প্রীতিকা দত্ত: দেশের সপ্তদশ লোকসভায় নির্বাচনে বাংলায় পদ্ম ফোটানোর নেপথ্যে কার হাত? এই প্রশ্নটাই ঘুরছে বিভিন্ন মহলে। কেউ বলছেন বাংলায় বিজেপির দায়িত্বে থাকা কৈলাস বিজয়র্বগীয়র। কেউ বলছেন তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে আসা ‘গদ্দার’ নেতা মুকুল রায়। কিন্তু যাঁরা ২০১৯-এ দাঁড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় দাপটের কথা মানবেন, তাঁরা বলবেন একদম অচেনা একটা নাম। উজ্জ্বল পারিক। উত্তর কলকাতার বছর ৩৯-এর উজ্জ্বল পারিকের হাত ধরে আপাতত বাংলায় ‘ভাইরাল’ নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহের দল।
[আরও পড়ুন: ‘ভুলিনি’, শপথ অনুষ্ঠানে বাংলায় নিহত কর্মীদের পরিবারকে ডেকে বার্তা মোদির]
কে, কোন বিষয়ে লাইক দিচ্ছেন। কোন বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হচ্ছেন। কোন এলাকায় কোনটা হিট, কোনটা ফ্লপ। গত দু’মাস বিভিন্ন ‘সেন্টিমেন্ট অ্যানালিসিস টুল’ দিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছে ‘টিম উজ্জ্বল পারেখ’। নাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জোড়া ফুলের বাংলায় বিজেপির ১৮ সাংসদকে জেতানোর কাজটা সহজ ছিল না। অথচ এই উজ্জ্বল পারিকে কোনও রাজনৈতিক সমাবেশে দেখাই যায়নি। আসলে ল্যাপটপের সামনে এক ক্লিকেই হেডলাইন তৈরি করেছেন তাঁর হয়ে কাজ করা সেনা। ন্যাশকমের প্রাক্তন সভাপতি আর চন্দ্রশেখর অবশ্য আগেই বলেছিলেন, স্মার্টফোনের যুগে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিশেষ ভূমিকায় থাকবে প্রযুক্তি। আর হয়েছেও তাই। শুধু নির্বাচন বলে নয়। মানবেন আপনিও যে, সোশ্যাল মিডিয়ার দাপট এখন সর্বত্র। ২৩ মে ভোটের ফল দেখার পর কংগ্রেসের এক সোশ্যাল মিডিয়া স্ট্র্যাটেজিস্ট নরেশ অরোরা দুঃখ করে বলেছিলেন, “চৌকিদার বলে প্রচার শুরু করলেন রাহুল গান্ধী। আর লাভের গুড় খেল বিজেপি?” আসলে ২০১৪ থেকেই নির্বাচনে সোশ্যাল মিডিয়া নির্ণায়কের ভূমিকা নিতে শুরু করেন। তখন সর্বভারতীয় বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়া সেলের কান্ডারি ছিলেন প্রশান্ত কিশোর। রাষ্ট্রসংঘের কাজ ছেড়ে আসা প্রশান্তের ‘#ঘরঘরমোদি’ বা ‘চায়ে পে চর্চা’র জোর কতটা ছিল, তা ভোটের ফলাফল বলে দিয়েছে।
তবে এবার কংগ্রেস, তৃণমূ্ল বা অন্য রাজনৈতিক দল ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, টুইটার নিয়ে কিছু বলতে পারবেন না। যে কারণে গুগল, ফেসবুক থেকে দেশের নির্বাচন কমিশন – সকলেই এবার একজোট হয়ে কোমর বেঁধে নেমেছিল। তা সে ফেক প্রোফাইল বাদ দেওয়া থেকে ভুয়ো খবর তদন্ত – সমস্তটা রুখতেই তৈরি ছিল সোশ্যাল মিডিয়া কর্তৃপক্ষ। মহারাষ্ট্রের এক ভুয়ো খবর যাচাইকারী সংস্থা জানাচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভোটপ্রচার করতে চলতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে গুগল ও ফেসবুকে মোট ২৪.৪ কোটি টাকার বিজ্ঞাপন দিয়েছে বিজেপি। সেখানে কংগ্রেসের খরচ করেছে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা। কলকাতার সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে, “ভোটে জিততে মরিয়া দলগুলির কাছে এই খরচ নস্যি।” প্রশান্তের মতো চলতি বছরের পশ্চিমবঙ্গের জন্য একই কাজ করেছেন উজ্জ্বল পারেখ। লন্ডনের লোভনীয় চাকরি ছেড়ে কলকাতায় ফেরেন উজ্জ্বল। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়া সেলের দায়িত্ব নেন।
উজ্জ্বলের কথায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বার্তাকে জনমনে পৌঁছে দেওয়াই তাঁর মূল কাজ। ফেসবুক, টুইটার, বুটশুট, ওপেন টেক্সটের বাজারে উজ্জ্বল কিন্তু ক্রেডিট দিচ্ছেন হোয়াটস অ্যাপকে। উজ্জ্বলের ধারণা, ২০১৯-এর লোকসভা আসলে হোয়াটস অ্যাপের জয়। তাই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি পঞ্চাশ হাজার হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ তৈরি করে। অর্থাৎ সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষমতা আপনি মানুন না মানুন, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের দল মজ্জায় মজ্জায় বোঝে।
[আরও পড়ুন: নির্বাচনী আবহ কাটতেই ফের মহার্ঘ পেট্রল-ডিজেল, ভোগান্তি বাড়ল সাধারণের]
The post হাতিয়ার সোশ্যাল মিডিয়া, উজ্জ্বলের নকশাতেই বাংলায় পদ্মের রমরমা appeared first on Sangbad Pratidin.
