সরষের তেলের মতো গাঢ় রং কিংবা লালচে বর্ণের ইউরিন হলে হেলাফেলা নয়। বারাসতের নারায়ণা হাসপাতালে ইউরোলজিস্ট ডা. চন্দ্রশেখর পাত্র জানালেন কেন এই লক্ষণগুলো থাকলে সতর্ক হবেন। তাঁর পরামর্শ এই প্রতিবেদনে তুলে ধরলেন মৌমিতা চক্রবর্তী।
ইউরিনের রঙে (Colour of Urine) পরিবর্তন বা অস্বাভাবিকতা শরীরের অভ্যন্তরের সুপ্ত রোগের সম্ভাবনা ও ঝুঁকি নির্দেশ করে। এই রঙের তারতম্যের ভিত্তিতে শরীরে কী রোগ বাসা বাঁধছে তা বোঝা সম্ভব। আসলে, আমাদের কিডনির প্রধান কাজ হল বিপাক ক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্ট শরীরের বিপাকীয় বর্জ্য উপাদানকে ফিল্টার করে প্রস্রাবের আকারে বাইরে বের করে দেওয়া। সুতরাং শরীরের ভিতরে কোনও রোগের সৃষ্টি হলে স্বাভাবিকভাবেই প্রস্রাবের রং পরিবর্তিত হয়।
কখন সাবধান হতে হবে
সাধারণত প্রস্রাবের রং জলের মতোই বা হালকা হলুদ বর্ণের। নারী, পুরুষ, শিশু নির্বিশেষে সকলের প্রস্রাব হলুদ হয় ডিহাইড্রেশনের জন্য, যার অন্যতম কারণ জল কম খাওয়া। ২ লিটারের কম জলপান, রোদে ঘুরে কাজ সঙ্গে অতিরিক্ত ঘাম ও তুলনায় জল কম পান করলে ও বমি, ডায়েরিয়া হলে শরীরে জলের ঘাটতি হয় ও গাঢ় হলুদ রঙের প্রস্রাব হয়। তাছাড়া জন্ডিস হলে অর্থাৎ লিভারে কোনও ইনফেকশন, ভাইরাল বা অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিস, ইউরিনারি ব্লাডার ড্যামেজ হলেও রং গাঢ় হলুদ হতে পারে।
ডায়বেটিস রোগী এবং ৬০ ঊর্ধ্ব পুরুষদের প্রস্টেটে স্টোন বা ক্যানসার, মহিলাদের ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের লক্ষণও এটা হতে পারে। সেই সময় ইনফেকশনের জন্য পাস সেল উপস্থিত থাকায় শরীর থেকে প্রোটিন বেরিয়ে যাওয়ায় ঘোলাটে প্রস্রাব হয়, যাকে পাইউরিয়া (Pyuria) বলে। রং বদলানোর সঙ্গে প্রস্রাবের জায়গায় জ্বালা-যন্ত্রণা, জ্বর, তলপেটে ব্যথা প্রভৃতি উপসর্গ দেখা যায়।
লাল বা গোলাপি বর্ণের প্রস্রাব হওয়া খুবই গুরুতর সমস্যার লক্ষণ। তখন প্রস্রাবের সঙ্গে হালকা মাইক্রোস্কোপিক রক্ত আসে অর্থাৎ হেমাচুরিয়া হয়। সঙ্গে দুর্গন্ধ, প্রস্রাবের গতি কমে যাওয়ার মতো উপসর্গ মানেই এক্ষেত্রে কিডনির ট্র্যাক্ট, ইউরিনারি ব্লাডার বা প্রস্টেটের স্থানে স্টোন, টিউমার বা ইনফেকশন এমনকী, ক্যানসার হতে পারে। যেটি কখনওই এড়িয়ে যাওয়ার বিষয় নয়। কিডনির কোনও গুরুতর অসুখ থেকেও এমন হতে পারে।
[আরও পড়ুন: আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের আবর্জনা লাগাতার মিশছে দামোদরে, বাড়ছে চর্মরোগ]
আবার কখনও প্রস্রাব কমলা বা সবুজ বর্ণ হলে রোগী প্রতিনিয়ত কী ওষুধ খান তার সম্বন্ধে জানতে হবে। রোগী ভিটামিন সমৃদ্ধ ওষুধ খেলে প্রস্রাব হলুদ হবে। এইচ.আই.ভি, অ্যান্টি ভাইরাল বা অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টি সাইকিয়াট্রিক ওষুধ খেলে হলুদ ও সবুজ উভয় রঙের হয়, টিবির ওষুধ সেবন করলে রোগীর প্রস্রাবের রং কমলাও হতে পারে।
চিকিৎসা পদ্ধতি
পাইউরিয়ার উপসর্গ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ইউরিন টেস্ট ও অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে। ইউরিন লাল বা গোলাপি হলে একটা আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করে রোগের প্রকার বা স্থান সম্বন্ধে জেনে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করা বাঞ্ছনীয়। রোগ অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি ভিন্ন হয়। ইউরিন ইনফেকশন হলে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে। প্রয়োজনে ইউরোলজিস্টের পরামর্শ নিন। সাধারণত শিশুদের প্রস্রাবের রং পরিবর্তন হয় না। হলে তার পিছনে জন্ডিস বা লিভারের সমস্যার ইঙ্গিত। তাই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি।
কী করণীয়
প্রধানত ৪-৫ মাস এ রাজ্যে খুব গরম থাকে। ইউরিনের রং পরিবর্তিত হওয়ার ৯০% কারণ ডিহাইড্রেশন। সুতরাং সারাদিনে ২.৫ থেকে ৩ লিটার জল খাওয়া ও খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন করা আবশ্যক। সাথে কমলা, টম্যাটো, পাতিলেবু , মরসুমি ফল ও শাকসবজি খেতে হবে। কম তেলযুক্ত খাবার ও কম প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার উপকারী।