রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: পরিবারের কাছে রয়েছে তালপাতার পুঁথি। তাতেই লেখা দেবীর পুজোর রীতি। ছত্রে ছত্রে লেখা রয়েছে মূর্তি গড়া থেকে মায়ের বোধনের নিয়ম ও বিসর্জনের রেওয়াজ। এবং পুজোর সময়কালও। তা দেখেই ২৭১ বছর ধরে দশভূজার পুজোর আয়োজন করে তেহট্টের গঙ্গোপাধ্যায় পরিবার (Bonedi Barir Durga Puja 2024)।
ছয় প্রজন্ম আগে অবিনাশ গঙ্গোপাধ্যায় দেবী দুর্গার স্বপ্নাদেশ পান। যে রূপে তিনি মায়ের দেখা পান সেই অনুসারেই দেবী মূর্তি তৈরি করার আদেশ দেন। শুরু হয় মহাময়ার পুজো। তবে প্রথম এই পুজো হত হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে। পরে পরিবার তেহট্টে চলে আসে। বর্তমান বাস ভবনে নতুন করে শুরু হয় গঙ্গোপাধ্যায়দের পুজো।
[আরও পড়ুন: মহিষাসুরমর্দিনী নয়, মা পূজিত ‘অভয়া’ রূপে, মহালয়া থেকেই শুরু হুগলির শীল ঠাকুরবাটীর পুজো]
তালপাতার পুঁথি।
ভরা বর্ষায় আষাঢ় মাসে বাঁশ দেবীর কাঠামো তৈরির জন্য বাঁশ কাটা হয়। জন্মাষ্টমীর দিন চণ্ডীপাঠের মধ্যে দিয়ে মূর্তি তৈরির কাজ শুরু করেন মৃৎশিল্পী। তাঁরা বংশপরম্পরায় এই পরিবারে দুর্গার মূর্তি তৈরি করছেন। বোধনের দিন পুজো শুরু। ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় 'আমন্ত্রন অধীবাস' করা হয়। অর্থাৎ পারিবারিক বহুমূল্য অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাজানো হয় দেবীকে। সপ্তমীর সন্ধ্যায় হয় অর্ধরাত্র পুজো। অষ্টমীর সকালে ১০৮ ঘড়া জল দিয়ে দেবীকে স্নান করানো হয়। এর পর "দুর্গা সহস্র শ্লোক" পাঠ করে অষ্টমী পুজো শুরু হয়।
এই অস্ত্রগুলি দিয়ে সাজানো হয় মাকে।
সেই দিনই বন্দুকের তোপ ধ্বনির মাধ্যমে সন্ধ্যা আরতি করা হয়। নবমীর দিন ৫৬ ভোগ দেওয়া হয় মাকে। এই বনেদি বাড়িতে "সপ্তশতী যজ্ঞের" মাধ্যমে নবমীর পুজো শেষ হয়। দশমীর দিন নিয়ম মেনে পুজোর পর জলঙ্গিতে বিসর্জন দেওয়া হয় মাকে।
বর্তমান গঙ্গোপাধ্যায়ে পরিবারের বংশধর পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় ও সুস্নাত গঙ্গোপাধ্যায় পুজোর পরিচালনা করেন। সুস্নাতবাবু বলেন, "বংশ পরম্পরায় বছরের পর বছর ধরে একই রীতিরেওয়াজ মেনেই পুজো হয়ে আসছে এই পরিবারের। কোনও পরিবর্তন হয়নি। মৃৎশিল্পীরাও বংশপরম্পরায় প্রতিমা তৈরি করে চলেছেন। পাশাপাশি ঢাকিও রয়েছে একই নিয়মে। পরিবারের পুজো এখনও বাড়িতে সংরক্ষিত তালপাতার পুঁথি মেনেই হয়।"