সৌরভ মাজি, বর্ধমান: স্রেফ সচেতনতার অভাব। নিজের অজান্তেই শরীরে মারণরোগ বয়ে বেড়াচ্ছে, এই মানুষের সংখ্যা কম নয়। আর যাঁরা নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হতে হচ্ছে পরিবারের লোকেদের। রাজ্যে লাফিয়ে বাড়ছে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যাও। এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করছেন পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের রামনগরের বাসিন্দা সদাই ফকির। ছাত্রছাত্রীদের কাছে তিনি ১ টাকার মাস্টারমশাই। প্রচারের কোনও লোভ নেই। নিঃশব্দে থ্যালাসেমিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে চলেছেন ফকির মাস্টার।
[কনকনে ঠান্ডায় কাতরাচ্ছেন অসুস্থ বৃদ্ধ, মানবিকতার নজির যুবকের]
সরকার থ্যালাসেমিয়া নিয়ে প্রচার চালালেও গ্রামের লোকেদের কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। বিয়ের আগে পাত্রীর রূপ, বংশ পরিচয়ই গুরুত্বপূর্ণ। আর পাত্রের আয় ঠিক থাকলে তো সোনায় সোহাগা।কিন্তু কার রক্তে কোন রোগের জীবাণু আছে, তা টেরই পাওয়া যায় না। যখন হুঁশ ফেরে, দেহে তখন থ্যালাসেমিয়ার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। বংশে কারও থাকা মানে আর রক্ষা নেই। মারণরোগের থাবায় হতে পারে মৃত্যুও।এই থ্যালাসেমিয়া মুক্ত সমাজের লড়াইয়ে কোমর বেঁধে নেমে পড়েন ফকির মাস্টার। ১ টাকা মাস্টারমশাই নাম দিয়েছে ছাত্রছাত্রীরা। আসল নাম সুজিত চট্টোপাধ্যায়। রামনগর উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন তিনি। ২০০৪ সালে অবসর নেন । তারপর গ্রামেই পাঠশালা চালু করেন সুজিতবাবু। মাত্র ১ টাকা পারিশ্রমিকে দশম থেকে স্নাতক পর্যন্ত ছেলে-মেয়েদের পড়ান অবসরপ্রাপ্ত ওই স্কুল শিক্ষক। আর ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে করেন থ্যালাসেমিয়া ক্যাম্প, চলে রক্তপরীক্ষাও।
সদাই ফকির জানান, প্রথমে কেউ রক্ত পরীক্ষা করাতে চাইত না। লাগাতার প্রচারে সচেতনতা বেড়েছে। সম্প্রতি আউশগ্রামে রামনগরে ১৫০ জনের রক্তপরীক্ষা করেছে সদাই ফকির ও তাঁর দলবল। থ্যালাসেমিয়া জীবাণু পাওয়া গিয়েছে ১৪ জনের রক্তের। সকলের চিকিৎসা চলছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। তাঁর মতে, আউশগ্রামের রামনগরে এক শিশু থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল। চিকিৎসার খরচ তো ছিলই। ডায়ালিসিস করানোর সময় ছোট শরীরটা নীল হয়ে যেত। চোখের সামনে এই ঘটনা দেখার পরই থ্যালাসেমিয়ার জন্য কাজ শুরু করি।
[শীতের পথে কাঁটা হতে পারে নিম্নচাপ, বৃষ্টির সম্ভাবনা]
The post থ্যালাসেমিয়া মুক্ত সমাজ গড়তে লড়ছেন ‘এক টাকার মাস্টারমশাই’ appeared first on Sangbad Pratidin.
