ি দেখা না মেলায় পাতা তোলার হিড়িক নেই। পুরোদমে কাজ শুরু হলে কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে? সেই উদ্বেগে ঘুম উবেছে শ্রমিক মহল্লায়।

Advertisement

কেন এমনটা হবে না! নতুন বছরের প্রথম মাস থেকেই শ্বাপদের হামলা শুরু হয়েছে। ৩০ জানুয়ারি মেটেলি ব্লকের বড়দিঘি চা-বাগানে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে চিতাবাঘের হামলায় গুরুতর জখম হন এক মহিলা। এরপর একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে। ৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে নাগরাকাটা ব্লকের আংরাভাষা-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কলাবাড়ি চা বাগানে কাজ করার সময় চিতাবাঘের হামলায় গুরুতর জখম হন এক মহিলা চা শ্রমিক। শ্বাপদটি অতর্কিতে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ১৪ ফেব্রুয়ারি লাটাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর ঝারমাটিয়ালি কলোনিপাড়ার বাসিন্দা কালু রায়ের বাড়িতে ঢুকে পড়ে একটি চিতাবাঘ। ২৬ ফেব্রুয়ারি বিন্নাগুড়ি চা বাগানে চিতাবাঘের হামলায় জখম হন এক মহিলা চা শ্রমিক। রীতিমতো শ্বাপদের সঙ্গে লড়াই করে রক্ষা পান তিনি।

এরপর ৪ মার্চ শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ফাঁসিদেওয়া ব্লকের মতিধর চা বাগানের বললাইনে চিতাবাঘের হামলায় জখম হন এক মহিলা চা শ্রমিক। একই দিনে কোচবিহার ২ ব্লকের পাতলাখাওয়া সুকধনের কুঠি এলাকায় ছাগল ছানা শিকার করতে এসে গৃহস্থের বাড়ির ঠাকুর ঘরে ঢুকে পড়ে চিতাবাঘ। ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু করে শ্বাপদটিকে উদ্ধার করে বন কর্মীরা। পরদিন ৫ মার্চ ফালাকাটার দলগাঁও চা বাগানে পাতা তোলার সময় চিতাবাঘের হামলায় এক মহিলা শ্রমিক জখম হন। কার্যত তাপমাত্রা ঊর্ধ্বমুখী হতে শ্বাপদের হামলা অনেকটাই বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে ‘গ্রিন কার্পেট জোন’ তৈরি। অর্থাৎ কৃষি জমিতে বেপরোয়াভাবে চা-বাগান এলাকার সম্প্রসারণ কি চিতাবাঘের মতো বন্যপ্রাণীদের ডুয়ার্স-তরাইয়ের লোকালয়ে যাতায়াত সহজ করেছে!

এমন ঘটনায় আতঙ্কিত ‘কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন’। সংস্থার কর্তারা মনে করছেন, এটা অশনিসঙ্কেত। নিয়ম না মেনে যেন আর চা-বাগান গড়ে না ওঠে সেজন্য সরকারের কাছে আর্জি রাখবেন। বনকর্তারা জানিয়েছেন, দু’দশক আগে সাধারণত জঙ্গল লাগোয়া বড় চা-বাগানে চিতাবাঘের দেখা মিলেছে। এরপর ফাকা চাষের মাঠ থাকায় লোকালয়ে ঢুকে হামলা চালানোর সুযোগ হয়নি। কিন্তু কৃষিজমি, চা-বাগান পালটে যেতে পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। পরিস্থিতি দেখে বন্যপ্রাণপ্রেমীদের দাবি, জঙ্গল থেকে বের হয়ে চা-বাগান ধরে এখন যে কোনও বন্যপ্রাণীর শহরে পৌঁছে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়। তার উপর চিতাবাঘের মতো প্রাণী গভীর জঙ্গলে থাকে না। জঙ্গলের আশপাশে ঝোপঝাড়ে ঘাপটি মেরে থেকে শিকার করতে পছন্দ করে। বিশেষ করে প্রজননের সময় স্ত্রী চিতাবাঘ পুরুষ চিতাবাঘ থেকে দূরে থাকতে চা-বাগান এলাকায় ডেরা বাধে।

শিলিগুড়ি মহকুমার নিউ চামটা, মোহরগাঁও, সুকনা, মারাপুর, তরাই, মেরিভিউ, ফুলবাড়ি, অটল, আজমাবাদ, বিনয়নগর, বাগডোগরা, শিমুলবাড়ি, পানিঘাটা, লংভিউ, পানিঘাটা, নকশালবাড়ি, গাঙ্গুরাম, ত্রিহানা, হাঁসখাওয়া, মিনি ও রাঙাপানি চা-বাগান সংলগ্ন এলাকায় চিতাবাঘের উপদ্রব বেশি। ওই এলাকায় মাঝেমধ্যে গুরুতর জখম হচ্ছে চা-শ্রমিকেরা। ২০২১ সালে গুলমার জঙ্গল থেকে বের হয়ে একটি চিতাবাঘ শিলিগুড়ি শহরের সমরনগর এলাকার এক বাড়িতে ঢুকে পড়ে। পথে এক কিশোরী-সহ তিনজনকে সামনে পেয়ে থাবা বসায়।

হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটর অনিমেষ বসু বলেন, “চিতাবাঘ গ্রিন প্যাসেজ পেয়ে যাওয়ায় শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি শহরের জনবহুল এলাকায় ঢুকে পড়ছে। দিনের পর দিন সেটা বাড়ছে।” একই অভিযোগ আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাবের সহকারী সম্পাদক অভিজিৎ মালাকারের। উদ্বেগজনক পরিস্থিতির কথা অস্বীকার করেননি ‘কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “মারাত্মক পরিস্থিতি। আর যেন চা বাগানের সংখ্যা না বাড়ে সেটা সরকারের দেখা উচিত।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • এবার ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়েছে চায়ের মরশুম। তার আগে থেকেই তরাই-ডুয়ার্সের জনপদে চিতাবাঘের হামলা বেড়ে চলায় আতঙ্কের ছায়া নেমেছে চা শ্রমিক মহলে।
  • গত বছর উত্তরের চা-বাগান এলাকায় চিতাবাঘের হামলায় মৃত্যু হয় চারজনের।
  • জখম হন অন্তত ২৫ জন। সেই উদ্বেগে ঘুম উবেছে শ্রমিক মহল্লায়।
Advertisement