সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বাঙালির 'প্রেমদিবস' এবার প্রায় একপক্ষ কাল এগিয়ে গিয়েছে। তাই বীণাপানির আরাধনায় বাড়ন্ত লাল পলাশ! শুধু কলকাতা, শহরতলি বা উত্তরবঙ্গ নয়। খোদ পলাশের উৎপত্তিস্থল পশ্চিমাঞ্চলেও পত্রবিহীন লাল পলাশের আগুন তো দূর অস্ত! বনমহলে সেভাবে কুঁড়িরও দেখা মিলছে না। কয়েক জায়গায় ব্যতিক্রম ছাড়া। তাই শনিবার সরস্বতী পুজোর আগের দিন কলকাতার মল্লিকঘাট ফুল বাজারে লাল পলাশের কুঁড়ি বিক্রি হল ২ হাজার টাকা কেজি দরে! অঙ্ক বলছে, মাত্র ১০০ গ্রাম পলাশকুঁড়ির দাম ২০০ টাকা। রবিবার, পুজোর প্রথম দিন তা বেড়ে ৩ হাজার টাকা হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

তবে সাম্প্রতিককালে কোন দুর্যোগ না হওয়ায় অন্যান্য ফুলের দর সেভাবে চড়েনি। বিদ্যার দেবীর আরাধনার আগেও গাঁদা, নীল-সাদা অপরাজিতা, চন্দ্রমল্লিকার দাম প্রায় সব স্বাভাবিক। শুধু পলাশ নিয়েই চলছে টানাহেঁচড়া। সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়কের কথায়, "এবার সরস্বতী পুজো প্রায় দু সপ্তাহেরও বেশি এগিয়ে গিয়েছে। এই সময়টা অনেকটাই। তাই বাংলা জুড়ে পলাশ সেভাবে ফোটেনি। এমনকি কুঁড়িরও সেভাবে দেখা নেই। এ রাজ্যের মধ্যে যেখানে সবচেয়ে বেশি পলাশ গাছ রয়েছে, সেই পুরুলিয়াতেও লাল পলাশে বেশ টান। তাই সরস্বতী পুজোর আগের দিন শনিবার ২০০০ টাকা কেজি দরে পলাশ বিক্রি হয়েছে। রবিবার দাম আরও বাড়তে পারে।" বাগদেবীর আরাধনায় পলাশ বাধ্যতামূলক। প্রজনন এবং উর্বরতার সঙ্গে বিদ্যার দেবীর একটা আলাদা সম্পর্ক রয়েছে। পলাশপ্রিয়া ঋতুমতী কুমারীর প্রতীক। তাছাড়া পলাশের রং লালচে কমলা। তাই সরস্বতীর পুজোয় ওই ফুলের উপস্থিতি কাম্য।
আগুন ঝরানো লাল পলাশ। পুরুলিয়ার বরাবাজারের টকরিয়া মোড়ের অদূরে। ছবি: অমিতলাল সিং দেও।
বছর তিনেক আগে ঝাড়খণ্ড ছুঁয়ে থাকা প্রান্তিক পুরুলিয়ায় ডিসেম্বরেই উঁকি দিয়েছিল লাল পলাশের কুঁড়ি। ২০২৩-২৪ সালেও ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে কুঁড়ি ফাটিয়ে লাল পলাশ দেখেছিল এই জেলা। তাহলে কি এবার শীত বেশি? পুরুলিয়া-বাঁকুড়া আবহাওয়াদপ্তর বলছে, অন্যান্যবারের চেয়ে এবার এই দুই জেলায় হাড় হিম করা শীত বলতে যা বোঝায় তা মাঘেও অনুভূত হয়নি। তাহলে লাল পলাশের এমন দশা কেন বনমহলের এই জেলায়? আসলে এই বৃক্ষ রাশির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বনদপ্তরের। নমুনা সমীক্ষা অনুযায়ী অযোধ্যা পাহাড়ের অংশ বাদ দিয়ে বনমহল পুরুলিয়ায় ৮ লক্ষ ১৫ হাজার পলাশ গাছ রয়েছে। তার সঙ্গে অযোধ্যা পাহাড়ের এলাকা যুক্ত হলে তা ১০ লক্ষ ছাড়িয়ে যাবে।
পুরুলিয়া বনবিভাগের ডিএফও অঞ্জন গুহ বলছেন, "আবহাওয়া শুষ্ক, গরম হাওয়া না বইলে সেভাবে পলাশ ফোটে না। আসলে বসন্ত পঞ্চমী এবার এগিয়ে এসেছে। সেভাবে শীত না থাকলেও তার রেশ রয়েছে। আর পনেরো-কুড়ি দিন পর লাল পলাশে পুরুলিয়ার রূপ বদলে যাবে।" পুরুলিয়া শহরের পুরোহিত আদিত্য ঘোষালের বক্তব্য, "সরস্বতীর আরেক নাম পলাশপ্রিয়া। সেই পুজোয় পলাশ ছাড়া হয় কীভাবে? পুজো এগিয়ে আসায় পলাশ জোগাড়ে সমস্যা হচ্ছে জানি। কিন্তু পুজো আয়োজকদের বলে দিয়েছি পলাশফুল লাগবেই।" এবার রবি-সোম দুদিনই পুজো।
মল্লিকঘাট ফুলবাজার সহ সমগ্র রাজ্যে ঝুরো লাল গাঁদা ফুলের দাম ছিল এক কেজি ১০ টাকা। হলুদ গাঁদা কেজি প্রতি ২০ টাকা। কুড়িটি ফুল দিয়ে লাল গাঁদা মালা বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। ওই একই সংখ্যক ফুল দিয়ে হলুদ গাঁদা মালা বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়। রজনীগন্ধা কেজি প্রতি বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকায়। তবে গোলাপের দাম অনেকটাই সস্তা। ১০০ পিস গোলাপের দাম ১০০ টাকা। একটি পদ্ম ৫ টাকা। হাজারটি জবা ফুল বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। দোপাটির দাম কেজি প্রতি ৩০। ১ কেজি নীল অপরাজিতা মিলছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকাতেই।