ধীমান রায়, কাটোয়া: বন্যা ও ভাঙন কবলিত অগ্রদ্বীপ অঞ্চলের বেশকিছু পরিবার নাগরিকত্ব প্রমাণে চ্যালেঞ্জের মুখে। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম নেই। শুনানিতে ডাক পড়বে ধরেই নিয়েছেন। এরপর নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে গিয়ে নাগরিকত্ব প্রমাণের কি নথি তাঁরা দেখাবেন, তাই নিয়ে চিন্তায়। কারণ বন্যা কবলিত এলাকায় বহু দরিদ্র পরিবারের গৃহস্থালি জিনিসপত্রের সঙ্গে জমি জায়গার নথিপত্র আগেই বানের জলে ভেসে গিয়েছে। এসআইআরে চিন্তায় ঘুম ছুটেছে বেশকিছু পরিবারের।
ভাগীরথীর নদী খণ্ডিত করেছে অগ্রদ্বীপ পঞ্চায়েত এলাকার ভূখণ্ডকে। একাংশ রয়েছে কাটোয়া এলাকা লাগোয়া। অন্য অংশটি যুক্ত নদিয়া জেলার মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে। অগ্রদ্বীপ অঞ্চলের মোট ১৮টি বুথের মধ্যে ৮টি কাটোয়ার দিক থেকে নদীর অপর পাড়ে। এই বুথগুলিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৬,৭৮৭। চারটি বুথ তীব্র ভাঙনপ্রবণ এলাকা বলে চিহ্নিত। অগ্রদ্বীপের ঘোষপাড়া লাগোয়া রাস্তা ও নদীতীরের প্রায় ১২০ মিটার অংশে ভয়ঙ্কর ভাঙন বেশি। বছরের প্রায় সারাদিনই কমবেশি শোনা যায় মাটি ধসে পড়ার ঝুপঝাপ শব্দ। গ্রামবাসীদের ভাষায়, 'এভাবেই সারাবছর গ্রামটাকে কামড়ে খাচ্ছে ভাগীরথী।' স্থানীয়দের দাবি, নদীভাঙনের জেরে বসতি বদলাতে হয়েছে। বানের জলে বাড়ির বহু জিনিসপত্রের সঙ্গে নথিপত্র ভেসে যাওয়াই এখন দুশ্চিন্তার কারণ। জানা গিয়েছে অগ্রদ্বীপের সরওয়ারি পাড়ার ৩৪ জন সহ এলাকার ৩৫-৩৬ টি পরিবারের নাম নেই ২০০২ সালের ভোটার তালিকায়। ইনুমারেশন ফর্ম জমা দিলেও তাঁদের মনে ভয়-কী দেখিয়ে প্রমাণ হবে নাগরিকত্ব?
গ্রামবাসী বিমলা বাগ, সুচিত্রা সর্দার, জহরলাল বাগ'রা বলেন, "২০০২ সালের বন্যায় সবটাই ভেসে গেছিল। তখনই বাড়িঘর-নথিপত্র হারাই। ১৯৯০ সালের আগ থেকেই ভোট দিচ্ছি। এখন আবার প্রমাণ করতে হবে-এই ভেবেই রাতে ঘুম হচ্ছে না। শুনানিতে ডাকার পর কি দেখিয়ে নাগরিকত্বের প্রমাণ দেব?" ৮০ বছরের বৃদ্ধা কনকলতা দাসের কথায়, "এদেশে জন্মেছি, বড় হয়েছি, সারাজীবন এই দেশে কাটল! তবু আবার প্রমাণ করতে হবে নাগরিকত্ব?" বৃদ্ধ খুদিরাম ঘোষ বলেন, "দু'-তিনবার বাড়ি বদলাতে হয়েছে। বন্যায় গাছের ডালে মাচা বেঁধে দিন কাটিয়েছি। বাক্সপ্যাঁটরা কিছুই থাকেনি। এখন জনশুনানিতে কী নথি দেখাব?"
বিএলও পার্বতী সর্দারের কথায়, "নাম নেই এমন পরিবারের সংখ্যা বেশ কয়েকটি। তাঁরা ফর্ম জমা দিয়েছেন। কমিশন যেভাবে নির্দেশ দেবে, সেভাবেই কাজ হবে।" মহকুমা শাসক অনির্বাণ বসুর আশ্বাস, "যাঁদের ২০০২ সালের তালিকায় নাম নেই, তাঁদের জনশুনানিতে ডাকা হবে। নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য ১৩টি উপায় রয়েছে। জমির নথি না থাকলেও সমস্যা নেই। হেল্প ডেস্কে এলে আমরা সব বুঝিয়ে দেব। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।"
