প্রীতিকা দত্ত: ম্যাচের ৫৯ মিনিটে পোগবার পা থেকে তৃতীয় গোলটা আসতেই উল্লাসে ফেটে পড়ল ‘দ্য পার্ক’-এর গ্যালাক্সি হল। কলকাতায় নিযুক্ত ফ্রান্সের কনসাল জেনারেল দামিয়ান সঈদ জড়িয়ে ধরলেন তাঁর ডেপুটি অলিভিয়ঁ ক্যাসিনকে। ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে জয় নিশ্চিত করতে ফ্রান্সের এই গোলটা দরকার ছিল। আর পল পোগবা সেটাই করে দেখিয়েছেন। তারপর আর কয়েক মিনিটের অপেক্ষা। আরও একটা গোল। এ বারের গোলদাতা উনিশ বছরের কিলিয়ান এমবাপে। গ্যালাক্সি হল-এ কলকাতার ফরাসি কনস্যুলেট তরফে বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখার জন্য ছিল বিশেষ ব্যবস্থা। দর্শকদের হাতে তখন ফ্রান্সের পতাকা। অনেকেই গাল রাঙিয়েছেন পতাকার রঙে। কেউ কেউ ফ্রেঞ্চ ভাষায় গান ধরেছেন। যার ইংরেজি তর্জমা করলে হয়, ‘উই আর দ্য চ্যাম্পিয়ন…’।
[খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে হাতে বিশ্বকাপ, ফুটবল ইতিহাসে বিরল কৃতিত্ব দেশঁর]
উপস্থিত দর্শকরা শুরু থেকে এমবাপের গোল করার ঝলকটা দেখতে চেয়েছিলেন। হতাশ করল না ফ্রান্স। খেলার তখন সত্তর মিনিট ছাড়িয়েছে। ৪-২ গোলে এগিয়ে ফ্রান্স। কোনও ভাবে বাকি সময়টা মদ্রিচ, পেরিসিচদের আটকাতে পারলেই বিশ্বজয় করবে ফ্রান্স। হলও তাই। গ্যালাক্সি হল-এ খেলা দেখছিলেন কলকাতার গাইনোকোলজিস্ট গার্গী চক্রবর্তী। কলেজে পড়তে পড়তে রপ্ত করেছেন ফরাসি ভাষাটা। গার্গী বললেন, “ক্রোয়েশিয়া কিন্তু খুব ভাল খেলছে। লাস্ট মিনিটে গোল করা ওঁদের স্বভাব। তবে আর মাত্র ছ’মিনিট বাকি। এটাই যা স্বস্তি। রেফারির শেষ বাঁশি অবধি অপেক্ষা করতেই হবে।”
[ক্রোয়েশিয়ার স্বপ্নভঙ্গ, দ্বিতীয়বার বিশ্বজয়ী ফ্রান্স]
২০১৪ থেকে কলকাতার বাসিন্দা ফ্লোরেন্ত লুলিরেঁ। আনন্দ চেপে রাখতে না পেরে বলেই ফেললেন, “১৯৯৮ সালে ফ্রান্স যখন প্রথম বিশ্বকাপ জিতল আমি তখন ১৮। দেশ থেকে বহু দূরে আজও আমার মধ্যে একই রকম উত্তেজনা কাজ করছে। ফুটবলে ফ্রান্স বিশ্বজয়ী।”খেলা যখন প্রায় ৮৮ মিনিটে গড়িয়েছে কলকাতার ফরাসি ভাষী মানুষগুলোর চোখ চকচক করছে। একে অপরকে ধরে অভিনন্দন বার্তা দিচ্ছেন। ইতিহাস গড়তে চলেছে ফ্রান্স।কনসাল জেনারেলের মুখে তখন হাসির রেখা। মাঝে ক্রোয়েশিয়া দু’টো গোল দেওয়ায় একটু ভয়ই পেয়েছিলেন। কিন্তু শেষে উত্তেজনায় নিজের চেয়ার ছেড়ে তিনিও পিছনের সারিতে এসে ফরাসিদের হাতে হাত রেখে পাঁচিল গড়েছেন। অপেক্ষা রেফারির শেষ বাঁশির। আর রেফারির শেষ হুইসল বাজতেই চিৎকার। কনসাল জেনারেল বললেন, “ক্রোয়েশিয়া টাফ ফাইট দিয়েছে। কিন্তু এই জয় আমাদের দেশের জয়। ছেলেরা ভীষণ ভাল খেলেছে। অভিনন্দন ওদের সবাইকে।” কথাই ফুরোতে চাইছিল না যেন ডেপুটি কনসাল জেনারেলের। বললেন, “এর চেয়ে খুশির মুহূর্ত হতে পারে না। ১৯৯৮-এ সময় বেশ ছোট ছিলাম। টিনএজার। আজকের রাতটা তাই সত্যিই বড্ড স্পেশাল।”
[পরাজয়েও মন জয় মদ্রিচের, সোনালি ট্রফি না এলেও হাতে এল সোনার বল]
The post বিশ্বজয়ের রাতে কলকাতায় এক টুকরো প্যারিসকে চেনাল ‘দ্য পার্ক’ appeared first on Sangbad Pratidin.