shono
Advertisement

সংসদে ‘অসংসদীয়’শব্দে লাগাম, ‘কী বলব, ওরা ঠিক করে দেবে!’, সরব অভিষেক-সহ বিরোধীরা

দেশ-বিদেশের বহু সংসদে 'কটু' শব্দের উপরে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, মন্তব্য কেন্দ্রর।
Posted: 05:52 PM Jul 14, 2022Updated: 07:21 PM Jul 14, 2022

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাদল অধিবেশনের আগে শব্দ ‘ফতোয়া’ জারি হয়েছে সংসদে (Parliament)। একগুচ্ছ শব্দতালিকা প্রকাশ করেছে লোকসভার সচিবালয়। আর বলা যাবে না ‘লজ্জাজনক’, ‘নির্যাতন’, ‘বিশ্বাসঘাতকতা’, ‘নাটক’, ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’, ‘অযোগ্য’, ‘ভণ্ডামি’র মতো শব্দ। কেন? কারণ মোদি সরকারের সচিবালয়ের মতে এগুলি ‘অসংসদীয়’ শব্দ। এই ঘটনায় একযোগে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। কংগ্রেস (Congress) থেকে তৃণমূল (TMC) সকলেরই বক্তব্য, আদতে বিরোধী কণ্ঠরোধ করাই সরকারের উদ্দেশ্য।

Advertisement

এই বিষয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) বলেন, “এই ঘটনা একনায়কতন্ত্রের চূড়ান্ত। ‘দুর্নীতি’, ‘লজ্জিত’ বলতে পারব না। সরকার যে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করছে, তা বলতে পারব না। ওরা ঠিক করে দেবে আমরা কী বলব, কী খাব, কীভাবে পুজো করব। সবরকম নিদান দিচ্ছে বিজেপি সরকার। এর প্রতিবাদের ভাষা আমার জানা নেই। ওরাই যদি সব ঠিক করে দেয়, তাহলে আর নির্বাচন করে লাভ কী! তাহলে সংসদ ভবন রেখেই বা লাভ কী! ব্রিটিশ আমলে ভারতের মানুষ এতখানি পরাধীন ছিল না।” মুখ খুলেছেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষও। তিনি বলেন, “বিজেপি গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করতে চাইছে। বক্তৃতাকেও ভয় পাচ্ছে।”

[আরও পড়ুন: ‘চাকরির জন্য মায়ের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না’, মন্তব্য বম্বে হাই কোর্টের]

এই বিষয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূল (TMC) সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন (Derek O’Brien )। তিনি সচিবালয়ের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, আমি ‘মৌলিক’ শব্দ ব্যবহার করব। আমাকে সাসপেন্ড করুন। গণতন্ত্রের জন্য লড়ব। ডেরেক টুইট করেন, “ক’দিনের মধ্যে সংসদের অধিবেশন শুরু হবে। সাংসদদের উপরে হাস্যকর নির্দেশিকা জারি হল। আমরা এখন থেকে নিজেদের বক্তব্য পেশ করার সময় ‘মৌলিক’ শব্দগুলি ব্যবহার করতে পারব না। যেমন, লজ্জাজনক, বিশ্বাসঘাতকতা, দুর্নীতিগ্রস্ত, কপটতা, অযোগ্য। আমি এই শব্দগুলি ব্যবহার করব। সাসপেন্ড করুন। গণতন্ত্রের জন্য লড়ব।”

মোদি সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় গর্জে উঠছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra)। কেন্দ্রের নির্দেশিকাকে কটাক্ষ করে লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার মীরা কুমারের ভঙ্গিতে টুইটারে মহুয়া লেখেন, “বৈঠ যাইয়ে, বৈঠ জাইয়ে… প্রেম সে বোলিয়ে।” আসলে একসময় এভাবেই উত্তেজিত সাংসদদের শান্ত করতেন মীরা কুমার। মহুয়া আরও লেখন, “লোকসভা ও রাজ্যসভায় নতুন অসংসদীয় শব্দের তালিকায় নেই সঙ্ঘি। আসলে কীভাবে ভারতকে ধ্বংস করছে বিজেপি, তার ব্যখ্যা দিতে গিয়ে বিরোধীরা যে শব্দ ব্যবহার করত, তা নিষিদ্ধ করেছে সরকার।” 

 

[আরও পড়ুন: জুবেইরকে জেল হেফাজত হাথরস আদালতের, ফের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ সাংবাদিক]

একই বিষয়ে কটাক্ষ করে টুইট করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও (Rahul Gadhi)। যেন বা একটি অভিধানের পাতাই টুইট করেছেন তিনি! সেই পাতায় একটিই শব্দ ‘আনপার্লামেন্টারি’ (Unparliamentary) বা ‘অসংসদীয়’। এরপর বিশেষণটিকে ব্যাখ্যা করা হয়- কীভাবে প্রধানমন্ত্রী সরকার চালাচ্ছেন, তা সঠিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে এই শব্দ দিয়ে। এবার তা বলার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হল। অভিধানের কায়দাতেই নীচে অসংসদীয় শব্দের ব্যবহারের উদাহরণ দেওয়া হয়। সেটি হল- জুমলাজিভি তানাশা লোকটা যখন মিথ্যে বলে এবং তাঁর অর্মণ্যতা প্রকাশ্যে আসে তখন সে কুম্ভীরাশ্রু ফেলে। 

 

এদিকে লাগাতার বিরোধিতায় মুখে খুলেছে কেন্দ্র। সরকারি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা বহু রাজ্যের বিধানসভা ও বিদেশের বহু সংসদে রয়েছে। নতুন কিছু না। বিরোধীরা অহেতুক উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, ‘হেনস্তা’ শব্দটি অস্ট্রেলিয়ার সংসদে নিষিদ্ধ। ‘অক্ষম’ শব্দটি নিষিদ্ধ ছত্তিশগড় বিধানসভায়। সরকারি সূত্রে আরও দাবি করা হয়েছে, প্রতি বছরই সংসদের সচিবালয় এই ধরনের তালিকা প্রকাশ করে। এটা কোনও নির্দেশিকা নয়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement