সৌরভ মাজি, বর্ধমান: রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মৎস্য দফতরের চাকরির নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়েও শেষরক্ষা হল না। বর্ধমান থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী তথা তৃণমূল নেতা সীতারাম মুখোপাধ্যায়কে। বৃহস্পতিবার ধৃতকে বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল অবশ্য জানিয়েছে, অন্যায় করলে কেউ ছাড় পাবে না। তবে এই ঘটনাই এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট বন্ধ করে পড়ুয়াদের পেটানোর অভিযোগেও নাম জড়িয়েছিল সীতারামের।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২২ ডিসেম্বর বর্ধমান থানায় সীতারামের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন বীরভূমের রামপুরহাট থানার নারায়ণপুর গ্রামের রিঙ্কু দাস নামে এক যুবক। তাঁর অভিযোগ, পড়াশোনা করে বেকার ঘুরছিলেন। সেই সময় সীতারামের সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। চাকরির খোঁজ করছেন জানতে পেরে সীতারাম তাঁকে রাজনৈতিক প্রভাব ও উপর মহলের সঙ্গে যোগাযোগের কথা জানিয়ে চাকরির প্রতিশ্রুতি দেন বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, রাজ্য সরকারের মৎস্য দফতরে চাকরি করে দেবে বলেও জানিয়েছিলেন রিঙ্কুকে। কিন্তু তার জন্য ১২ লক্ষ টাকা লাগবে বলে সীতারাম তাঁকে জানান। সরকারি চাকরি পাওয়ার আশায় সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান রিঙ্কু। তার জন্য অগ্রিম ৫ লক্ষ টাকা দেন। তার পর রিঙ্কুকে বেশ কিছু কাগজপত্রে সই করিয়ে নেওয়া নেওয়া হয়।
[আরও পড়ুন : রাতভর মদ-মাংস খেয়ে অফিসে তাণ্ডব BLRO’র, ক্ষোভে ফেটে পড়লেন স্থানীয়রা]
রিঙ্কু পুলিশে অভিযোগে জানিয়েছেন, এর কিছুদিন পরে তাঁকে স্টেট ফিশারিজ ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডে চাকরির নিয়োগপত্র পাঠানো হয়। যা নিয়ে কাজে যোগ দিতে গিয়ে রিঙ্কু জানতে পারেন তা ভুয়ো। তারপরই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন রিঙ্কু। বর্ধমান থানার পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, সীতারাম রিঙ্কুকে একটি চেক দেয় টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য। সেই চেক তিনি ব্যাঙ্কে জমাও দেন। কিন্তু অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় সেই চেক বাউন্স করে। পুলিশের তরফে সেই সংক্রান্ত নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, বর্ধমান শহরের খাজা আনোয়ার বেড় এলাকায় বাড়ি সীতারামের। বুধবার সন্ধ্যায় শহরের আলমগঞ্জ রোডের প্রান্তিক বাজার এলাকা থেকে সীতারামকে ধরা হয়। পুলিশের তরফে আদালতে দাবি করা হয়েছে, ধৃত প্রতারণায় জড়িত তার পর্যাপ্ত প্রমাণ ও নথি রয়েছে।
[আরও পড়ুন : মিড ডে মিলের চাল-ডাল চুরি করে বিক্রি! ICDS কর্মীকে বেধড়ক মার স্থানীয়দের]
সীতারাম তৃণমূলের কর্মী সংগঠনের অন্যতম নেতা। রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা বন্ধু সংগঠনের এক সময় রাজ্যস্তরের পদেও ছিলেন। বছরখানেক আগে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরগ্রহণ করেন তিনি। তৃণমূলের কংগ্রেসের বিভিন্ন সভা সমিতিতে মঞ্চেও থাকতেন তিনি। বুধবার বিকেলেও শহরের তৃণমূলের এক কর্মসূচিতে তাঁকে মঞ্চে দেখা গিয়েছে। সামনের পুরভোটে তৃণমূলের টিকিট পাওয়ার দৌড়েও তিনি ছিলেন বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর দেবু টুডু এই প্রসঙ্গে বলেন, “এখন তো সবাই তৃণমূল। আর অন্যায় করলে কেউ ছাড় পাবে না। আইন আইনের পথে চলবে।” বছর চারেক আগে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা ফলবিভ্রাট ও বিভিন্ন দাবিতে পড়ুয়ারা আন্দোলন করছিল। তৎকালীন উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকারকে রাত পর্যন্ত ঘেরাও করে রাখেন পড়ুয়ারা। সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট বন্ধ করে ও আলো নিভিয়ে দিয়ে বহিরাগতদের নিয়ে এসে আন্দোলনকারীদের পেটানো হয়েছিল। সেই ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত হিসেবে নাম জড়িয়েছিল সীতারামের।
The post চাকরির নামে পাঁচ লাখ টাকার প্রতারণা, গ্রেপ্তার তৃণমূল নেতা appeared first on Sangbad Pratidin.
