অভ্রবরণ চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: সরকারি হোক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সকলের সাইন বোর্ডে এবার প্রতিষ্ঠানের নাম লিখতে হবে বাংলা ভাষায়। অন্য যে কোনও ভাষায় ওই প্রতিষ্ঠানের নাম লেখা থাকলেও, বাংলায় লেখাটা বাধ্যতামূলক। এ বিষয়ে শুক্রবার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে শিলিগুড়ি পুরনিগম। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে শহরের আমজনতা থেকে সমস্ত স্তরের ব্যবসায়িক সংগঠনগুলো। নির্দেশিকায় সমস্ত বেসরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, দোকান, বিপণন কেন্দ্র, শপিং মল, অফিস, রেস্তরাঁ, হোটেল, হাসপাতাল, ডায়গনস্টিক সেন্টারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলায় সাইন বোর্ড লেখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পয়লা বৈশাখের আগেই এই সিদ্ধান্ত লাগু করার নির্দেশ দিয়েছে পুরনিগম। এছাড়া কেন্দ্রীয় দপ্তরগুলোকেও এ বিষয় অনুরোধ করবে পুরনিগম।

শিলিগুড়ি পুরসভার বিজ্ঞপ্তি।
চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি মেয়র পারিষদের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে প্রস্তাব ওঠে, আলোচনাও হয়। এরপর ৫ মার্চ বোর্ড অফ কাউন্সিলরের বৈঠকে বিষয়টি পাস করা হয়। ২১ মার্চ বিজ্ঞপ্তি জারি করে পুরনিগম। যেখানে শহরের সাইন বোর্ড, হোর্ডিংয়ে বাংলা ভাষায় লেখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পুরনিগমের সমস্ত কার্যালয় ও শাখা কার্যালয়, বরো অফিসগুলোর সমস্ত সাইন বোর্ড বাংলায় লেখা হয়েছে। নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, শহরের সমস্ত সাইনবোর্ড, হোর্ডিংয়ে অন্য যে কোনও ভাষা থাকতেই পারে, তবে প্রথমে বাংলা ভাষায় লেখাটা বাধ্যতামূলক।
এই বিষয়ে শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব জানিয়েছেন, "অনেকদিন ধরেই পুরনিগমের ঘোষণা, খুশি সব মহল আমাদের এটা আলোচনা চলছিল। আমরা এটাকে বাস্তবায়িত করতে চাইছিলাম। আমরা বাংলায় থাকি। বাংলা ভাষাকে প্রাধান্য দিতে হবে। বাংলা ধ্রুপদী ভাষার সম্মান পেয়েছে। উত্তরবঙ্গের রাজধানী শিলিগুড়ি। এই ভাষার প্রসার ঘটাতে তাই এই পদক্ষেপ। অন্যান্য ভাষা চলুক। কিন্তু বাংলাকে বাধ্যতামূলক করেছি।" এই বিষয়ে বাম পরিষদীয় দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম বলেন, "পুরনিগমের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। এই সিদ্ধান্তকে কার্যকর করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ করবে পুরনিগম বলে আশা করি। পশ্চিমবঙ্গবাসী হিসাবে আমরা চাই, সব জায়গায় বাংলার ব্যবহার হোক।"
বিরোধী দলনেতা অমিত জৈনের বক্তব্য, "পুরনিগমের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। বাংলা ভাষার সঙ্গে অন্যান্য ভাষাও থাকুক। এতে কারও কোনও সমস্যা নেই।" আবার অধ্যাপক বিনয় বর্মনের কথায়, "খুব ভালো উদ্যোগ। পুরনিগমের এই সিদ্ধান্তে খুব খুশি। বাংলায় থেকে সব জায়গায় বাংলা ব্যবহার হবে এটাই তো স্বাভাবিক।"
এদিকে ইতিমধ্যেই বিধান মার্কেটের পক্ষ থেকে গোটা বাজারে মাইকিং করে বলে দেওয়া হয়েছে প্রত্যেক দোকানদারকে বাংলায় হোর্ডিং লিখতে হবে। এ বিষয়ে ফোসিনের (ফেডারেশন অফ চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি) সম্পাদক বিশ্বজিত দাস বলেন, "খুব ভালো সিদ্ধান্ত। আমরা পুরনিগমের পাশে আছি। বাংলাতে বাংলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত প্রতিটি শহরে।"