অর্ণব দাস, বারাকপুর: চাপ দিয়ে তড়িঘড়ি 'অভয়া'র ময়নাতদন্ত করানোর অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। সিবিআই দপ্তর থেকে বেরিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছিলেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেন্সিক মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. অপূর্ব বিশ্বাস। অভিযোগের তির ছিল নির্যাতিতার 'কাকা'র প্রাক্তন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। এবার সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুললেন সেই 'কাকা' সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়। তাঁর সাফ দাবি, সমস্ত দাবি মিথ্যা। প্রয়োজনে অভিযোগকারীর সঙ্গে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করুক, দাবি তাঁর।
ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ অপূর্ব বিশ্বাসের অভিযোগ প্রসঙ্গে সোমবার ফোনে সঞ্জীব মুখোপাধ্যায় বলেন, "আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। সেটার প্রমাণ দিতে সিবিআইকে বলব, অভিযোগকারীর সঙ্গে আমায় মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসা করা হোক। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, "আমি অবাক। ওঁকে (অপূর্ব বিশ্বাস) আমি চিনি না, আমাকে উনি কি করে চিনলেন জানি না। বাড়ি ফিরেই মৃতার মা-বাবাকে বলব, তদন্তের স্বার্থে তাঁরা যেন সিবিআইকে বলেন আমাকে ডাকতে। আর তখন যেন ওঁকে (অপূর্ব বিশ্বাস) আমার সামনাসামনি বসানো হয়। আমি নিজে ভীষণভাবে রাজি। যদি তখন মা-বাবা থাকেন আরও ভালো হয়। কারণ আমার কাছে বিষয়টি ভীষণভাবে স্বচ্ছ।" উল্লেখ্য, এদিন সন্ধেয় সঞ্জীব স্থানীয় বিধায়ক নির্মল ঘোষের সঙ্গে দেখা করেন। বৈঠকে ছিলেন তৃণমূলের সাংসদ পার্থ ভৌমিক এবং দুই বিধায়ক সুবোধ অধিকারী ও সোমনাথ শ্যাম।
প্রসঙ্গত, রবিবার সিবিআইয়ের তলবের পর সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে আর জি করে নির্যাতিতার ময়নাতদন্ত নিয়ে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ডাঃ অপূর্ব বিশ্বাস সংবাদমাধ্যমের সামনে দাবি করেছিলেন, "ঘটনার দিন মেয়েটির কাকা পরিচয় দিয়ে প্রতিবেশী একজন হুঁশিয়ারির সুরে আমাদের বলে দ্রুত ময়নাতদন্ত করতে। না হলে রক্তগঙ্গা বইয়ে দেওয়া হবে! পরে ওই ব্যক্তি নিজেকে প্রাক্তন কাউন্সিলর হিসাবেও পরিচয় দেয়।" এনিয়ে সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়ের পালটা আক্রমণ, "কেন, কী কারণে, কী উদ্দেশে বলছেন, বলতে পারব না। তবে, আমি যে প্রাক্তন কাউন্সিলর ছিলাম এটা উনি খুব গুছিয়ে বলছেন। ২০০৮ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত আমি সিপিএমের কাউন্সিলর ছিলাম। সেই সময়কালেই আমি কাউন্সিলর হিসাবে কাউকে পরিচয় দিতাম না। এটা ওয়ার্ডের মানুষ জানেন।" যদিও ২০১৯ সালে তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বলেও এদিন জানান।
একইসঙ্গে অভিযোগ উড়িয়ে প্রতিবেশী প্রাক্তন কাউন্সিলরের জবাব, "এরকম কোনও কথা আমার সঙ্গে হয়নি। আর আমি বলবই বা কেন! তখন পুলিশ প্রশাসন উপস্থিত ছিল। স্বাস্থ্যদপ্তরের লোকেরা, আন্দোলনকারী ছাত্ররা তখন ছিল। ছাত্রদের দাবি মেনেই সবটা হয়েছে। তাহলে কি সেদিন ময়নাতদন্ত না হওয়ার কোনও পরিকল্পনা ছিল! আর আমি বা এমন কে, যে বলার পর সমস্ত আইন মেনে, সব আমার কারণেই ময়নাতদন্ত হয়ে গেল।" পাশাপাশি ময়নাতদন্তের সময়কার বিবরণ তুলে ধরে তিনি জানান, "যখন মৃতদেহ উপর থেকে নিচে নামিয়ে ময়নাতদন্তের ঘরে আনা হল, তখন আমি মৃতার মা বাবাকে বললাম কাটাকাটি হবে, এটা সহ্য করা যাবে না। তার পর মা-বাবার সঙ্গে ওদের গাড়িতেই টালা থানায় এফআইআর করতে যাই। আমাদের সঙ্গে তখন মেয়েটির বিশেষ বন্ধু ও তাঁর মা-বাবাও ছিল।" সবমিলিয়ে আর জি কর কাণ্ডে অভিযোগ, পালটা অভিযোগের পালা চলছে। যা দেখে কেউ কেউ বসছেন অভিযোগের জালে যেন সুবিচার হারিয়ে না যায়।