সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লিঙ্গ বৈষম্য, সমকাম, রূপান্তরকামী – এসব নানা বিষয় নিয়ে আজকাল তুমুল চর্চা চলে। কোথাও সমকামী যুগলের বিয়ে মেনে নেয় না সমাজ, চাপে পড়ে বিচ্ছিন্ন হতে হয় তাঁদের। কোথাও আবার ছেলে সন্তান হাবভাব মেয়েদের মতো হলে পরিবারই তাকে দূরে সরিয়ে দেয়। এছাড়া কন্যাসন্তানের প্রতি অবজ্ঞা তো সেই কবে থেকেই চলে আসছে আমাদের সমাজে। কিন্তু মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, ভাবনাচিন্তাও তো চিরপ্রবহমান। তাও পরিবর্তনশীল। কোনও ভাবনা প্রগতির পথে বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। এই যেমন কানাডার (Canada) দম্পতি। তাঁদের পুত্রসন্তান ঠিক যেন ছেলে নয়, অন্তর থেকে সে একজন নারী। এই কথা জানার পর তা প্রকাশ্যে আনার জন্য একেবারে পার্টির (Celebration) আয়োজন করলেন মা, বাবা। উদ্দেশ্য একটাই – সন্তানের মধ্যেকার আসল সত্ত্বা গোপন না করে তা সকলের সামনে আনা। জন্মগতভাবে সে পুরুষ হলেও, আন্তরিকভাবে সে নারী (Woman)।
কানাডার ওন্টারিওর বাসিন্দা এলা স্কট। এখন বয়স ৮। আর এই ৮ বছর বয়সেই এলাকে ‘মেয়ে’ রূপে আত্মপ্রকাশের রাস্তা খুলে দিলেন তার বাবা-মা নিক্কি ও গ্রাহাম। তবে এই পথে হাঁটা কিন্তু সহজ ছিল না কারও পক্ষেই। না এলা, না তার পরিবার। মাত্র ৬ বছর বয়সেই এলা বুঝতে পারে, সে আর পাঁচজন স্বাভাবিক ছেলের (Boy) মতো নয়। অন্তরে সে একজন নারী। আর বোঝামাত্রই বাবা-মাকে নিজের কথা জানিয়েছিল। মা নিক্কি জানাচ্ছেন,”একদিন ও এসে বলল, ভিতরে ভিতরে আমি কিন্তু ছেলের মত কিছু অনুভব করি না। আমি কিন্তু ছেলে নই। ওই বয়স থেকেই ও মেয়েদের পোশাক পরতে শুরু করে, পুতুল নিয়ে খেলে। আমাদের আরও সন্তান আছে। তাদের সঙ্গে ও খেলত না।” নিক্কি আরও বলেন, ”স্বীকার করছি, আমরা ভেবেছিলাম এটা একটা সাময়িক ব্যাপার, ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু ও যে তখনই নিজের লিঙ্গ সম্পর্কে এত সুস্পষ্টভাবে বুঝে গিয়েছিল, তা আমরা ভাবিনি।”
[আরও পড়ুন: বিজেপির নয়া চাল? দ্রৌপদী মুর্মুকে ভোট দেওয়ার জন্য তৃণমূল বিধায়ককে ফোনে চাপ]
এরপর নিক্কি ও গ্রাহাম মনোবিদের (Psychologist) সাহায্য নিলেন। তাতেও বাধা। দেখা যাচ্ছে, অনেকেই এলার মতো সমস্যা অর্থাৎ রূপান্তরকামী (Transgender) তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে কাজ করেন, কিন্তু ছোটদের জন্য কোনও চিকিৎসক নেই। কারও থেকেই তেমন সুপরামর্শ নিতে পারেননি এলার বাবা-মা। এদিকে, ছ বছর পেরিয়ে এলার রূপ তখন প্রায় মেয়েদের মতো। সে চুল বড় করছে, মেয়েদের পোশাক অর্থাৎ স্কার্ট আর ফ্রক ছাড়াই কিছুই পরছে না। চুল লম্বা না হলে সে মনখারাপ করে থাকছে। এসব দেখে নিক্কি-গ্রাহাম বুঝতে পারেন, এলাকে তার মতোই বেড়ে উঠতে দেওয়া উচিত। অন্যথায় তার বড় ক্ষতি হতে পারে।
সেই অনুভূতি থেকেই এলার অষ্টম জন্মদিনে নতুন করে তার লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ্যে (Gender reveal) আনার উদ্যোগ মা-বাবার। এখন এলাকে দেখলে কারও বোঝার উপায় নেই, জন্মগতভাবে সে ছেলে। সুন্দর, ফুটফুটে এক মেয়ে এলা স্কট। মুখে মিষ্টি হাসি, লম্বা সোনালি চুল, ছিপছিপে চেহারা। তার কথাবার্তার ধরনেও বদল এসেছে। মেয়েদের মতো নরম ভঙ্গিতে সে কথা বলে এখন। সন্তানের এই পরিবর্তনে আক্ষেপ নেই, বরং খুব খুশি নিক্কি আর গ্রাহাম। সেই খুশিই যেন ফুটে উঠল এলার জন্মদিনে। আমন্ত্রিতদের জানালেন, তাঁদের সন্তান এলা ছেলে নয়, মেয়ে।
[আরও পড়ুন: ‘গণতন্ত্র বাঁচাতে আমাকে ভোট দিন’, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রাক্কালে আবেদন যশবন্ত সিনহার]
সন্তানের জীবনে এই যে এক বিরল পর্যায়, তার বিস্তারিত সোশ্যাল মিডিয়ায় (Social Media) তুলে ধরেছেন মা নিক্কি। বলছেন, ”ওর মতো আরও অনেক শিশুই হয়ত এমন। কিন্তু তাদের পথ দেখানোর কেউ নেই। আমি চাই, এলার এই কাহিনি যেন তাদের কিছুটা আলোর দিশা দেখাতে পারে। তবেই আমার এই বার্তা সার্থক হবে।” সত্যি! পৃথিবীর সব অভিভাবক যদি ঠিক এভাবেই সন্তানের অন্তরটা দেখতে পারতেন, তবে জীবনের জটিলতা হয়ত কমত অনেকটাই।