রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: রাজ্যে তৃণমূল সরকারকে সরানোর ব্যাপারে বিজেপি কতটা আন্তরিক, তা নিয়ে দলের অন্দরেই ইতিউতি প্রশ্ন শোনা যায়। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো নেতারা মাঝেমধ্যেই দিল্লির নেতাদের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে দাঁড় করান। কিন্তু এবারে বঙ্গ সফরে এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কর্মীদের কাছে স্পষ্ট করে দিতে চাইলেন, রাজ্যে তৃণমূলকে হারানোর ব্যাপারে বিজেপি আন্তরিক। সাফ ভাষায় কর্মীদের বললেন, 'দিল পে লিখলো হামারা সরকার হোগা।' তবে কলকাতা এবং শহরতলির কর্মীদের জন্য যে টার্গেট তিনি বেঁধে দিলেন, সেটা খানিকটা অসম্ভব বলে মনে হতে পারে।
বঙ্গ সফরের শেষদিন সায়েন্স সিটিতে কলকাতা এবং শহরতলির কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক ছিল শাহের। শক্তিকেন্দ্র ও তদূর্ধ্ব স্তরের পদাধিকারীদের ডাকা হয়েছিল। ওই সম্মেলনের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘মহানগর কর্মী সম্মেলন।’ সেই সম্মেলনে তৃণমূলের সঙ্গে কোনওরকম সমঝোতার তত্ত্ব তিনি খারিজ করে দেন। শাহ বলেন, "কোনও সমঝোতা নেই। এবার সরকার গড়ব। দিল পে লিখলো হামারা সরকার হোগা" শাহের কথায়, "এই রাজ্যে দুটো জিনিস ভয়ংকর। একটা অনুপ্রবেশ, আর একটা দূর্নীতি। কলকাতাও নিরাপদ নয়। অনুপ্রবেশের দাপট বাড়লে আপনারা বিপদে পড়বেন। এই অবস্থা থেকে বাঁচতে হলে সমূলে এই সরকার উপড়ে ফেলতে হবে।"
সায়েন্স সিটিতে বিজেপির কর্মী সম্মেলনে অমিত শাহ। নিজস্ব চিত্র।
গোটা রাজ্যের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ আসনের টার্গেট আগেই বেঁধে দিয়েছিলেন। এবার কলকাতা মহানগরের চার জেলার কর্মীদের জন্য ২০ আসনের টার্গেট বাঁধলেন তিনি। ঘটনাচক্রে কলকাতা এবং শহরতলিতে মোট ২৮টি আসন আছে। যেগুলি বিজেপির চার সাংগঠনিক জেলার অধীনে পড়ে। এই ২৮টি আসনের মধ্যে মাত্র দুটি বিজেপির দখলে। শুধু এবার কেন, কলকাতার ১১ আসনের মধ্যে কোনওকালেই কোনওটি বিজেপি জেতেনি। ফলে এই ২৮ আসনের মধ্যে ২০টি জেতার টার্গেট বাঁধাটা খানিকটা ছেঁড়া কাথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখার মতো।
কীভাবে সেই টার্গেট পূরণ করা সম্ভব? সেই পরামর্শও দিয়েছেন শাহ। তিনি বলছেন, এক কার্যকর্তার সঙ্গে অন্য কার্যকর্তাকে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। যেই প্রার্থী হোক তাকে জেতাতে হবে। সকলকে নামতে হবে, জয়ী ও পরাজিত সব প্রার্থী অর্থাৎ বিধায়ক-সাংসদদের পথে নামতে হবে। নিজ এলাকায় বুথে নজর বাড়াতে হবে। আগে বুথ সংগঠন পরে জয়লাভ।" কিন্তু শাহের এই স্বপ্ন আদৌ বাস্তব হবে কি? পুরনো পরিসংখ্যান দেখিয়ে তৃণমূল বলছে, এটা দিবাস্বপ্ন।
