দীপঙ্কর মণ্ডল: অধ্যাপকদের সুখের দিন কিছুটা ম্লান হতে চলেছে। সপ্তাহে দু’দিনের জায়গায় এবার শুধুমাত্র রবিবারই ছুটি বহাল রাখা হতে পারে। বামফ্রন্ট আমলে রাজ্যের কলেজ শিক্ষকদের প্রস্তুতি ছুটি (প্রিপারেটরি লিভ) নামে সপ্তাহে একদিন বাড়তি ‘অফ ডে’ দেওয়া শুরু হয়। কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে পাঠাগারে পড়াশোনা, গবেষণা কিংবা ল্যাবরেটরিতে চর্চার জন্য এই অতিরিক্ত ছুটি। যা ‘পি লিভ’ নামে পরিচিত। কলেজ অধ্যক্ষদের একটি অংশ দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, ‘পি লিভ’ নিয়ে শিক্ষকরা সঠিক কাজে লাগাচ্ছেন না। নিজেদের ব্যক্তিগত কাজেও ব্যবহৃত হচ্ছে এই ছুটি। উচ্চশিক্ষা দপ্তরেও এই বিষয়ে অভিযোগ জমা হতে থাকে। রাজ্য সরকার এই অতিরিক্ত ছুটি বাতিল বিষয়ে এখনও নির্দেশিকা জারি করেনি। তবে সূত্রের খবর, বেশ কিছুদিন ধরেই কলেজ শিক্ষকদের ‘পি লিভ’ বাতিল নিয়ে চর্চা করছেন উচ্চশিক্ষা দপ্তরের কর্তারা। বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথাতেও সেই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে।
উচ্চশিক্ষা সংসদের রিভিউ বৈঠকে এদিন উপাচার্য এবং কলেজ অধ্যক্ষদের ডাকা হয়েছিল। সল্টলেকে সেই আলোচনায় শিক্ষামন্ত্রী নিজেও ছিলেন। অধ্যক্ষরা আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, স্নাতকস্তরে আগে বছরে একটি করে পরীক্ষা হত। ১+১+১ পদ্ধতি বদলে এখন সিবিসিএস চালু হয়েছে। সেমেস্টার পদ্ধতিতে এখন বছরে দু’টি করে পরীক্ষা। এর ফলে অবধারিতভাবে শিক্ষণ দিবস কমে গিয়েছে। কিছু বিষয়ে সিলেবাস শেষ হচ্ছে না। এহেন পরিস্থিতিতে কলেজে শিক্ষকদের বেশি সময় দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। পার্থবাবু এদিন বলেন, “আমি উত্তরবঙ্গে গিয়ে উপাচার্য এবং কলেজ অধ্যক্ষদের নিয়ে বৈঠক করে এলাম। কলেজ শিক্ষকরা অনেকে দৈনিক মাত্র ৩-৪ ঘণ্টা করে সময় দিচ্ছেন বলে অভিযোগ আসছে। আরও বেশি সময় দিতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের আরও উৎকর্ষের লক্ষ্যে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।” এদিন বৈঠক শেষে শিক্ষকদের বাড়তি ছুটি নিয়েও মুখ খোলেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, “পি লিভ-সহ এদিন বিভিন্ন ইস্যুতে কথা হয়েছে। আমি সব শুনেছি। আমরা কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি। যাঁর যতটা সময় পড়ানোর কথা তত সময় পড়ালে পড়ুয়ারা উপকৃত হবে।”
[আরও পড়ুন: ই-মেল হ্যাক করে কোটি টাকার উপর জালিয়াতি, একাধিক অভিযোগ দায়ের লালবাজারে]
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি আয়োগ (ইউজিসি) ১৯৮৬ সালে পি লিভ চালু করে। এ রাজ্যে ১৯৯৮ সালে তা কার্যকর হয়। সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস সরকার পি লিভ প্রসঙ্গে বলেন, “সবপক্ষের সঙ্গে অনেক আলোচনার পর প্রস্তুতি ছুটি চালু হয়েছিল। কলেজ সপ্তাহে ছয়দিন খোলা থাকা উচিত। তবে শিক্ষকদের গবেষণা এবং পড়াশোনার জন্য পি লিভ দরকারি।” শিক্ষকদের সংগঠন করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে মাঝেমধ্যে অভিযোগ ওঠে। সে প্রসঙ্গে পার্থবাবু বলেন, ডান বাম বা অতিবাম যে মতাদর্শই হোক না কেন, শিক্ষার উৎকর্ষে কেউ সংগঠন করলে বাধা দেওয়া যাবে না। কিন্তু তাই বলে শিক্ষকরা যখন ইচ্ছে আসবেন এবং চলে যাবেন, তা ঠিক নয়।
The post উচ্চশিক্ষা দপ্তরে অভিযোগের জের, কমতে পারে অধ্যাপকদের ছুটির দিন appeared first on Sangbad Pratidin.
