বিশেষ সংবাদদাতা: বাংলা সিনেমার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতেহাল ধরেছেন ইন্ডাস্ট্রির কাণ্ডারিরা। এই নিয়ে নানা আলোচনা ও বৈঠক চলছেই। মেগাবাজেটের হিন্দি ও দক্ষিণী ছবির রমরমায় প্রাইম টাইমে বাংলা ছবি নিজভূমে হল পায় না। একইসঙ্গে একাধিক বাংলা ছবি একসঙ্গে মুক্তি পাওয়ার ফলেও বাংলা ছবির ব্যবসায় ক্ষতি হয়। এই নিয়েই বড়সড় আলোচনায় হয় গত আগস্ট মাসে। গঠিত হয়েছিল একটি স্ক্রিনিং কমিটি। এই স্ক্রিনিং কমিটির উদ্দেশ্য ছিল একটাই আর তা হল বাংলা ছবির ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করা। প্রতিটি ছবিই যাতে বক্স অফিসে ভালো ফল করতে পারে। আর এই কারণেই ‘ইম্পার’ তরফে জানানো হয়েছিল যে কোনও ছ’টি উৎসবের মধ্যে দু’টি উৎসবেই যে কোনও প্রযোজনা সংস্থা তাদের ২টি ছবিই রিলিজ করতে পারবে। বছরের অন্যান্য সময়ে ছবি মুক্তি পেলে তা যদিও এই তালিকায় থাকবে না। তবে সব উৎসবেই সমস্ত প্রযোজনা সংস্থা ছবি মুক্তি দিতে পারবে না। যে কোনও প্রযোজনা সংস্থাকে তার জন্য বেছে নিতে হবে দু’টি উৎসব।
কিন্তু স্ক্রিনিং কমিটি তৈরি হওয়ার পর থেকেই নানা মতানৈক্য চলছে। এই নিয়ে ফের শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ইম্পার অফিসে একটি বৈঠক বসে। যেখানে স্ক্রিনিং কমিটি আদৌ থাকবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা হয়। সূত্রের খবর, মিটিংয়ের মধ্য থেকে পিয়া সেনগুপ্ত ফোন করেন দেবকে। কারণ, এই স্ক্রিনিং কমিটিকে মানা হবে কি না, তার জন্য ভোট নেওয়া হয় এদিন। তাতে দেব ফোনে “নোটা” দেয়। যেটাকে কমিটি ধরে নিচ্ছে দেব সম্মতি দেয়নি। উল্টোদিকে উপস্থিত ১২ জন কমিটির পক্ষে ভোট দেয়। ফল হয় ১২-১ কমিটির পক্ষে। সুতরাং এখান থেকে বলা যায় দেবের সঙ্গে স্ক্রিনিং কমিটির একটা দূরত্ব থেকেই গেল। বলে রাখা ভালো এর আগে দেবের ছবি মুক্তির আগে এই স্ক্রিনিং কমিটিই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।
এদিন এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইম্পার সভাপতি পিয়া সেনগুপ্ত, ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, শ্রীকান্ত মোহতা, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-সহ আরও অনেকে। পিয়া প্রথমেই জানান, ‘ভোট হয়েছে স্ক্রিনিং কমিটিকে কারা কারা মান্যতা দিচ্ছেন সেই বিষয়ে। শ্রীকান্ত মোহতা, নিসপাল সিং রানে, উইন্ডোজ, রাজকুমার দামানি, পঙ্কজ লাডিয়া, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, রানা সরকার, স্বরূপ বিশ্বাস, জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, শতদীপ সাহা, ফিরদৌসুল হাসান– এরা প্রত্যেকেই স্ক্রিনিং কমিটিকে সমর্থন করেছেন এবং তার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। বৈঠকে বিশেষ আমন্ত্রিত হিসেবে ছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, নীলরতন দত্ত, নবীন চৌখানি, সুভাষ সেন, ঋতব্রত ভট্টাচার্য, সরোজ মুখোপাধ্যায়, সমীরণ দাস প্রত্যেকেই স্টেক হোল্ডার এবং কমিটিকে সমর্থন করেছেন।
ইম্পার সভাপতি পিয়া সেনগুপ্ত জানান, ‘দ্বিতীয় বিষয় হল ২০২৬ সালের বাংলা ছবির মুক্তির ক্যালেন্ডার সবার সামনে আসবে ১৯ জানুয়ারি। তৃতীয় বিষয়, বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে বিভিন্নরকম সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট এবং বেশ কিছু অনভিতপ্রেত ঘটনাকে তীব্র ধিক্কার জানায় এই কমিটি। তিনি বলেন, ‘তার মধ্যে একটি হল শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ছবি মুক্তির সময় তাঁর স্ত্রী জিনিয়া সেনের উদ্দেশ্যে কুমন্তব্য করা হয়েছিল তার তীব্র নিন্দা করছে কমিটি। এমনকী বড়দিনে ছবি মুক্তির আগে নবীনা সিনেমা হলের টিকিট বিক্রির জায়গা ঘেরাও করেছিলেন কিছু অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি, তার তীব্র নিন্দা করেছে কমিটি। চার নম্বর বিষয় যেটি উঠে এল, একজন সদস্য বক্তব্য পেশ করেছেন যে, নতুন যে সব প্রযোজক আসছেন তাঁদেরও প্রাইম ডে-তে সুযোগ করে দেওয়া উচিত। কমিটি সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। খবর একজন বড় মাপের ব্যক্তিত্ব সেই প্রস্তাব রেখেছিলেন। এই প্রথমবার কার্যত স্ক্রিনিং কমিটির বৈঠকে দেব সমালোচিত হলেন। প্রথমদিকের বৈঠকগুলোতে দেব কিন্তু ছিলেন। এতদিন বাদে তিনি সহমত নন। যদিও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন।
হল ভরানোর ক্ষেত্রে ফ্যান ক্লাব কালচার প্রসঙ্গে স্বরূপ বিশ্বাসকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ‘ফ্যান ক্লাব কালচার ভাল। সে খেলার ক্ষেত্রে কিংবা সিনেমার ক্ষেত্রে হয়ই। কিন্তু সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির লোকজন, অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালকদের আক্রমণের শিকার হওয়া অত্যন্ত নক্কারজনক।’ শিবপ্রসাদ বলেন, ‘বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, যাঁরা কাজ করছি সকলেই সম্মান চাই। হল মালিক, পরিচালক, অভিনেতা প্রত্যেকে। এত তির্যক মন্তব্য ইন্ডাস্ট্রির সংস্কৃতি নয়। এটা কাম্য নয় যে কোনও হল মালিক তার সিনেমা চালানো নিয়ে ভীত হবেন। স্ক্রিনিং কমিটির দায়িত্ব শুধু সিনেমা মুক্তি নিয়ে নয়, সুস্থ পরিবেশ নিরাপত্তা সম্মান বৃহত্তর পরিবেশ জড়িয়ে এখন।’
