বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, মাদুরাই: বিজেপিই মূল শত্রু। নাকি রাজ্যের ক্ষেত্রে তৃণমূলকেও একই সারিতে বসানো হবে। এই প্রশ্লে দোষারোপ পালটা দোষারোপ সিপিএমের ঘরে বাইরে। পার্টি কংগ্রেসের দ্বিতীয়দিনে ঘরে বাইরে যখন বিজেপি ও তৃণমূলকে একই সারিতে বসানোর দাবিতে সোচ্চার বঙ্গ সিপিএমের কমরেডরা, তখন আরও একবার বিজেপিকেই মূল শত্রু চিহ্নিত করার পক্ষে সওয়াল করলেন কারাট দম্পতি। প্রকাশ ও বৃন্দা দু’জনের নিশানাতেই ছিল গেরুয়া শিবির। পালটা তৃণমূলকে নিশানা বঙ্গ নেতাদের। এদিকে, বয়সের কারণে পার্টির শীর্ষ কমিটি থেকে বাংলার একগুচ্ছ নেতা বাদ পড়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তাঁদের জায়গায় কারা স্থান পাবেন তা নিয়ে কাউন্টডাউনও চলছে।
পার্টি কংগ্রেসের প্রথমদিন সিপিএম পলিটব্যুরোর আহ্বায়ক প্রকাশ কারাট-সহ বাম শরিকরা বেঙ্গল লাইন বাতিল করে বিজেপিকে মূল শত্রু চিহ্নিত করার পক্ষে সওয়াল করেন। বাংলায় পথভ্রষ্ট সিপিএমের দেশজুড়ে প্রধান শত্রু হিসাবে সংঘ পরিবার ও বিজেপিকে চিহ্নিত করে চরম সংগ্রামের রাস্তায় হাঁটতে হবে বলে পার্টি কংগ্রেসের প্রথমদিনই প্রকাশ কারাটকে দু‘হাত তুলে সমর্থন জানান চার শরিক সিপিআই, আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক ও সিপিআইএল লিবারেশন। চলতি বছরে সংঘ পরিবারের পাশাপাশি সিপিআইয়ের ১০০ বছর। শতবর্ষের প্রথমে এই দুই সংগঠনের কে কোথায় ছিল আর আজ কোথায় দাঁড়িয়ে তাও ভেবে দেখা প্রয়োজন বলে পরামর্শ শরিকদের। বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারকে বারবার আক্রমণের নিশানায় আনলেও বাংলার ক্ষেত্রে তৃণমূলকে নিয়ে নিশ্চুপ থাকলেন শরিক নেতারা। জনসমর্থন কেন ফিরছে না সেই পথ অনুসন্ধানের ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দিলেন প্রকাশ কারাত ও শরিকরা নেতারা।
বৃহস্পতিবারও নিজের অবস্থান থেকে একচুল নড়েননি কারাট। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনকে পাশে বসিয়ে প্রকাশ জানান, যেভাবে বিজেপি বিরোধী রাজ্যগুলির ওপর অর্থনৈতিক ও সামাজিক আঘাত নামিয়ে আনছে মোদি সরকার তা প্রতিরোধ করতে সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কারণ মোদি সরকার ও সংঘ পরিবার সংবিধানের তোয়াক্কা না করে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর আঘাত আনছে। প্রকাশের অবস্থানকে সমর্থন জানান তামিলনাড়ু ও কেরলের মুখ্যমন্ত্রীরা। বাইরে যখন কারাট নিজের অবস্থানে অনড় তখন পার্টি কংগ্রেসের মঞ্চে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন বাংলার প্রতিনিধিরা। তৃণমূল বকলমে সংঘ পরিবারের এজেন্ডা বাস্তবায়িত করছে। বাংলায় বাম ও কংগ্রেসের উপর অত্যাচার নামিয়ে এনেছে বলে অভিযোগ করেন। এই অবস্থায় অন্তত বাংলায় সিপিএমের পক্ষে তৃণমমূলের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতায় জায়গা নেই। বরং তৃণমূল বিরোধী আন্দোলন আরও জোরাল করতে হবে বলে দাবি করেন রাজ্য কমিটির সদস্য দেবাশিস ভট্টচার্যরা।
এদিকে, এখনও সাংগঠনির খসড়া নিয়ে আলোচনাই শুরু হয়নি। কিন্তু সংগঠনের কমিটিতে জায়গা পেতে ইঁদুর দৌড় শুরু হয়েছে গিয়েছে। এবার বয়সের কারণে পার্টির পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়বেন সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর জায়গায় কে স্থান পাবেন তা নিয়ে টানাপোড়েন চলছে। সিনিয়র হিসাবে শ্রীদীপ ভট্টাচার্যর পলিটব্যুরোতে জায়গা পাওয়ার কথা। কিন্তু দৌড়ে রয়েছেন আভাস রায়চৌধুরী, সুজন চক্রবর্তী ও শমীক লাহিড়ীও। আবার কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বয়সের কারণে ৩ জন বাদ পড়বেন। তাঁদের জায়গায় জায়গা করে নিতে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন যুবনেত্রী মীমাক্ষী মুখোপাধ্যায়। আরও বেশ কয়েকটি নাম যেমন উত্তর ২৪ পরগনার পলাশ দাশ, দার্জিলিংয়ের সমন পাঠক বা কলকাতার কল্লোল মজুমদাররা কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা করে নিতে দৌড় শুরু করেছেন।