দেব গোস্বামী, বোলপুর: ছাতিমতলায় রবীন্দ্রসঙ্গীত, ব্রহ্ম উপাসনা, বৈদিক মন্ত্রপাঠের মধ্যদিয়ে 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ' শান্তিনিকেতনে শুরু হল পৌষমেলা। উপাসনায় অংশ নিয়েছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য প্রবীরকুমার ঘোষ, অধিকর্তা অমিত হাজরা, অধ্যপক সুমন ভট্টাচার্য। আমন্ত্রিত হিসাবে ছিলেন বীরভূম জেলা শাসক ধবল জৈন, জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ। ছিলেন বিশ্বভারতীর অধ্যাপক-অধ্যাপিকা, পড়ুয়া, আশ্রমিকেরা৷ এই মেলা চলবে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
মেলা উপলক্ষে স্বাভাবিকভাবেই বোলপুরে পর্যটকদের ভিড়। বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ১৭০০টি স্টলের প্লট বুক হয়েছে। আদালতের নির্দেশ মেনে দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও প্লাস্টিক বর্জনে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ও শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট। বিশ্বভারতীর অধিকর্তা অমিত হাজরা আগেই জানান, স্টল বুকিংয়ে ভালো সাড়া মিলেছে। দমকলের জন্য মাঠে অতিরিক্ত জায়গা রাখা হয়েছে। দর্শনার্থীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে সমস্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ছয় দিন ধরে মেলা প্রাঙ্গণের বিনোদন মঞ্চে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার শিল্পীদের অংশগ্রহণে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে। নিরাপত্তা ও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বোলপুরের এসডিপিও রিকি আগরওয়াল জানান, “অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, এসডিপিও ও ডিএসপি পদমর্যাদার আধিকারিকদের নেতৃত্বে প্রায় ২৫০০ পুলিশ কর্মী মোতায়েন থাকছেন। এর মধ্যে থাকছেন মহিলা পুলিশ, র্যাফ, সাদা পোশাকের পুলিশ, অ্যান্টি-ক্রাইম টিম ও বিশেষ উদ্ধারকারী দল। নিরাপত্তা নজরদারিতে বোলপুর-শান্তিনিকেতন জুড়ে স্থায়ী প্রায় ২০০টি সিসিটিভি ক্যামেরার পাশাপাশি মেলা প্রাঙ্গণ ও প্রবেশপথে বসানো হয়েছে আরও ৩০০টি অস্থায়ী ক্যামেরা। পাঁচটি উচ্চমানের ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমেও নজরদারি চালানো হবে। মেলায় থাকছে ৩৬টি পুলিশ সহায়তা কেন্দ্র, ১০টি ওয়াচ টাওয়ার এবং আটটি ড্রপ গেট। শিশুদের নিরাপত্তার জন্য চালু করা হয়েছে চাইল্ড ফ্রেন্ডলি কর্নার। শিশু হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা এড়াতে তাদের গলায় অভিভাবকের ফোন নম্বর সংবলিত কার্ড ঝুলিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। প্রবীণ ও শারীরিকভাবে অক্ষম দর্শনার্থীদের জন্য থাকবে পুলিশের টোটো পরিষেবা ও জরুরি অ্যাম্বুলেন্স।” সব মিলিয়ে শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী পৌষউৎসব ও পৌষমেলাকে সুশৃঙ্খল, নিরাপদ ও আনন্দমুখর করে তুলতে প্রশাসনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে।
