সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতের বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু। চিনের হাতে তামাক খেয়ে যে কোনও কায়দায় দিল্লিকে প্যাঁচে ফেলতে তৎপর তিনি। তাঁর এহেন হঠকারিতার খেসারত দিতে হচ্ছে দেশটির আম জনতাকে। এবার প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর ‘ভারত বিদ্বেষে’র জেরে বেঘোরে প্রাণ হারাতে হল এক অসুস্থ কিশোরকে। ভারতের বিমান ব্যবহারে মুইজ্জুর আপত্তির জন্যই সময় থাকতে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে প্রেসিডেন্টের এহেন হঠকারিতার মূল্য প্রাণ দিয়ে চোকাতে হল ওই কিশোরকে।
জানা গিয়েছে, গত বুধবার মালদ্বীপের উইলমিংটন দ্বীপে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন ১৪ বছরের এক কিশোর। রাতে স্ট্রোক হওয়ায় জীবনমরণের লড়াই শুরু হয় ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত ওই কিশোরকে নিয়ে। দুর্গম ভৌগলিক অবস্থান এবং চিকিৎসা ও নামমাত্র পরিবহণ পরিকাঠামোর দরুণ চোখে অন্ধকার দেখতে শুরু করে তার পরিবার। অন্য উপায় না পেয়ে দ্রুত এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স চেয়ে মালদ্বীপের ‘আসান্ধা কোম্পানি লিমিটেডের’ কাছে আবেদন জানায় তারা। বলে রাখা ভাল, মালদ্বীপে দুর্গম স্থান থেকে রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে আসা এবং এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবার দায়িত্ব সামলায় সংস্থাটি। মৃত কিশোরের পরিবারের দাবি, বারবার ফোন করলেও প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর জবাব দেয় ‘আসান্ধা’। শেষমেশ রাজধানী মালের হাসপাতালে নিয়ে গেলেও শেষরক্ষা করা যায়নি। শনিবার মৃত্যু হয় ওই কিশোরের।
এদিকে, সমালোচনার মুখে পড়ে এক বিবৃতি জারি করেছে ‘আসান্ধা কোম্পানি লিমিটেড’। তাদের বক্তব্য, আবেদন পেয়েই উদ্ধার কাজ শুরু করে তারা। তবে শেষ মুহূর্তে প্রযুক্তিগত ত্রুটির জন্য এয়ার অ্যাম্বুল্যান্, পাঠাতে দেরি হয়। যদিও স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ভারতের দেওয়া ডরনিয়ার বিমানটি ব্যবহার করায় অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু। ফলে হাতের কাছে প্লেন থাকলেও সেটি ব্যবহার করা যায়নি। বলে রাখা ভাল, ভারতের দেওয়া ডরনিয়ার বিমানটিই মালদ্বীপের ৯০ শতাংশ উদ্ধার কাজে ব্যবহার করা হয়।
[আরও পড়ুন: প্যালেস্টাইনের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক জয়শংকরের, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ থামাতে তৎপর ভারত]
এদিতে এই ঘটনায় মুইজ্জুর বিরুদ্ধে উঠছে প্রতিবাদের প্রবল ঢেউ। মালদ্বীপের সাংসদ মিকাইল নাসিম নিজের এক্স হ্যন্ডেলে লেখেন, ‘প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর ভারত-বিদ্বেষের খেসারতের যেন সাধারণ মানুষকে জীবন দিয়ে চোকাতে না হয়।’ সবমিলিয়ে, চিনপন্থী মুইজ্জুর বিরুদ্ধে ক্রমেই অসন্তোষ বাড়ছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ভারতের ক্ষুদ্রতম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাক্ষাদ্বীপে গিয়ে পড়শি দেশ মলদ্বীপের কয়েক জন মন্ত্রীর নিশানা হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তারপরই মালদ্বীপের সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে মালদ্বীপের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম সোলিহ (যাঁকে পরাজিত করে মুইজ্জু সম্প্রতি ক্ষমতায় এসেছেন) এবং আর এক প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মহম্মদ নাশিদ মোদির সমালোচনা করা মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের দাবি তোলেন। তাঁরা জানান, ভারত মালদ্বীপের গুরুত্বপূর্ণ ‘মিত্র’। সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে এমন মন্তব্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এর পরই ঘরে-বাইরে চাপের মুখে রবিবার মুইজ়ু সরকার তিন মন্ত্রীকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু নয়াদিল্লি-মালে কূটনৈতিক টানাপোড়েনের ইতি হয়নি তাতে।