shono
Advertisement
North Bengal

১০ ফুট নেমেছে জলস্তর! গরম বাড়তেই তীব্র হচ্ছে উত্তরবঙ্গের পিপাসা

শীতে বৃষ্টি না মেলায় উত্তরের ভূগর্ভস্থ জলাধারে বিপদ বেড়েছে।
Published By: Paramita PaulPosted: 07:04 PM Mar 25, 2025Updated: 07:11 PM Mar 25, 2025

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: শীতে বৃষ্টি না মেলায় উত্তরের ভূগর্ভস্থ জলাধারে বিপদ বেড়েছে। 'রিচার্জ' অর্থাৎ নতুন জল সঞ্চয়ের সুযোগ মেলেনি। যদিও এই সময়কালে পাম্প করে যথেচ্ছ জল উত্তোলন এবং জলের বেহিসেবি ব্যবহার কমেনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এরই পরিণতিতে জলস্তর অন্তত ১০ ফুট নেমে যাওয়ায় শুকিয়েছে কুয়ো, পুকুর। বিকল হতে শুরু করেছে নলকূপ। ক্রমশ তীব্র হচ্ছে পানীয় জলকষ্ট।

Advertisement

গরমের দাপট বাড়তে ভারত-নেপাল সীমান্তের মেচি নদী থেকে অসম সংলগ্ন সংকোশ পর্যন্ত তরাই-ডুয়ার্স জুড়ে পানীয় জলকষ্ট শুরু হয়েছে। তিরতির করে বইছে তিস্তা, জলঢাকা, তোর্সা, কালজানি। হাঁটু জল নেই অনেক ছোট নদীতে। ঝোরাগুলো শুকিয়ে কাঠ হয়েছে। শুকিয়েছে কুয়ো। বিকল হতে শুরু করেছে অধিকাংশ নলকূপ। শহর এলাকার ভুক্তভোগী বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বাড়ির পাম্পে দশ-পনেরো মিনিটের বেশি জল উঠছে না। এই মুহূর্তে প্রত্যেকের ভরসা হয়েছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের টাইম কলের জল অথবা কেনা জল। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিভিন্ন এলাকায় টাইম কলে সুতোর মতো জল বের হওয়ায় ঝামেলা বেড়েই চলেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শিলিগুড়ি, ময়নাগুড়ি, মেটেলি, চালসা, ওদলাবাড়ি, জয়গাঁ-সহ গ্রাম-শহরের বিভিন্ন এলাকায় ট্যাঙ্কে জল সরবরাহ শুরু হয়েছে।  যেখানে পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা এখনও হয়নি সেখানে জলবাহিত রোগের শঙ্কা বাড়ছে।

কেন জলকষ্ট এতোটা তীব্র হতে শুরু করেছে?
আবহাওয়া দপ্তরের বিশেষজ্ঞ এবং ভূগোলের গবেষকরা জানিয়েছেন, ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণ নির্ভর করে বৃষ্টির উপরে। বৃষ্টির জল ভূগর্ভে পৌঁছে সঞ্চিত হওয়াকে বলা হয় 'রিচার্জ'। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ঠিক থাকলে ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন করলেও সমস্যা হয় না। কারণ, সেখানে বৃষ্টির জল পৌঁছে ঘাটতি পূরণ করে। ময়নাগুড়ি কলেজের ভূগোল বিভাগের প্রধান তথা আবহাওয়া গবেষক মধুসূদন কর্মকার বলেন, "উত্তরবঙ্গে শীতকালীন বৃষ্টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু গত বছর অক্টোবর-নভেম্বর থেকে এবার মার্চের শুরু পর্যন্ত মাঝারি মাপের বৃষ্টি হয়নি। বিক্ষিপ্তভাবে ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হলেও কাজে লাগেনি। গ্রীষ্মে কালবৈশাখী কমেছে। ওই কারণে ভূ-গর্ভস্থ জলস্তরে রিচার্জ হয়নি। ক্রমশ নেমেছে।"

ডুয়ার্স এবং তরাইয়ের বিস্তীর্ণ এলাকার  স্যালো এবং গভীর নলকূপের গভীরতার পরিসংখ্যান থেকে গবেষকরা নিশ্চিত ভূগর্ভস্থ জলস্তর অন্তত ৩ মিটার অর্থাৎ ১০ ফুট নেমেছে। ওই তথ্য যে অমূলক নয় তার প্রমাণ মিলেছে চা বাগান কর্তৃপক্ষের বক্তব্য থেকে। ক্ষুদ্র চা চাষি সংগঠনের অন্যতম কর্তা রজত কার্জি বলেন, "কয়েক মাস আগেও ৮০ ফুট থেকে ৯০ ফুট গভীর নলকূপ থেকে জল মিলেছে। এখন ৯০ ফুট থেকে ১০০ ফুট গভীর থেকে জল তুলতে হচ্ছে। অনেক জায়গায় ১১০ ফুটের বেশি গভীরে পাইপ বসাতে হচ্ছে।" ভূগোলের গবেষকরা জানিয়েছেন একে বৃষ্টি নেই। ভূগর্ভস্থ জল ভাণ্ডারে টান ধরেছে। তার উপর ক্রমশ পাইপের গভীরতা বাড়িয়ে যথেচ্ছভাবে জল উত্তোলনের পরিনতিতে দ্রুত জলস্তর নামতে শুরু করায় জলকষ্ট তীব্র হয়েছে। শহরের একাধিক ওয়ার্ডে বহুতল আবাসনের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জলের উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে গভীর নলকূপ।

স্থানীয় প্রশাসনের নিয়মকানুনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, কিছু অদৃশ্য প্রশাসনিক সমর্থন পেয়ে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে নির্বিচারে বসানো হচ্ছে নলকূপ। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পানীয় জলের বোতলিং প্ল্যান্ট, যা ভূগর্ভস্থ জলস্তরকে আরও তলানিতে ঠেলে দিচ্ছে। পরিণতিতে একদিকে যেমন কুয়ো, পুকুর শুকিয়েছে। নলকূপে জল উঠছে না। অন্যদিকে বরফগলা জল কমতে নদী, ঝোরা শুকিয়ে যাওয়ায় বিপদ গর্জেছে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান সুবীর সরকার বলেন, "ভূগর্ভস্থ জলের বেহিসেবি ব্যবহার। লাগামছাড়া অপচয় বন্ধ করতে না পারলে সমস্যা আরও জটিল হবে।"

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • শীতে বৃষ্টি না মেলায় উত্তরের ভূগর্ভস্থ জলাধারে বিপদ বেড়েছে।
  • 'রিচার্জ' অর্থাৎ নতুন জল সঞ্চয়ের সুযোগ মেলেনি।
  • যদিও এই সময়কালে পাম্প করে যথেচ্ছ জল উত্তোলন এবং জলের বেহিসেবি ব্যবহার কমেনি।
Advertisement