shono
Advertisement
Bohurupi

'নন্দিতাদি আর আমি সেরা জুটি', 'বহুরূপী' মুক্তির আগে একান্ত সাক্ষাৎকারে নন্দিতা-শিবপ্রসাদ

৮ অক্টোবরে মুক্তি পাচ্ছে 'বহুরূপী'।
Published By: Akash MisraPosted: 12:24 PM Oct 04, 2024Updated: 01:54 PM Oct 04, 2024

পুজোয় মুক্তি পেতে চলেছে 'বহুরূপী'(Bohurupi)। এই ছবিই হতে পারে এবারের পুজোর গেম চেঞ্জার। ছবি মুক্তির আগে একান্ত সাক্ষাৎকারে নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।  শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়

Advertisement

একটা জিনিস কিন্তু লক্ষণীয়, উৎসবের আগে ‘বহুরূপী’-র প্রচার নিয়ে কিন্তু তেমন ট্রোলিং হয়নি যতটা ‘টেক্কা’-র ক্ষেত্রে হয়েছে। এর কারণ কী মনে হয়? আপনারা সেভাবে আন্দালনের মুখ নন, এবং সোশ‌্যাল মিডিয়াতেও সরব নন...

শিবপ্রসাদ: না, প্রত‌্যক্ষভাবে কিন্তু প্রোটেস্টে ছিলাম। টলিউডের যে প্রথম প্রতিবাদ মিছিল বেরয় সেটাতে ছিলাম। আমি স্লোগানও দিয়েছি। যখন আমরা আর জি কর-এ পৌঁছই তখন সেখানে ১৪৪ ধারা। সেখানে স্লোগান দিতে গিয়ে যাদবপুরের ছাত্রাবস্থার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। তবে হ্যাঁ,
আমি আর নন্দিতাদি সোশ‌্যাল মিডিয়া থেকে অনেকটাই দূরে।
নন্দিতা : ট্রোলিং না হওয়া আমাদের জন‌্য খুবই ভালো। আর শিবু যেটা বলল, সোশ‌্যাল মিডিয়ায় আমি আরওই থাকি না। আমি ফেসবুক খুলি না কোনওদিন। ছবির প্রোমোশনের সময় আমার হয়ে অন‌্যরা পোস্ট করে দেয় মাঝে মধ্যে।


‘বহুরূপী’-র প্রেক্ষাপট একটু জানতে চাই।
শিবপ্রসাদ : সিনেমার প্রেক্ষাপট অনুযায়ী ‘সুমন্ত ঘোষাল’ পুলিশের ইনচার্জ। অন‌্যদিকে ‘বিক্রম প্রামাণিক’ একজন ব‌্যাঙ্ক ডাকাত। তারা দুজনে একে অপরের সঙ্গে প্রত‌্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে পরস্পরের প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে। দুজনেরই পরিবার আছে, নিজেদের চ‌্যালেঞ্জ আছে। ঘটনা এমনভাবেই এগোয় যে বিক্রমের পুরো আক্রোশ গিয়ে পড়ে সুমন্ত ঘোষালের ওপর। বিক্রমের মনোভাব খানিক এমন– আমাকে মিথ্যে শাস্তি দিয়ে যে ক্ষতি করেছে তার প্রতিশোধ আমি তুলব, অর্থাৎ সরকার আমাকে মারলে, আমিও সরকারকে মারব।
নন্দিতাদি, শুনেছি এটা সত্যি ঘটনা অবলম্বনে...
নন্দিতা : একদম তাই। আমরা যখন বারো বছর আগে ‘মুক্তধারা’ করি, তখন আমাদের একজন ফোন করে, দেখা করতে চায়। দেখা করে বলে, সে নাকি পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় ব‌্যাঙ্ক ডাকাত। তার বক্তব‌্য, যদি একজন কনভিক্টকে নিয়ে ছবি করা যায়, তাহলে তাকে নিয়েও ছবি করা যাবে। তার দাবি, তার জীবনের গল্প আরও বেশি ইন্টারেস্টিং। তারপর থেকে সে টানা ফোন করত। তার গল্প নিয়ে ছবি বানাতেই হবে। আমরা অনেকদিন ধরেই চেষ্টায় ছিলাম গল্পটাকে সিনেম‌্যাটিক করে, পর্দায় তুলে ধরতে। কিন্তু বাজেটের কারণে করতে পারিনি। এখন মনে হল যে করা যায়।
আসল ব‌্যাঙ্ক ডাকাত এখন কী করেন?
শিবপ্রসাদ : তিনি এখন কোর্টের মুহুরি। খুব বড় একজন আইনজীবীর মুহুরি হিসাবে কাজ করেন। এবং যে ইন্সপেক্টরের সঙ্গে ওঁর সংঘাত হয়েছিল, তিনিও এখন পুলিশের বড় পোস্টে। দুজনের মধ্যে এখনও রাইভালরি একইরকম। একজনের সঙ্গে কথার পর অন‌্যজনের সঙ্গে কথা হলেই জিজ্ঞেস করেন, ‘তা আমার কথা শুনে ও কী বলল’।
ট্রেলারে একটা সংলাপ শুনলাম, ‘পুলিশের আগে চোরের নাম আসে’। যেকোনও ছবির ‘ভিলেন’ স্ট্রং না হলে চোর-পুলিশ খেলা জমে না। তাই কি নিজেই এই চরিত্রটা করতে চাইলেন?


শিবপ্রসাদ : আমি তো ‘বিক্রম’ করতে চাইনি।
নন্দিতা : শিবুকে এই চরিত্রের জন‌্য আমি জোর করেছি। যখন গল্পটা লিখছিলাম, তখন চরিত্রের চেহারাটা মাথায় থাকলে লিখতে সুবিধে হয়। প্রথম থেকেই শিবুকে মাথায় রেখে লেখা। ছবি শুরু করার আগে শিবু অনেকবার বলেছে, ‘আমি অনেক ভালো-ভালো স্টার দিচ্ছি, তুমি তাদের কাস্ট করো’।
শিবপ্রসাদ : শেষদিন পর্যন্ত আমি বলেছি অন‌্য অভিনেতার কথা ভাবতে।
নন্দিতা : ওর বক্তব‌্য ছিল যে এটা কমার্শিয়াল ছবি, একজন স্টারের প্রয়োজন, তাহলে হয়তো বেশি ব‌্যবসা দেবে। আমার কমার্শিয়াল স্টারের প্রয়োজন নেই। আই নিড অ‌্যান অ‌্যাক্টর ফর দিস রোল।
আবির পরপর দুবার পুলিশের চরিত্রে। কনভিন্স করলেন কীভাবে?
নন্দিতা : চরিত্রটা এতটা ইন্টারেস্টিং ছিল যে আবির লুফে নিয়েছে।
শিবপ্রসাদ : এই ছবিতে যেভাবে আবিরের চরিত্রটা আমরা ডেভলপ করেছি, তাতে যে কোনও পুলিশ ‘সুমন্ত ঘোষাল’-কে দেখে বলবে, এটা আমি। একেবারে রক্তমাংসের পুলিশের চরিত্র।
এই ছবিতে একদিকে আবির-ঋতাভরী, অন‌্যদিকে শিবপ্রসাদ-কৌশানি জুটি। আর একটা জুটি হল নন্দিতা-শিবপ্রসাদ জুটি। কোন জুটিকেএগিয়ে রাখবেন?
নন্দিতা : ‘শিবু-নন্দিতা’ জুটিকে এগিয়ে রাখব। কারণ আমরা ক্রিয়েট করেছি।
শিবপ্রসাদ : অবভিয়াসলি আমিও তাই বলব। বাকিরা পর্দায় জুটি, কিন্তু আমাদের জুটির বিশ্বাসযোগ‌্যতার প্রমাণ অনেক দিন ধরে দিচ্ছি, আর এই জুটিটাই অন‌্য জুটি তৈরি করেছে।
নন্দিতা : তাছাড়া ওই জুটিগুলো তো একটা নির্দিষ্ট ছবির জন‌্য আর আমাদের জুটিটা তো লং রানিং, আনবিটেন জুটি।


আর জি কর-এর ঘটনাকে কেন্দ্র করে টলিউডে যৌন হয়রানি এবং কর্মক্ষেত্রে বৈষম‌্য নিয়ে সরব হয়েছেন অনেকেই। ‘‘উইমেন’স ফোরাম ফর স্ক্রিন ওয়ার্কার্স প্লাস’’ তৈরি হয়েছে। নন্দিতাদি, আপনি কি এই ফোরামের সঙ্গে যুক্ত?
নন্দিতা : না, আমার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি, আমি জানিও না। আর ফেসবুকও দেখি না। সো আই ডোন্ট নো অ‌্যাবাউট দিস।
আচ্ছা বেশ। তবে দুজনের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে সব ধরনের হয়রানি নিয়ে আপনাদের মতামত জানতে চাইব।
নন্দিতা : দেখো, আমাদের এই হাউসে কখনও এই ধরনের অভিযোগ আসেনি। কোনও নায়িকা এসে এমন অভিযোগ তোলেনি। এর একটা সম্ভাব‌্য কারণ, যেহেতু আমি এই কোম্পানির একজন মুখ, আমি নিজে একজন নারী, এবং যথেষ্ট বয়স্ক ও অভিজ্ঞ– অভিনেত্রীরা সেই কারণে হয়তো সেফ ফিল করেন।
শিবপ্রসাদ : আমি যেটা মনে করি, হ‌্যারাসমেন্ট বাড়ির ভিতর থেকে শুরু হয়। স্বামী, তার সন্তানের সামনেই স্ত্রীকে হয়তো বলছে, ‘এই ছাগলের মতো কথা বলো না, এত পাঁঠা কেন তুমি’। এই ‘ছাগল’, ‘পাঁঠা’ বা ‘বোকা’– এই শব্দগুলো স্ত্রী সচরাচর স্বামীকে বলে না। বাচ্চা কিন্তু এটাই শিখছে। এই ইন্ডাস্ট্রিতেও খানিক তাই। আমরা সবসময় লিখি নন্দিতা-শিবপ্রসাদ। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে বারংবার শিবু-নন্দিতা বা শিবপ্রসাদ-নন্দিতা লেখা হয়। কোনও সাক্ষাৎকারে অনেক সময় ‘কার লড়াই’ উল্লেখ করতে গিয়ে সবসময় ‘সৃজিত-শিবু’ কিংবা শিবু-পথিকৃৎ বা এই ধরনের কিছু লেখা হয়। নন্দিতাদির মতো সাকসেসফুল মহিলা পরিচালক কিন্তু এই মুহূর্তে কেউ নেই। তিনি মহিলা এবং তাঁকে কমপ্লিটলি অস্বীকার করা– এটা হ‌্যারাসমেন্ট নয়? এমনকী, তাঁর সাফল‌্যটাও স্বীকার না করা– এর থেকে বড় মিসোজিনি বা মেল শভিনিজম আর কীই বা হতে পারে। ‘এটা শিবুর ছবি’– এই ন‌্যারেটিভ সবসময় শোনা যায়, সেখানে নন্দিতাদিকে একেবারে ইনভিজিবল করে দেওয়া– এটা তো অন‌্যায়। যে ইন্ডাস্ট্রি একজন মহিলা পরিচালককে স্বীকৃতি দিতে পারে না, সেখানে বড় বড় কথা বলে কী হবে। বেসিক জায়গায় গণ্ডগোল।
‘‘উইমেন’স ফোরাম ফর স্ক্রিন ওয়ার্কার্স প্লাস’’-এর অনেকগুলো দাবি আছে। তার মধ্যে ‘পশ’ এবং ‘পসকো’ অ‌্যাক্ট মেনে ‘আইসিসি’-র গঠন এবং ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে ইন্টিমেসি কোঅর্ডিনেটর রাখার দাবি। আপনারা কী ভাবছেন?
শিবপ্রসাদ : আমার ‘ইন্টিমেসি ডিরেক্টর’ তো নন্দিতা রায়।
নন্দিতা : একদম একদম...
শিবপ্রসাদ : যখন ‘ইচ্ছে’ করেছি, প্রথম ছবিতেই দুটো চুমু ছিল। অভিনেতারাও নতুন, আমাদেরও প্রথম কাজ। আমি সেই কাজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলতে চাই, ট্রাস্ট জিনিসটা যতক্ষণ না দুজন অভিনেতার ভিতর তৈরি হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত কিছুই হবে না। ইন্টিমেসি ডিরেক্টর থাকলেও একজন অফেন্ডার তার মধ্যেও অফেন্ড করে চলে যাবে। কিচ্ছু করতে পারবে না। যে অফেন্ডার, সে জন্মগত, সারাজীবনের জন‌্য অফেন্ডার।
এই পুজোতে বাংলা ছবির উন্মাদনা কেমন?
নন্দিতা : আমাদের ছবি নিয়ে এখনও পর্যন্ত খুব পজিটিভ ফিডব‌্যাক পেয়েছি। গান খুব প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু বাইরের পরিস্থিতিটা বুঝতে পারছি না। গড়িয়াহাটে গেলে দেখছি বাজার খালি। পুজোর বাজারের ভিড়টা কম। দেখো, জীবন তো থেমে থাকে না। এগিয়ে যেতেই হয়। আমার কোথাও মনে হচ্ছে, ‘উৎসব’ কথাটাকে খুব একমাত্রিকভাবে দেখা হচ্ছে। উৎসব মানে শুধুই হইহই, নাচানাচি নয়। উৎসব কথাটার একটা ব‌্যাপ্তি আছে। এই উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে বহু মানুষের সংসার। সাধারণ মানুষ যেমন প্রতিবাদে থেকেছে তেমন এই মানুষগুলোর জন‌্যও আমাদের হাত বাড়িতে দিতে হবে। আমি শাড়ি-জামাকাপড় কিনলে, সে বিক্রিবাটা করে বাড়িতে সকলের জন‌্য নতুন জামা দিয়ে হাসি ফোটাতে পারে। উৎসব মানে, এই হাতে হাত মিলিয়ে সবার ভালো থাকা।
ঠিকই বলেছেন। আর বক্স অফিসে লড়াইয়ে বাংলা ছবির প্রতিপক্ষ তাহলে কি ‘অসময়’?
শিবপ্রসাদ : আমার মতে, বাংলা ছবির লড়াই প্রচুর কনটেন্টের সঙ্গে। দুটো হিন্দি ছবি ‘জিগরা’ এবং ‘ভিকি বিদ‌্যা কি...’, ছাড়াও ‘জোকার’ আছে, সুরিয়ার ছবি সহ আরও কিছু ছবি আসছে। ইটস ভেরি ডিফিকাল্ট। সব থেকে ডিফিকাল্ট এবারের পুজো। তিনদিনের মাথায় খাঁড়া পড়বে। যে পারফর্ম করবে সে থাকবে, যে পারবে না উঠে যাবে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • যখন আমরা আর জি কর-এ পৌঁছই তখন সেখানে ১৪৪ ধারা।
  • যখন ‘ইচ্ছে’ করেছি, প্রথম ছবিতেই দুটো চুমু ছিল।
Advertisement