shono
Advertisement
Asansol

অবাধে নদী চুরি আসানসোলে! ২০০ ফুটের সিঙ্গারণ এখন মাত্র ১০

জলাজমি নিয়ে কোনও তথ্যই নেই পুরনিগমের কাছে।
Published By: Amit Kumar DasPosted: 04:36 PM Apr 29, 2025Updated: 04:36 PM Apr 29, 2025

চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: একের পর এক পুকুর ভরাট করে প্রোমোটারি রাজ। জমা পড়েছে বহু অভিযোগ। শুধু পুকুর চুরি নয়, নদী চুরিও হচ্ছে অবাধে। এককালে যে সিঙ্গারণ নদী ২০০ ফুট চওড়া ছিল তা কমতে কমতে দাঁড়িয়েছে ১০ ফুটে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর গ্রেপ্তার হয়েছেন জমি মাফিয়ারা। তারপরেও জলাজমি নিয়ে কোনও তথ্যই নেই পুরনিগমের কাছে।

Advertisement

আসানসোল পুরনিগমের ১০৬টি ওয়ার্ডে একটিও জলাজমি নিজস্ব নেই। ২০১৫ সালে জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ, পুরাতন আসানসোল, কুলটি পুরসভা নিয়ে গঠিত বৃহত্তর পুরনিগম। পুর এলাকা দিয়ে বয়ে গিয়েছে গারুই নদী। নদীর পাড় দখল করে গড়ে উঠেছে বসতি। অথচ ২০২২-এর নির্বাচনে শাসক দলের প্রথম ও মূল এজেন্ডা ছিল গারুই নদী সংস্কার ও জলাজমি উদ্ধার করা। দ্বিতীয় বোর্ড গঠনের তিন বছর পেরিয়ে গেলেও হয়নি গারুই সংস্কার, উদ্ধার হয়নি জলাজমি।
পুরনিগমের আধিকারিক অমিয় মুখোপাধ্যায় জানান, পুকুর নিয়ে তাঁদের কাছে কোনও তথ্য নেই। পুরনিগমের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার রাজেশ কুমার শ্রীবাস্তবের মুখেও একই কথা। তাহলে পুকুর ভরাট হলে কিভাবে বেআইনি কাজকে আটকানো হয়? কিংবা পুকুর সংস্কার করেন কিভাবে?

এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের দাবি, ১০৬ ওয়ার্ডের মধ্যে যেখানে যেখানে অভিযোগ আসে। সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়। পরিদর্শন হয় বিএলআরও দফতরের সাহায্য নিয়ে। অবৈধ কাজ হলে তা আটকে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, "পুরনিগমের ১০টি বরো এলাকা রয়েছে। এই দশটি বরোর মধ্যে ২ থেকে ৮ নম্বর বরো পর্যন্ত পুকুর ভরাটের অভিযোগ জমা পড়েছে। এফআইআর হয়েছে ১৫টির মতো। এইসব অভিযোগ জমা পড়েছে দ্বিতীয় বোর্ড গঠনের পর।" জামুড়িয়া ও কুলটি এই দুটি এলাকায় এখনও পর্যন্ত পুকুর ভরাটের সেভাবে অভিযোগ আসেনি। পুকুর ভরাটের সবথেকে বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে রানিগঞ্জ, উত্তর আসানসোলের রেলপার, দক্ষিণ আসানসোল জি টি রোড সংলগ্ন এলাকা, গড়াই রোড এলাকা, কালীপাহাড়ি ও বার্নপুর এলাকায়।

গত মার্চ মাসেই পুকুর ভরাট করে প্লটিং করে নির্মাণের অভিযোগ পেয়ে বুলডোজার চালায় পুরকর্তৃপক্ষ। ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে জলজমি ভরাট করে জ্যোতিনগর তৈরির কাজ চলছিল। নির্মাণ ভেঙে দেয় পুর কর্তৃপক্ষ। ২২ নম্বর ওয়ার্ডে কুমারপুর গ্রাম উন্নয়ন সমিতির ব্যানারে স্থানীয় বাসিন্দারা পুরনিগমে বিক্ষোভ দেখায়। গণ ডেপুটেশন জমা দেন। অভিযোগ, লোয়ার কুমারপুর এলাকায় পুকুর ভরাট করে প্রোমোটিং হচ্ছে। এমনকী আসানসোলের ধাদকা এলাকায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের অফিস সুদর্শন ভবন তৈরি হয়েছে। এই অভিযোগ তুলেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী।

পুকুর ভরাটের অভিযোগ রয়েছে খোদ মেয়রের ওয়ার্ডে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় কারখানা থেকে এলাকার একটি জলাধার ছাই দিয়ে ভরাটের অভিযোগ ওঠে। এই ওয়ার্ড থেকেই নির্বাচিত হয়েছেন বিধান উপাধ্যায়। রানিগঞ্জের ৯২ নম্বর ওয়ার্ডের বিশাল সাহেববাঁধ পুকুরের একাংশ ভরাট করে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ। এই রানিগঞ্জে ১২২ বিঘা রাজারবাঁধ ভরাট হয়েছে কয়েক বছর আগে। বিজেপি কাউন্সিলর তথা বিরোধী দলনেত্রী চৈতালি তেওয়ারির অভিযোগ, "রানিগঞ্জ সহ গোটা পুর এলাকায় বেআইনি নির্মাণের পেছনে মদত রয়েছে শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের। মদত রয়েছে একাংশ পুর ইঞ্জিনিয়ারদের। বিরোধীরা অভিযোগ করলে তবেই টনক নড়ে। নইলে পুকুর ভরাট করে প্রোমোটারি, মার্কেট কমপ্লেক্স পর্যন্ত হয়েছে। তবু জলাজমি রক্ষা করার তাগিদ নেই এই বোর্ডের।" মেয়র বিধান উপাধ্যায় বলেন, "অভিযোগ পেলেই তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অভিযোগ পেয়ে পুরনিগমের মূলভবন সহ বিভিন্ন বোরো অফিসের ২৪ জন ইঞ্জিনিয়ারকে একসঙ্গে বদলি করা হয়েছে। ৪ জমি মাফিয়া গ্রেফতার হয়েছে এই পুর বোর্ডের সময়।"

উল্লেখ্য ২০২২ সালে জমি দখল করে, পুকুর ভরাট করে বেআইনি নির্মাণের ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। জামুরিয়ায় জুড়ে শুরু হয়েছে সিঙ্গারণ নদী বাঁচাও আন্দোলন। আন্দোলনকারীদের মধ্যে সঞ্জয় হেমব্রম, মঙ্গল টুডুদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় জল কমিশনের দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে বলা হচ্ছে সারা রাজ্যের মধ্যে আসানসোলে সবচেয়ে দ্রুত জল স্তর নীচে নেমে যাচ্ছে। অথচ দিন দিন জামুড়িয়ার প্রাচীনতম সিঙ্গারণ নদী চুরি করে নিচ্ছে বেসরকারি ইস্পাত কারখানাগুলি। ২০০ ফুট চওড়া ছিল সিঙ্গারণ নদী। গত চার দশকে অবশ্য তা কমে ১০-১২ ফুটে নেমে এসেছে। কোথাও হয়তো সেটা আরও কম। বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্তেহারে প্রথম গুরুত্ব ছিল গারুই নদী সংস্কার। কিন্তু পুরবোর্ড গঠনের তিন বছর পরেও গারুই নদী সংস্কার হয়নি। উল্টে গারুইয়ের পাড় দখল। গড়ে উঠেছে নতুন নতুন বিল্ডি। মেয়র বলেন, "গারুই নদীর ডেমোগ্রাফিক সার্ভে হয়ে গেছে। গারুই সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে সৃষ্টিনগর থেকে। সিঙ্গারণ নদী নিয়ে কারখানা গুলিকে নোটিস করা হয়েছে। ৫০০ কোটি জরিমানা করা হয়েছে।"

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • শুধু পুকুর চুরি নয়, আসানসোলে নদীও চুরি হচ্ছে অবাধে।
  • এককালে যে সিঙ্গারণ নদী ২০০ ফুট চওড়া ছিল তা কমতে কমতে দাঁড়িয়েছে ১০ ফুটে।
  • জলাজমি নিয়ে কোনও তথ্যই নেই পুরনিগমের কাছে।
Advertisement