টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: পরিবারিক অশান্তির পরেই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যান বাবা। তাঁকে খুঁজতে বেরিয়ে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল ছেলের। বাইকের সঙ্গে ডাম্পারের মুখোমুখি সংঘর্ষে মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত ব্যক্তির নাম বুধন মণ্ডল। শুধু তিনিই নয়, দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তাঁর এক সঙ্গীরও। ঘটনার গুরুতর আহত আরও এক। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে ছাতনার ঝাঁটিপাহাড়ি আউটপোস্ট এলাকার তিলনা গ্রামে। ইতিমধ্যে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। কীভাবে এই ঘটনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে এলাকায়।
পুরুলিয়ার সাঁতুড়ির ঘোড়ামুর্গা গ্রামের বাসিন্দা দলু মণ্ডল। পারিবারিক অশান্তির জেরে বুধবার রাতে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যান তিনি। দীর্ঘ সময় ধরে খোঁজ না মেলায় বাবাকে খুঁজতে বের হন ছেলে বুধন মণ্ডল। দুই বন্ধু মডিরাম ঘোষাল আর বাপি ঘোষকে নিয়ে বাইকে বের হন তিনি। উদ্দেশ্য একটাই, যেভাবেই হোক বাবাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা। কেউ জানত না, ওই রাতের যাত্রাই হয়ে উঠবে বুধনের জীবনের শেষযাত্রা!
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাতে বাবার খোঁজে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাঁকুড়া (Bankura)–শালতোড়া রাজ্য সড়ক ধরে ছাতনার ঝাঁটিপাহাড়ি আউটপোস্ট এলাকার তিলনা গ্রামে পৌঁছে যান বুধন আর তাঁর দুই বন্ধু। শীতকালের রাত। চারপাশ নিস্তব্ধ। আচমকাই অন্ধকারের মধ্যে থেকে একটি ডাম্পার ধেয়ে আসে। মুহূর্তের মধ্যে সব শেষ! বিকট শব্দে ভেঙে যায় রাতের নীরবতা। বাইক ছিটকে পড়ে রাস্তার ধারে। ওই মোটর বাইকের তিনজনই রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন।
ছুটে আসেন স্থানীয় মানুষজন। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। রক্তাক্ত অবস্থায় তিনজনকে প্রথমে ছাতনা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে, পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় বাঁকুড়া (Bankura) সম্মিলনী মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়। সেখানেই চিকিৎসকরা বুধন মণ্ডল এবং মডিরাম ঘোষালকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বাপি ঘোষ।
ঘটনার খবর পৌঁছাতেই বদলে যায় ঘোড়ামুর্গা গ্রামের চেহারা! যে ছেলে রাতে বাবাকে খুঁজতে বেরিয়েছিল, সকালে তার মৃত্যুর খবর পৌঁছতেই স্তব্ধতা নেমে আসে গোটা পাড়ায়। ভাই সদানন্দ মণ্ডল বলেন, “বাড়ির ঝামেলার জন্য বাবা বেরিয়ে গিয়েছিল। দাদা, বাবাকে খুঁজে আনতেই গিয়েছিল, কিন্তু কেউ ভাবতেই পারিনি আর ফিরবে না।” ঘটনার পর প্রতিবেশীদের চোখেও জল! কারও কথায়, “বাবাকে বাঁচাতে বেরিয়েছিল ছেলেটা। শেষ পর্যন্ত ছেলেটাকেই হারাতে হল।”
