সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ-এর স্বত্ত্ব অনেকের কাছেই রয়েছে। আর পরিচালক-প্রযোজকরা একের পর এক নিজেদের মতো করে কাটাছেঁড়া করে চলেছেন ব্যোমকেশের গোয়েন্দা গপ্পোকে। সেলুলয়েড থেকে ওয়েব প্ল্যাটফর্ম, ‘গোয়েন-দা’ ব্যোমকেশের দৌরাত্ম্য সর্বত্র। বাঙালি গোয়েন্দা হিসেবে ওয়েবে প্রথম পদাপর্ণ করেন ব্যোমকেশ। ইতিমধ্যেই ৪টি সিজনে দেখানো হয়েছে শরদিন্দুর বেশ কয়েকটি গল্প। এবার পঞ্চমতম মরসুমেও সত্যান্বেষনে অনির্বাণ ভট্টাচার্য। কাজেই প্রত্যেকবার সত্যান্বেষীকে নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরাও পরিচালক-প্রযোজকদের কাছে রীতিমতো চ্যালেঞ্জিং। তাই একটা প্রশ্ন থেকেই যায় যে, অন্যগুলোর থেকে এই মরসুমে ব্যোমকেশ আলাদা কোথায়? কিংবা কেনই বা দেখবেন?
বলে দেওয়া যাক তাহলে, ব্যোমেকেশের পঞ্চমতম মরসুমের মূল ইউএসপি পরিচালকের গল্প বলার ধরন। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দুষ্টচক্র’ এবং ‘খুঁজি খুঁজি নারী’ এবারের সিরিজের প্রতিপাদ্য। দুটো গল্পকে বেশ পারদর্শীতার সঙ্গে ব্লেন্ড করা হয়েছে। প্রেক্ষাপটে পঞ্চাশের মন্বন্তর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গনগনে আঁচ তখন পড়েছে ভারতেও। লক্ষ লক্ষ ভারতবাসী না খেতে পেয়ে মারা গিয়েছিল। বিশেষ করে দুই বাংলায় দুর্ভিক্ষের করাল থাবা তখন সবচেয়ে করুণ। এই করুণ পরিণতির জন্য তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলকেই দায়ী করেছিলেন অনেকে। ব্যোমকেশের পঞ্চম মরসুমে অনির্বাণের বেশ কিছু সংলাপের মধ্যেও সেই বিদ্বেষ প্রকট। সেইরকমই এই মন্বন্তরের ফায়দা তোলার চেষ্টা করেছিল একদল মহাজন। চালের বাজের শুরু হয়েছিল কালো বাজারি। বাজারে চাল নেই। মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্তদের সাধ্যের বাইরে তখন চাল কেনা। বাংলার দুর্নীতিবাজ এই মহাজন এবং ব্রিটিশদের অধীনস্থ দেশিয় কর্মচারিদের মোটেই সু-চোখে দেখতেন না ব্যোমকেশ। অনির্বাণের চরিত্রের মধ্য দিয়ে যা সুস্পষ্ট করে তুলেছেন পরিচালক তথা সিনেম্যাটোগ্রাফার সৌমিক হালদার। সংলাপের মধ্য দিয়েই আন্তজার্তিক প্রেক্ষাপট চুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: হৃদয় ছোঁয়া ছবি অভিজিৎ-সুদেষ্ণার ‘শ্রাবণের ধারা’ ]
শরদিন্দুর কালজয়ী চরিত্র ব্যোমকেশকে নিয়ে আজও মাছে-ভাতে বাঙালি নস্ট্যালজিয়ায় বুঁদ। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ভারতে, বলা ভাল কলকাতা শহরে তখন অলি-গলিতে অরাজকতা। লুম্পেনরাজ, নিষিদ্ধ মাদকে বুঁদ, খেটে খাওয়া শ্রেণির মানুষের বেওয়ারিস লাশ উদ্ধার তখন সভ্য সমাজের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। সেই সময় রহস্যভেদে আবির্ভাব সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ বক্সীর। অনেকটা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের চাকরি ছেড়ে গোয়েন্দাকাহিনি লিখতে বসা স্যার আর্থার কোনান ড্যায়ালের সৃষ্টি শার্লক হোমসের ন্যায়। শার্লকের সঙ্গী ওয়াটসনের মতো ব্যোমকেশেরও জুটেছিল লেখক বন্ধু অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্চম সিরিজের কাস্টিংয়েও কোনওরকম হেরফের হয়নি। সত্যান্বেষীর ভূমিকায় অনির্বাণের পাশাপাশি, বন্ধু অজিতের চরিত্রে সুপ্রভাত এবং স্ত্রী সত্যবতীর চরিত্রে ঋদ্ধিমা। তবে ইন্দ্রাশীষ এবং খলনায়কের চরিত্রে পরিচালক রাজর্ষি দে বিশেষ করে উল্লেখ্য। রাজর্ষির অভিনয় অন্যবদ্য।
[আরও পড়ুন: মার্কিন শিল্পীর তুলিতে সেজে উঠছে শবর গ্রাম, দেওয়াল-দালানে ত্রিমাত্রিক ছবি]
The post অন্যান্য সিজনের তুলনায় ‘ব্যোমকেশ ফাইভ’ কেন আলাদা জানেন? appeared first on Sangbad Pratidin.