টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: রাজ্যে চলেছে এসআইআরের শুনানি। ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের নামে বয়স্ক, অসুস্থ, অন্তঃসত্ত্বাদের শুনানিতে ডেকে পাঠানো হচ্ছে। তাতে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ অভিসন্ধি রয়েছে বলে বারবার অভিযোগে সরব শাসকদল। বাঁকুড়া জেলায় আজ অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর থেকে এই শুনানির কাজ শুরু হয়েছে। আর মঙ্গলেই সেখানে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। দুপুর ১২টা নাগাদ বড়জোড়ার বীরসিংহ ময়দানে তাঁর জনসভা। এই সভা থেকে এসআইআর পদ্ধতির বিরোধিতার পাশাপাশি ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া জিততে কী সুর বেঁধে দেন তিনি, সেদিকে নজর সকলের।
বড়জোড়া শিল্পাঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতির দোলাচলে। একদিকে দুর্গাপুর-আসানসোল শিল্পাঞ্চলের প্রভাব, অন্যদিকে বাঁকুড়ার গ্রামবাংলার ভোটব্যাঙ্ক - এই দুয়ের মাঝখানে বড়জোড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কারখানা-নির্ভর শ্রমিক ভোট যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই গুরুত্বপূর্ণ প্রান্তিক কৃষক ও পরিযায়ী শ্রমিক পরিবার। ২০১১ সালের পর এই এলাকায় তৃণমূলের সংগঠন শক্ত হলেও লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রভাব যে বেড়েছে, তা অস্বীকার করছেন না তৃণমূল নেতারাই। সেই ফাঁক পূরণ করতেই মঙ্গলে মুখ্যমন্ত্রীর সভাকে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে দেখছে শাসকদল।
এই মুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সভা ঘিরে প্রস্তুতি একেবারে তুঙ্গে। বড়জোড়ার বীরসিংহ ময়দানে তৈরি হয়েছে সভামঞ্চ। তার দৈর্ঘ্য প্রায় ১২০ ফুট, প্রস্থ ৬০ ফুট। সামনে আলাদা ভিআইপি করিডর ও মিডিয়া গ্যালারি রাখা হয়েছে। শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন কারখানা এলাকা, খনি সংলগ্ন বসতি এবং পশ্চিম ও পূর্ব বর্ধমান সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে মানুষ আনতে একাধিক রুটে পরিবহণের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে খবর।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বড়জোড়ায় সভার মাধ্যমে তৃণমূল মূলত তিন-চারটি বার্তা দিতে চাইছে। SIR আবহে 'হয়রান' জনতার পাশে থাকা, শিল্প ও কর্মসংস্থানের প্রশ্নে রাজ্যের অবস্থান তুলে ধরা, কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগে ফের ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের ডাক এবং শ্রমিক-মধ্যবিত্ত ভোটব্যাঙ্ককে আবার সংগঠনের ছাতার তলায় আনা। আবার পশ্চিম ও পূর্ব বর্ধমান সংলগ্ন এই এলাকায় বিজেপির সংগঠন শক্তিশালী হওয়ায়, মুখ্যমন্ত্রীর সরাসরি সভা তৃণমূলের কাছে পালটা রাজনৈতিক অস্ত্র। বড়জোড়ার মাঠে সেই লড়াইয়ের প্রস্তুতিই এখন চোখে পড়ছে।
