সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পরিচালক সুদীপ্ত সেনের ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবিকে নিষিদ্ধ করার পথে হাঁটল বাংলা। রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য়ই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবির গল্প বিকৃত তথ্যে মোড়ানো। সোমবার এ কথা বলে গেরুয়া শিবিরকে একহাত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবিকে নিষিদ্ধ করা কতটা যুক্তিযুক্ত? কী বলছেন বিশিষ্ট জনেরা?
কুণাল ঘোষ, তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র- ‘দ্য় কেরালা স্টোরি’কে নিষিদ্ধ করে একেবারে সঠিক কাজ করেছে রাজ্য সরকার। তার কারণ হচ্ছে এটি এমন একটি ছবি, যা ছবির নামে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের প্ররোচনা এবং মিথ্যা, ভুয়ো তথ্যর উপর দাঁড়িয়ে। সিনেমা নিশ্চয়ই মানুষ বিচার করবে। একে আলাদাভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত, নিষিদ্ধ করা উচিত নয়, আমরা তা বলছি না। কিন্তু কেউ যদি তথ্য বিকৃত করে, উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে একটি অংশকে অসম্মান করার জন্য মানুষের মধ্য়ে এই ধারণাগুলো ছড়িয়ে দিতে শুরু করে, তাহলে প্রশাসন কী করবে? আমরা ক’ দিন আগে দেখেছিলাম, আজকে যাঁরা বিরোধিতা করছেন, তাঁদের বলব, বিবিসি-র তৈরি করা গুজরাট নিয়ে তথ্যচিত্রটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন কেন? সেটা তো তথ্যর উপর নির্ভর ছিল। আর যে সংখ্যাটা বলছে ৩২ হাজার, সেই সংখ্যাটা শুধু ৩২ কিনা তাতে সন্দেহ আছে। মিথ্যাচার থাকলে তো যে কোনও দায়িত্বশীল প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। কংগ্রেস তো প্রথমেই বলেছিল, এই ছবি নিষিদ্ধ করা হোক। সেখানে তো কেরলের বাম সরকার করেনি। বাম সরকার তো সেখানে বিজেপিকে তোল্লাই দেয়। আর কারা বারণ করছে, সিপিআইএম? বাম জমানায় নাটক, জমি সংক্রান্ত একটা সিনেমা, খোদ পূর্ব মেদিনীপুরে কীভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে? ব্রাত্য বসুকে জিজ্ঞেস করুন না, তার নাটকগুলো কী হাল করা হয়েছে। তাঁরা আমাদের শেখাতে আসছে এখন। বাস্তবে সিনেমাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তা নয়, সিনেমার মোড়কে যে মিথ্যাচার, ভুয়ো তথ্য, বিকৃতিকে আটকানো হয়েছে। প্রশাসন তার দায়িত্ব পালন করেছে।
কৌশিক সেন, অভিনেতা- এই সিদ্ধান্তকে আমি একেবারেই সমর্থন করি। ‘দ্য় কেরালা স্টোরি’ ছবি মুক্তি পাওয়ার পর কেরলে এই ছবি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। সেখানে যে ধরনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা খুবই ক্ষতিকারক। আমাদের রাজ্যে কয়েকদিন আগে কয়েকটা জায়গায় সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়িয়েছিল। এই অবস্থায় কোনও বিচ্ছিন্নতাবাদী দল এর সুযোগ নিয়ে ফের অশান্তি তৈরি করতে পারে। তাই ছবি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত একেবারেই সঠিক।
[আরও পড়ুন: ‘আইনি পথে হাঁটব’, বাংলায় ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিষিদ্ধ ঘোষণা হওয়ার পর মুখ খুললেন পরিচালক]
রুদ্রনীল ঘোষ, অভিনেতা- যে সিনেমা সেন্সর বোর্ড থেকে ছাড়পত্র পায়, তা ভাল হোক বা মন্দ হোক, একটা ওপেন জায়গা থাকে। যার ইচ্ছে হবে দেখবে, যার ইচ্ছে হবে দেখবে না। পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল মনে করে যে তাঁরাই এই সব আইন কানুন প্রণয়ন করবে। খুবই দুঃখজনক যে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী যখন কোনও ঘোষণা করেন সেটা মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বলেন না, তিনি তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কের কথা মাখায় রেখে বলেন। আমার মনে হয় সিনেমাকে এভাবে আটকে রাখা যায় না।
সুকান্ত মজুমদার,সভাপতি, রাজ্য বিজেপি- আমি একেবারেই সারপ্রাইজড নই। ওঁর কাছ থেকে এটাই আশা করা যায়। ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ একেবারেই সত্য়ি ঘটনা অবলম্বনে লেখা হয়েছে। আসলে দিদি বাস্তব থেকে চোখ বুজে রেখেছেন। এই রাজ্যের মানুষদের, বিশেষ করে মহিলাদের বাস্তব থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাইছেন। ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিষিদ্ধ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমাণ করলেন, বাংলায় কোনও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই।