অভিরূপ দাস: চড়চড় করে উঠছে। আবার একদম তলানিতে। কোনওভাবেই স্বাভাবিক হচ্ছে না। রক্তচাপের ‘নাগরদোলার ঘূর্ণি’ থামাতে ঘেমেনেয়ে অস্থির হয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের চিকিৎসকরা। তিলোত্তমা দিল মুক্তি।
৩৯ বছরের মনোজ ঝা ডেঙ্গুতে (Dengue) আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু উপসর্গের সঙ্গে মিলছিল না অসুখের গতি। ভাইরাল এ অসুখে রক্তচাপ কমে যাওয়াই দস্তুর। কিন্তু মনোজ ঝায়ের শরীরে রক্তচাপের ওঠানামা দেখে বিস্মিত হন চিকিৎসকরা। এই কমছে তো এই বাড়ছে। কখনও ৩০০/১৫০, ওষুধ দিলে আবার ৭০/৪০। স্থির থাকছে না কিছুতেই। প্লেটলেট সংখ্যা অত্যন্ত কম। নিউ আলিপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি হওয়ার পর চিকিৎসকরা তাঁকে দেখে জানান, “ডেঙ্গু হেমারেজিক ফিভারে তো এমনটা হয় না।” সেখান থেকে রোগীকে নিয়ে আসা হয় বাইপাসের ধারের এক হাসপাতালে। ডা. সুমন মিত্র রোগীকে পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করেন। একাধিক রক্তপরীক্ষা, প্রস্রাব পরীক্ষা, তলপেটের আল্ট্রাসাউন্ড করে দেখা যায় শরীরে বাসা বেঁধেছে ফিওক্রোমোসাইটোমা।
[আরও পড়ুন: খাস কলকাতায় বার সিঙ্গারের রহস্যমৃত্যু, খুনের অভিযোগে সরব বাবা-মা]
কী এই অসুখ? চিকিৎসকরা বলছেন, ফিওক্রোমোসাইটোমা আদতে কিডনির উপর অবস্থিত অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির বিশেষ টিউমার। ডা. ধৃতিমান মৈত্রর কথায় ১০০ জনের শরীরে ফিওক্রোমোসাইটোমা হলেও সাধারণত ৯০ জনের একটি অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিতে টিউমার দেখা যায়। দু’টি অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিতেই টিউমার অত্যন্ত বিরল। অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি একটি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি যা অ্যাড্রেনালিন, অ্যালডোস্টেরন ও কর্টিসল-সহ নানাবিধ হরমোন তৈরি করে। সাধারণত দুঃখ, ভয়, মানসিক চাপে অ্যাড্রিনালিন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়।
উলটোভাবে বলা যায়, অ্যাড্রিনালিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয় রক্তচাপ। টিউমারের চাপে কোনও মানসিক চাপ না নিয়েও তাই মনোজ ঝা-এর রক্তচাপ ওঠানামা করছিল। ৬৮ গ্যালিয়াম ডোটানক পেট সিটি স্ক্যান করা হয় রোগীর। দেখা যায় সত্যিই বাইল্যাটেরাল ফিওক্রোমোসাইটোমা।
ডা. ধৃতিমান মৈত্রর তত্ত্বাবধানে অস্ত্রোপচার হয়। অস্ত্রোপচারে সাহায্য করেন ডা. হেমাভ সাহা, ডা. অন্তরীপ ভট্টাচার্য। সম্পূর্ণ অস্ত্রোপচার করতে সময় লাগে ৩ ঘণ্টার মতো। এ অস্ত্রোপচার সহজ নয়। অস্ত্রোপচারের সময়ও নাগরদোলার মতো ঘুরছিল রক্তচাপ। ডা. ধৃতিমান মৈত্রর কথায়, একবার তা পৌঁছে গিয়েছিল ৩১০/২৪০-এ। পরক্ষণেই নেমে ৭০/৪০। বিশেষ পদ্ধতিতে তা নিয়ন্ত্রণে রাখেন চিকিৎসকরা। বাদ দেওয়া হয় টিউমার দু’টি। সম্পূর্ণ অস্ত্রোপচারে অ্যানাস্থেশিয়া টিমের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে ছিলেন ডা. শিল্পা কানাকাম, ডা. সংযুক্তা সরকার।