নন্দন দত্ত, সিউড়ি: লালন শেখের মৃত্য়ুর পর থেকে থমথমে রামপুরহাটের বগটুই গ্রাম (Bogtui Incident)। সিবিআইয়ের আতঙ্কে কাঁটা গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁদের আশঙ্কা, লালনের মতো আরও যারা সিবিআই হেফাজতে রয়েছে তাদের না একইভাবেই খুন করা হয়। এমনকী, গ্রামের বাসিন্দাদের তুলে নিয়ে গিয়ে মিথ্যা সাক্ষী দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে সিবিআই, এমন অভিযোগও শোনা যাচ্ছে গ্রামবাসীদের গলায়। এদিন সিবিআইয়ের শাস্তির দাবিতে রামপুরহাটের অস্থায়ী ক্যাম্পের বিরুদ্ধে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। এদিকে রামপুরহাট থানায় সিবিআই কর্তাদের বিরুদ্ধে FIR করল লালনের পরিবার। দায়ের হয়েছে খুনের অভিযোগ।
বগটুই গ্রামের পূর্বপাড়ার বাসিন্দা সারুল শেখের কথায়, আমি হৃদরোগে আক্রান্ত। বগটুই কাণ্ডের পর গ্রামে অশান্তি হয়েছিল। এবার ফের বড় অশান্তির আশঙ্কার করছি। তিনি আরও জানান, সেদিন দেখলাম লালন স্বাভাবিকভাবে হেঁটেই গ্রামে এল। কিন্তু ইশারায়, আকার-ইঙ্গিতে ও বলছিল, সিবিআই ওর উপর মারাত্মক অত্যাচার করছে। যা দেখেশুনে আমার ভয় লাগছে। একই ধরনের কথা শোনা গিয়েছে গ্রামের আরেক বাসিন্দা হাসিনা বিবির গলাতেও। তিনি জানিয়েছেন, গত ২৭ থেকে ২৯ তারিখ গ্রামে এসেছে সিবিআই। ওঁর ছেলে আকাশ শেখকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল সিবিআই। তাঁর দাবি, “লালনের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল। কিন্তু সেই রাতে তো আকাশ গ্রামেই ছিল না। সিবিআই তুলে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে আতঙ্কে ও আর গ্রামে ফেরেনি।”
[আরও পড়ুন: বগটুই কাণ্ড: লালনের মৃত্যুর নেপথ্যে হার্ড ডিস্ক? নিরাপত্তারক্ষীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তে CBI]
এদিকে লালনের সঙ্গে সিবিআইয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পে রয়েছে জাহাঙ্গির শেখ। লালনের মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর বাবা মারফত শেখ সিবিআই ক্যাম্পে ছুটে যান। হাতজোড় করে সিবিআই আধিকারিকদের কাছে আরজি জানান, “লালনের মতো আমার ছেলেকে মেরে ফেলবেন না।” সবমিলিয়ে সিবিআই আতঙ্কে ভুগছে বগটুই গ্রাম। এদিকে স্বামীর মৃত্য়ুর পর আতঙ্কে ভুগছে রেশমা বিবি। সোমবার সন্ধের পর আচমকাই বুকে ব্যথা শুরু হয় তাঁর। রামপুরহাট হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে তাঁকে। এদিকে রাতেই লালন শেখের দেহও ময়নাতদন্তের জন্য় রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে মঙ্গলবার ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্ত করা হবে। এদিকে অশান্তির সম্ভাবনা এড়াতে হাসপাতালের বাইরে প্রচুর নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: পরনে শাড়ি, কপালে টিপ! শিলিগুড়িতে দশম শ্রেণির ছাত্রের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারে চাঞ্চল্য]
তবে গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় জটলা করেছেন গ্রামবাসীরা। সিবিআইয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পের বাইরে চলছে বিক্ষোভ। তাঁদের দাবি, সিবিআইয়ের শাস্তি হোক। জমায়েত করেছেন হাসপাতালের বাইরেও। এদিকে লালনের মৃত্যু নিয়ে মামলা দায়ের করতে চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। মামলা দায়েরের অনুমতি দিল আদালত।