স্টাফ রিপোর্টার: এবার সল্টলেক, কল্যাণী, আসানসোল-দুর্গাপুর, এসজেডিএ, হলদিয়া-সহ নগরায়ন দপ্তরের অধীন স্বশাসিত এলাকায় লিজে থাকা বাস্তুজমির নিরঙ্কুশ মালিকানা দিতে সিদ্ধান্ত নিল রাজ্যের বিশেষ মন্ত্রিগোষ্ঠী। রাজ্য সরকারের ভূমি ও ভূমি-সংস্কার দফতরের বিজ্ঞপ্তি মেনেই জমির বর্তমান বাজারমূল্যের একটি অংশ সরকারকে এককালীন জমা দিলেই ব্যক্তি-মালিকানা (ফ্রি-হোল্ড) পাবেন লিজহোল্ডাররা। মঙ্গলবার বিধানসভায় পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের ঘরে মন্ত্রিগোষ্ঠীর ওই বৈঠক বসে। লিজ জমির মালিকানা ‘ফ্রি-হোল্ড’ দেওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করলেও মন্ত্রিগোষ্ঠীর তরফে বিষয়টি নিয়ে কেউই প্রকাশ্যে সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলেননি। স্রেফ প্রস্তাবটি মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছে মন্ত্রিগোষ্ঠী। বৈঠকে ফিরহাদ ছাড়াও ছিলেন মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস, মলয় ঘটক, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, জাভেদ খান, ডা. শশী পাঁজা। মন্ত্রিগোষ্ঠীর এই প্রস্তাব কার্যকর হলে সল্টলেক, কল্যাণীর মতো পুরএলাকায় অতি মূল্যবান লিজ জমির হোল্ডাররা ব্যক্তি-মালিকানার জেরে পছন্দের ক্রেতাকে বিক্রি করার ক্ষেত্রে আর কোনও বাধা থাকবে না।
[আরও পড়ুন: শাবানা আজমির নাম করে সাইবার ক্রাইম, অনুরাগীদের সাবধান করলেন অভিনেত্রী]
সল্টলেক, হলদিয়া, কল্যাণী-সহ নগরায়ন দফতরের অধীনে বহু জমি ৩৩ ও ৯৯ বছরের জন্য লিজ দিয়েছে রাজ্য সরকার। এবার সেই লিজ জমিগুলিই দ্রুত ব্যক্তি-মালিকানা দেওয়ার পথে এগোচ্ছে নগরোন্নয়ন দফতর। মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠকে থাকা রাজ্যের এক ক্যাবিনেট মন্ত্রীর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে ভূমি ও ভূমি-সংস্কারের বিজ্ঞপ্তিতে অন্য একাধিক দফতরের অধীন লিজ জমির ক্ষেত্রে যে আইন কার্যকর হয়েছে তা এবার নগরায়নের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য়ের সিদ্ধান্ত হল। সল্টলেক, হলদিয়া, আড্ডা, কল্যাণী, শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদের অধীনের জমিগুলি খুবই দামি হওয়ায় রাজ্য অত্যন্ত সতর্কভাবে পা ফেলছে। অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন গ্রহণ করে রাজ্য মোটা টাকা কোষাগারে জমা নিয়ে তবেই লিজ জমিকে ব্যক্তিমালিকানা দেওয়ার প্রক্রিয়া চালু করবে।’’ নগরায়ন দফতরের অধীন স্বশাসিত পর্ষদে থাকা এক শীর্ষ সরকারি পদস্থ আধিকারিক বৈঠক শেষে স্বীকার করেন, ‘মন্ত্রিগোষ্ঠীর প্রস্তাব কার্যকর হলে যেমন লিজ থেকে পরিবর্তিত হওয়া ব্যক্তি-মালিকানায় পাওয়া জমি চড়া দামে প্রকাশ্যে বিক্রি করা যাবে, তেমনই রাজ্য সরকারের কোষাগারে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা পড়বে।’ মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠক শেষে এক ক্যাবিনেট মন্ত্রী কেন্দ্রকে কটাক্ষ করে বলেন, “আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিজেপি সরকার যতই টাকা না দিয়ে বঞ্চনা করুক, বাংলাকে আটকানোর চেষ্টা করুক না কেন, পারবে না। বিকল্প পথে কোষাগারে রাজস্ব সংগ্রহ করে বাংলার উন্নয়ন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, খেলা হবে চালিয়ে নিয়ে যাবেনই।”
রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, ‘‘শিল্প ও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত লিজের জমি ফ্রি-হোল্ড করা হবে। সেক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট ‘কনভার্সন-ফি’ জমা নিয়ে ব্যক্তি-মালিকানা দেওয়া শুরু হচ্ছে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর সম্মতি পাওয়া গেলেই এবার নগরায়নের জমির ব্যক্তি-মালিকানা দেওয়ার আবেদন গ্রহণ শুরু হবে। দেখা হবে, জমিটি ন্যূনতম ৯৯ বছরের জন্য লিজ নেওয়া হয়েছে কি না। দালাল ও দুর্নীতি রুখতে শুধুমাত্র অনলাইনে আবেদন নেওয়া হবে। জমির এই চরিত্র বদলের জন্য (কনভার্সন) কত খরচ হবে, তাও সল্টলেকের নগরায়ন দফতর থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আগাম জানিয়ে দেওয়া হবে।’ শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, জমির ব্যক্তি-মালিকানা দেওয়ার ক্ষেত্রে শুধু আবেদন নয়, রাজ্য কোষাগারে মেটাতে হবে ‘কনভার্সন ফি’। নবান্ন সূত্রে খবর, কলকাতা ও লাগোয়া শহরতলির ভূমি ও ভূমি-সংস্কার দফতরের অধীনে যে সমস্ত জমি ৯৯ বছরের জন্য লিজে আছে, তার বাসিন্দারা জমির বর্তমান বাজারদরের ১৫ শতাংশ দিলেই পেয়ে যাবেন মালিকানাস্বত্ব। আর ৩০ বছরের লিজে থাকলে দিতে হবে বর্তমান বাজার দরের ৭০ শতাংশ টাকা। স্বভাবতই এর ফলে ওই সব জমির বাসিন্দারা তাঁদের বাস্তুজমির মালিকানাস্বত্ব হাতে পাওয়ায় উইল বা বিক্রি করার ক্ষেত্রে নানা সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পাবেন।