মণিশংকর চৌধুরি, ডিব্রুগড়: জেরাইগাঁও। জায়গাটা ছোট। অথচ, এর নাম শুনলে অসমের একটা অংশ ভয়ে কাঁপে। আবার একাংশ জায়গাটিকে সমীহও করে। আসলে, এখানেই অসমের কুখ্যাত বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফা প্রধান পরেশ বড়ুয়ার বাড়ি।
[আরও পড়ুন: সরকার গঠনে নগণ্য হয়েও গণতন্ত্রের উৎসবে উৎসাহী অসম-চিনা সম্প্রদায়]
তিনসুকিয়া ৩৭ নং জাতীয় সড়ক ধরে ডিব্রুগড়ের দিকে মোটামুটি ১০-১২ কিলোমিটার যেতে হবে। তারপর জাতীয় সড়ক ঘুরে গ্রাম্য পথে। রাস্তার একপাশে চা বাগান অন্যপাশে সারি সারি সুপারি গাছ। না, আধুনিকতার ছোঁয়া এখনও সে অর্থে লাগেনি। দেখে বোঝার উপায় নেই, যে রাত পোহালেই এখানে ভোট। কোনও দলের ব্যানার-পোস্টার বা দেওয়াল লিখন কোনওটিই সেভাবে দেখা গেল না। ভোটের আগে প্রত্যাশিতভাবেই বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। জেরাইগাঁও-এর অদূরেই একটি সেনা-চৌকি আছে। রাস্তায় আসার পথে দেখছিলাম অনেকগুলি সেনা কনভয় যাচ্ছে। আসলে যতই নিরুদ্দেশ থাক, পরেশ বড়ুয়ার নামটাই আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য যথেষ্ট।
গ্রামে ঢুকেও ছবিটি একই। পুরনো একচালা বাঁশের বাড়িই বেশি। দোতলা বাড়ি বড় বেশি চোখে পড়ল না। খোঁজ খবর করে কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছানো গেল। একটা অসম-টাইপ বাড়ি। গেটের সামনে কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষীও রয়েছেন। গেটে গিয়ে নক করতেই একজন বেরিয়ে এলেন। কী উদ্দেশে এসেছি বলতেই, আমার আইডি কার্ড দেখতে চাইলেন। কার্ডটি হাতে নিয়েই ভিতরে ঢুকে গেলেন ওই ব্যক্তি। ফিরলেন মিনিট তিনেক পরে। ভিতরে যাওয়ার সবুজ সংকেত মিলেছে। ভিতরে ঢুকেই দেখলাম উলফা প্রধান পরেশ বড়ুয়ার একটি বড় ছবি টাঙানো রয়েছে। বসার সঙ্গে সঙ্গেই ভিতর থেকে সাধাসিধা এক ভদ্রলোক এসে বসলেন। বুঝলাম ইনিই পরেশ বড়ুয়ার ভাই বিপুল বড়ুয়া। প্রায় ৪২-৪৩ বছর বয়স হবে। শিক্ষা বিভাগে চাকরি করেন।
দাদা পুরোপুরি বিচ্ছিন্নতাবাদের পথিকৃৎ হলেও খানিকটা উলটো পথেই হাঁটেন ভাই। তিনি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তাঁর কাছে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর পর্বে যা জানতে পারলাম তার সারমর্ম ..
প্রশ্ন: পরেশ বড়ুয়া বিচ্ছিন্নতাবাদী। তিনি স্বাধীন অসমের দাবি তুলেছেন। আপনি তাঁর ভাই, আপনি কি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী? ভোট দেবেন?
বিপুল: গণতান্ত্রিক দেশে নাগরিক হিসেবে আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। এবং আমার সংবিধান আমাকে ভোটাধিকার দিয়েছে। আমি ভোট দেব।
প্রশ্ন: কী চাইছেন, দিল্লিতে মোদি সরকার খাকুক না অন্য কেউ আসুক?
বিপুল: দেখুন, কেন্দ্রে বিজেপিই থাকুক আর কংগ্রেসেই আসুক। পরিস্থিতিটা বদলায় না। উত্তর-পূর্ব ভারতকে সকলেই অবজ্ঞার চোখে দেখে।
প্রশ্ন: যারা উলফাতে যোগ দিয়েছে, তাদের কি কোনও বার্তা দেবেন?
বিপুল: দেখুন যারা গিয়েছে, তাদের অনেকেই শিক্ষিত। দিল্লির যে অসমের প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরণ, তাতে ক্ষুব্ধ হয়েই এরা বিপ্লবের পথ ধরেছে। দিল্লি অসমের সম্পদ নিয়ে যাচ্ছে, বিনিময়ে অসম কিছুই পাচ্ছে না।
[আরও পড়ুন: বরাকে ফের জঙ্গিদের হামলা, ৬ জনকে গণধোলাই জনতার]
প্রশ্ন: তাহলে কি আপনি কি সশস্ত্র আন্দোলন সমর্থন করেন ?
বিপুল: দেখুন হানাহানি বা রক্তারক্তি কাম্য নয়। সরকার-উলফা আলোচনায় বসে, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করুক সেটাই চাই।
প্রশ্ন: দাদার সঙ্গে কথা হয়?
বিপুল: শেষবার কথা হয়েছিল, ২০১৫ সালে। আমাদের মা মারা গেলে। তারপর আর হয় না।
প্রশ্ন: দাদাকে কোনও বার্তা দিতে চাইবেন?
বিপুল: আপনাদের মাধ্যমে ওনাকে বিহুর শুভেচ্ছা জানাতে চাই। আর একটা কথাই বলার-এভাবে সশস্ত্র বিপ্লব সমাধানের পথ হতে পারে না। আপনারা আলোচনার রাস্তায় ফিরে আসুন।
[আরও পড়ুন: কপালে জুটেছে ডি-ভোটার তকমা, অসমে ভোট দিতে পারবেন না ১.২ লক্ষ মানুষ]
এসব শুনে খানিকটা অবাকই হলাম। উলফা সুপ্রিমো, যিনি সংসদীয় গণতন্ত্রের ঘোর বিরোধী। তাঁর ভাই হয়ে ভোটদানের পক্ষে কথা বলছেন। আবার বলছেন ভোট দেবেন। এদিকে আবার শুনছি উলফার আলোচনাপন্থীরাও নাকি ভোটদানে বিরত থাকবেন। সেসবে কান না দিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্রেই আস্থা রাখছেন বিপুল বড়ুয়া। আসলে এটাই বোধ হয় সংসদীয় গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।
The post গণতন্ত্রে আস্থা রেখে ভোট দিতে চায় উলফা প্রধানের পরিবার appeared first on Sangbad Pratidin.