দেব গোস্বামী, বোলপুর: সেই মেঠো সুর, সেই বাউলের একতারা, সেই একচালা দোকানে হাতে বোনা সামগ্রীর সম্ভার। পাঁচ বছর পর ফিরছে সেই ঐতিহ্যের পৌষমেলা। শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট ও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের আয়োজনে এবার বীরভূমে পৌষমেলা হতে চলেছে। বুধবার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে এনিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানালেন জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ। তবে এই মেলা আয়োজনের জন্য জেলা ও রাজ্য প্রশাসনের সাহায্য চাই বলে জানিয়েছেন তিনি। আর এই খবরে খুশি শান্তিনিকেতনের স্থানীয় বাসিন্দা, আশ্রমিকরা। মেলার ব্লু-প্রিন্ট ঠিক করে সর্বস্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর, জানিয়েছেন অতিগ ঘোষ।
২০১৯ সালে অর্থাৎ করোনাকালের ঠিক আগে শেষবারের মতো বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলার আয়োজন করেছিল। তার পর করোনাকালে এবং পরবর্তী কয়েক বছর শান্তিনিকেতনে পৌষমেলার চেনা ছবিটা বদলে গিয়েছিল। মিশ্র সংস্কৃতির একটা প্রভাব দেখা গিয়েছিল। গতবছর রাজ্য সরকারের উদ্যোগে পরিচিত মেলার মাঠ অর্থাৎ পূর্বপল্লিতে পৌষমেলা করলেও বিশ্বভারতী বা শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের কোনও ভূমিকা ছিল না। পূর্বপল্লির মাঠ রীতিমতো ভাড়া করে সাতের বদলে চারদিন ধরে মেলা হয়।
গত ৭ নভেম্বর বিশ্বভারতীর আয়োজনে পূর্বপল্লির মাঠে পৌষমেলা করার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন বোলপুরের ব্যবসায়ী সমিতি ও কবিগুরু হস্তশিল্পী উন্নয়ন সমিতি। বিশ্বভারতী সূত্রে খবর ছিল, উপাচার্য, প্রশাসনিক আধিকারিক, কর্মীমণ্ডলীর যৌথ বৈঠকে এনিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তার পর বিশ্বভারতী সর্বোচ্চ রীতি নির্ধারক কমিটি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পৌষমেলার আয়োজন করতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট। বুধবার সেই বৈঠক ছিল বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সভাকক্ষে। সেখানে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়, এবছর ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা হবে বিশ্বভারতী ও ট্রাস্টের হাত ধরেই। বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ জানান,"এবছর শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট ও বিশ্বভারতীর উদ্যোগেই হতে চলেছে ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা। সেক্ষেত্রে রাজ্য সরকার ও জেলা প্রশাসনের পূর্ণ সহযোগিতা প্রয়োজন। শীঘ্রই জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের ডিড অনুযায়ী ৭ই পৌষ মেলার আয়োজন হবে পূর্বপল্লীর মাঠেই।" তবে তার জন্য জেলা ও রাজ্য প্রশাসনের সহায়তা প্রয়োজন। এনিয়ে পৃথক বৈঠক হবে।
জেলার স্থানীয় অর্থনীতিতে মেলার গুরুত্ব আজও অপরিসীম। এদিনের বৈঠকের পর শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সম্পাদক অনিল কোনার জানান, "দীর্ঘ বৈঠকের পর সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবছর পৌষ মেলা করবে শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট সহযোগিতা করবে বিশ্বভারতী। তবে পর্যাপ্ত পানীয় জল, বিদ্যুৎ, অস্থায়ী শৌচাগারের ব্যবস্থা সহ নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেও রাজ্য সরকার ও জেলা প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হবে।" হস্তশিল্প সমিতির সম্পাদক আমিনুল হুদা জানান," মেলার সঙ্গেই গ্রামীণ হস্তশিল্প ও হস্তশিল্পীদের সঙ্গে বিশ্বভারতীর আর্থিক মেলবন্ধন অটুট রয়েছে। আমরা সর্বতোভাবে সহযোগিতা করব শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট ও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে।" ব্যবসায়ী সমিতির সুব্রত ভকত ও সুনীল সিংহ জানান, "পূর্বপল্লীর মাঠে ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা হতে চলেছে, এমন খবর ছড়িয়ে পড়তেই ব্যবসায়ী মহলে আনন্দিত সকলেই। সদর্থক ভূমিকা পালন করে দ্রুত প্রশাসনিক বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুক বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।"