অরূপ বসাক, মালবাজার: মোটা অঙ্কের মাইনের চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। কারণ একটাই। মা’কে নিয়ে তীর্থ করতে চান, মায়েরই ইচ্ছে পূরণের জন্য। ২ বছর আগে কর্ণাটকের মাইসুরু থেকে যাত্রা শুরু করে যুবক দক্ষিণামূর্তি কৃষ্ণকুমার এসে পৌঁছলেন বঙ্গে। ডুয়ার্সের মন্দিরগুলি ঘুরে দেখে উচ্ছ্বসিত মা-ছেলে। এরই মাঝে সংবাদ প্রতিদিনের প্রতিনিধির মুখোমুখি হলেন কৃষ্ণকুমার। শোনালেন নিজের যাত্রার কাহিনি।
আজ থেকে বছর কুড়ি আগে বাবা দিয়েছিলেন একটি স্কুটার। তাতে সওয়ার হয়েই ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি মা চূড়ারত্না দেবীকে নিয়ে কৃষ্ণকুমার যাত্রা শুরু করেন মাইসোরের বাড়ি থেকে। বিভিন্ন রাজ্য পেরিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি তাঁরা পৌঁছন মালবাজার মহকুমার ওদলাবাড়িতে, বুয়া প্রসাদের বাড়ি। গত ২৫ মাস ধরে স্কুটারের পিছনে মা’কে বসিয়ে মোট ৫২০৩২ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে এসেছেন। জানান, ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে তাঁর বাবা দক্ষিণামূর্তির মৃত্যু হয়েছে। তারপর থেকে সঙ্গী বলতে শুধু মা। কৃষ্ণকুমার একটি বড়সড় কর্পোরেট সংস্থায় টিম লিডারের চাকরি করতেন। বর্তমানে তাঁর বয়স ৪১ বছর। মা চূড়ারত্না দেবী সত্তরের কোঠায়। তাতে কী? তীর্থদর্শনের ইচ্ছার তো কোনও বয়স হয় না।
[আরও পড়ুন: বারাসত বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে রাজ্যপাল, নির্বিঘ্নেই শেষ হল অনুষ্ঠান]
কৃষ্ণকুমার বলছেন, “মা তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় রান্নাঘরেই কাটিয়েছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাড়ির কাজ করতেন তিনি। সংসারের বাইরে কিছু দেখার সময় একদমই ছিল না তাঁর। তাই দর্শনীয় স্থানগুলি তো দূরের কথা, বাড়ির আশেপাশে মন্দিরগুলিও দেখে ওঠা হয়নি মায়ের।” এসবের পর একটা সময়ে মায়ের ইচ্ছাপূরণর জন্য ছেলে চাকরি ছেড়ে দেন। মাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন সারা ভারত দর্শনে। মা’কে জিজ্ঞাসা করে নেয়, দেশের কোন তীর্থ স্থানগুলিতে তিনি যেতে চান। মা তাঁকে জানান, আশেপাশের মন্দিরগুলি দেখলেই যথেষ্ট। নাম করা তীর্থ স্থানগুলি এই বয়সে আর দেখার শক্তি নেই। মায়ের এই আক্ষেপের কথা শুনে ছেলে কৃষ্ণকুমারের বিবেক দংশন হয়। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, মা’কে স্কুটারে চাপিয়ে দেশের তীর্থস্থান ভ্রমণে নিয়ে যাবে।
[আরও পড়ুন: হলদিয়া কাণ্ডে ধৃত সাদ্দাম শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ, ছবি প্রকাশ করে দাবি দিলীপের]
কৃষ্ণকুমার বলছেন যে তিনি বাবা-মা’র একমাত্র সন্তান। আর এটা তার বাবার দেওয়া গিফট। এটা সঙ্গে থাকলে তাঁদের মনে হয়, পুরো পরিবার একসঙ্গে আছে। তিনি আরও বলেন, “বাবা-মা আসলে কথা বলা ভগবান। আমার মনে হয় প্রতিটি সন্তান দিনে অন্তত ৩০ মিনিট তাদের মা-বাবাকে সময় দেওয়া উচিত। বাবা-মা বেঁচে থাকতে, তাঁদের সেবা করাই আসল কাজ। তাঁরা বেঁচে থাকতে তাঁদের জন্য কিছু না করে, তাঁদের মৃত্যুর পর ঘটা করে শ্রাদ্ধ করে হাজারও লোক খাইয়ে সকাল বিকেল ছবিতে মালা দেন। তা ঠিক নয়।” দক্ষিণামূর্তি কৃষ্ণকুমারকে দেখে অনুপ্রাণিত হলেন অনেকেই। সকলেই একবাক্যে মেনে নিলেন, সন্তান এমনই হওয়া উচিত।
The post সঙ্গী স্কুটার, চাকরি ছেড়ে মা’কে নিয়ে ২ বছর ধরে ভারতভ্রমণ কর্ণাটকের যুবকের appeared first on Sangbad Pratidin.
