নন্দন দত্ত, সিউড়ি: নন্দীগ্রামের ভোটপর্বে তিনি ছিলেন বিতর্কের কেন্দ্রে। নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি হিসাবে তাঁর ভূমিকা নিয়ে শোরগোল চলেছিল বিস্তর। ভোটের দিন নন্দীগ্রামের বয়ালে তো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রীতিমতো তর্কে জড়িয়েছিলেন তৎকালীন পুলিশ পর্যবেক্ষক নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী। ভোট নিয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘উর্দিতে কোনও দাগ লাগতে দেব না’ বলে খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া সেই নগেন্দ্রই এবার রাজ্যের তৃণমূল সরকারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ!
বৃহস্পতিবার সাঁইথিয়ার সাংড়ায় ‘আপনার পাড়ায় আপনার থানা’ পরিষেবার সূচনায় এসে বীরভূমের পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী বলেন, “গত সরকারে(পড়ুন বাম সরকারে) পুলিশ ছিল শাসকের ভূমিকায়। আর ২০১১ সালে মা মাটি মানুষের সরকারে পুলিশের মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে। পুলিশ এখন মানবিকও।” বিধানসভা ভোটের শেষপর্বে এই নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠীকে বীরভূমের এসপি পুলিশ সুপারের পদে বসানো নিয়ে কমিশনের সঙ্গে রাজ্যে তৎকালীন শাসকদলের কম সংঘাত হয়নি। অথচ ভোটের পর মাত্র তিনমাসের মাথায় সেই পুলিশকর্তাই এদিন রাজ্য সরকার তো বটেই মুখ্যমন্ত্রীকেও দরাজ সার্টিফিকেট দিলেন। তাঁর কথায়, “পুলিশ আগেও কাজ করত। কিন্তু গত সরকারে পুলিশ ছিল শাসকের ভূমিকায়। আগে পুলিশ সম্বন্ধে ধারনা ছিল, পুলিশ লাঠি হাতে এসে দুষ্ট লোককে ধরে নিয়ে যাবে। কখনও ভাল লোককেও ধরে নিয়ে যেত। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সারা বাংলায় কমিউনিটি পুলিশিং বেড়েছে। জঙ্গলমহল কাপ, রাঙামাটি কাপ খেলা হল। রক্তদান শিবির হচ্ছে। মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের পাশে থাকছে পুলিশ।” নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠীর এদিনের বক্তব্যের সঙ্গে তাঁর আগের অবস্থান এদিন অনেকেই মেলাতে পারেননি। রাজনৈতিক মহল তাঁর এদিনের বক্তব্যকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে।
[আরও পড়ুন: এভাবে চলে যাবে ভাবিনি’, চিরঘুমের দেশে পাড়ি দেওয়া ছেলের শোকস্তব্ধ জামবনি]
কোনও সমস্যায় পড়ে পুলিশের সাহায্য নিতে আর থানায় যেতে হবে না। এবার হাত বাড়ালেই পাশে হাজির হবে পুলিশ। গ্রামের পঞ্চায়েত দফতরে রাখা অভিযোগ বাক্সেই পুলিশকে জানানোর যে কোনও অভিযোগ জমা দেওয়া যাবে। ফি সপ্তাহে সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গ্রামে থানার অফিসার তো আসবেনই, তাঁর কাছে সরাসরি অভিযোগ জানিয়েও যে কোনও সমস্যার প্রতিকার চাওয়া যাবে। বীরভূমে ‘আপনার পাড়ায় আপনার থানা’ প্রকল্পে এবার এমন সুবিধা নাগালে আসছে আমজনতার। পুলিস সুপার এদিন বলেন, অনেক জিনিস আছে যা থানায় গিয়ে বলা যায় না। ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক বা ব্লক করার কথা জানাতে কেউ সিউড়ি যাবে কেন? কেউযায় না। স্কুলের সামনে ইভটিজিং চলছে, কেউ থানায় গিয়ে বলবে না। কিন্তু পাড়ায় পুলিশ পেলে এমন সব সমস্যায় তাদের শুধু খবর দিন। পাড়ায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধা অসুস্থ। বাড়ির লোক বাইরে থাকে। তাকে খাবার থেকে ওষুধও পুলিশ পৌঁছে দেবে বলে জানান পুলিশ সুপার। এলাকার বিধায়ক অভিজিত সিংহ জানান, “দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন করবে পুলিশ। যারা দুষ্কৃতী তাদের জন্য কঠোর। যারা সাধারণ মানুষ, নিয়ম মেনে চলে তাদের পাশে থাকবে মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রাণিত পুলিশ। ব্রিটিশ আমলের খাকি পোশাকের যে ভীতি, তা কাটিয়ে এখন পুলিশ এ রাজ্যে মানুষের বন্ধু হতে চায়।সেই উদ্যোগ শুরু হল চিকিৎসক দিবসের দিনেই।”
[আরও পড়ুন: ধারের টাকা ফেরত চাওয়াতেই প্রেমিকের হাতে খুন অণ্ডালের তরুণী, বিস্ফোরক মৃতার দিদি]