shono
Advertisement
Bolpur

রবীন্দ্রনাথ-তারাশঙ্করের মাটিতে অভিনব অন্নপ্রাশন, সংস্কৃতি চর্চার মাঝে প্রথম ভাত খেল ঢাকার স্বপ্নদর্শী

সাম্প্রতিক সময়ে এই অনুষ্ঠান দুই বাংলার সংস্কৃতিচর্চার একটা বড় অঙ্গ হিসেবেই ধরা রইল।
Published By: Sucheta SenguptaPosted: 11:58 PM Jan 31, 2025Updated: 12:03 AM Feb 01, 2025

দেব গোস্বামী, বোলপুর: ঢাকার ছেলে স্বপ্নদর্শীর বয়স মাত্র ৯ মাস। বাবা কৃষ্ণেন্দু বেরা মেদিনীপুরের বাসিন্দা, মা শিপ্রা সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার বিভাগের কর্মী। স্বপ্নদর্শীর জন্ম উত্তরবঙ্গে শিলিগুড়িতে হলেও সে এবং তার মা পেশাগত কারণে বাংলাদেশের নাগরিক। কিন্তু গত কয়েকমাস ধরে বাংলাদেশে নানা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি, বিশেষত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায় স্বপ্নদর্শীর অন্নপ্রাশন নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ে দুই পরিবারের। এমন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দুই বাংলার সংস্কৃতিকে মান্যতা দিয়ে অভিনব অন্নপ্রাশনের আয়োজন করল লাভপুরে সংস্কৃতি বাহিনীর গুরুকুল নাট্য আশ্রম। দুদেশের সমান মর্যাদা এবং সম্মানের ভিত্তিতে সৌভ্রাতৃত্ব বজায় রাখতেই এমন অভিনব আয়োজন। অনুষ্ঠান দেখে অত্যন্ত খুশি এপার বাংলা-ওপার বাংলার বাসিন্দারা।

Advertisement

প্রথাগত মন্ত্র উচ্চারণ নয়, ৯ মাসের শিশুর অন্নপ্রাশনে উপনিষদ থেকে মন্ত্রপাঠ করা হয়। রবীন্দ্র-নজরুলের পাশাপাশি লাভপুরের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্মরণ করে দুই দেশের ৯টি নদীর জল ও মাটি-সহ গঙ্গা-পদ্মার মিলনক্ষেত্র হয়ে ওঠে বকুল গাছ রোপনের মধ্য দিয়ে। স্বপ্নদর্শীর অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠানে দুই বাংলার সংস্কৃতিকে মান্যতা দিয়ে পুকুরে ছাড়া হয় মাছ। সুসজ্জিত পোশাকে লাঙল নিয়ে চাষ দেন চাষিরা। আকাশে ওড়ানো হয় পাঁচটি বন্দি পায়রা।

অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠানে দুই বাংলার সংস্কৃতিকে মান্যতা দিয়ে পুকুরে ছাড়া হয় মাছ, আকাশে ওড়ে পায়রা। নিজস্ব ছবি।

এন অভিনব মুখেভাত অনুষ্ঠানে অংশ নেন স্বপ্নদর্শীর মামা প্রবীর সরকার, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসচিব ছিলেন। এছাড়াও যোগ দেন তারাশঙ্করের চিকিৎসার দেখভাল করা আরোগ্য নিকেতনের বিশু ডাক্তার তথা সুকুমার চন্দ্র। এছাড়াও 'পদ্মশ্রী' রতন কাহার, 'বঙ্গবিভূষণ' কার্তিক দাস বাউল ছাড়াও বোলপুরের ভারত সেবা সংঘের শান্তি মহারাজ-সহ এলাকার আদিবাসী কচিকাঁচারা সকলেই ছিলেন এদিনের অনুষ্ঠানে। জেলা ছাড়িয়ে রাজ্য থেকেও বিভিন্ন সংস্কৃতিকর্মী ও নাট্যব্যক্তিত্বরাও অভিনব অন্নপ্রাশনকে স্মরণীয় করতে উপস্থিত হন। ধুমধাম সহকারে শিশুর প্রথম ভাত খাওয়ার সাক্ষী রইলেন অনেকেই।

বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনীর লাভপুরের কর্ণধার উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় জানান, "দুই বাংলার সংস্কৃতিকে মান্যতা দিতেই এমন অভিনব অন্নপ্রাশনের আয়োজন। বাংলাদেশ ছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এত সংখ্যক নাট্যব্যক্তিত্ব ও সংস্কৃতিকর্মীরা আসবেন, ভাবতে পারিনি। প্রত্যেককেই বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার একতারা ও গাছ উপহার দিয়েছেন স্বপ্নদর্শীর পরিবার।" মা শিপ্রা সরকার বলেন, "ছেলের মুখেভাত অনুষ্ঠান এতটা অভিনবত্বের সঙ্গে আয়োজন হবে, তা কখনই আশা করিনি। ভিসা সমস্যা ছাড়াও দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কৌতূহল বসত এলাকার গ্রামবাসীরা ও ভিড় জমিয়েছিলেন লাভপুরে।" বাবা কৃষ্ণেন্দু বেরার বক্তব্য, "অন্নপ্রাশন উপলক্ষে ফুল-বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ও তারাশঙ্করের স্মৃতি নিয়েই বড় হবে স্বপ্নদর্শী।" সারাদিনের গোটা অনুষ্ঠান দেখে অভিভূত সকলেই। সাম্প্রতিক সময়ে এই অনুষ্ঠান দুই বাংলার সংস্কৃতিচর্চার একটা বড় অঙ্গ হিসেবেই ধরা রইল।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • ঢাকার স্বপ্নদর্শীর অভিনব মুখেভাত অনুষ্ঠান হয়ে গেল লাভপুরে।
  • রবীন্দ্রনাথ, তারাশংকরের মাটি ছুঁয়ে সংস্কৃতি চর্চায় অভিনব আয়োজন।
  • সাম্প্রতিক সময়ে এই অনুষ্ঠান দুই বাংলার সংস্কৃতিচর্চার একটা বড় অঙ্গ হিসেবেই ধরা রইল।
Advertisement