শম্পালী মৌলিক: লিওনেল মেসিকে দেখতে না পাওয়ার আক্ষেপে রণক্ষেত্র যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন! ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে কারি কারি টাকা খরচ করেও ঈশ্বরের দর্শনপ্রাপ্তি অধরা। সেই রাগেই মাঠে আছড়ে পড়েন বিক্ষুব্ধ জনতা! ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত অব্যবস্থার অভিযোগে গ্রেপ্তার উদ্যোক্তা শতদ্রু দত্ত। এমনকী জনতার রোষে টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রস্তাবও শোনা গিয়েছে। কিন্তু অনুরাগীদের আবেগ বাগে আনা কি অতই সহজ? কান্নাভেজা চোখে তাঁদের একটাই আক্ষেপ, 'টাকা ফেরত পাওয়া গেলেও মেসিকে এক লহমার জন্য সামনে থেকে দেখতে পাওয়ার সুযোগ তো সেই অধরাই রয়ে গেল। এই মাহেন্দ্রক্ষণ তো আমরা আর ফিরে পাব না।' এমন আবহে মেসির কলকাতা সফরের ডামাডোল নিয়ে সংবাদ প্রতিদিন ডট ইন-এর কাছে ক্ষোভপ্রকাশ করলেন টলিউডের ফুটবলপ্রেমী তারকারা।
পরিচালক অরিন্দম শীলের মন্তব্য, "এই ঘটনা কলকাতার জন্য লজ্জাজনক! খুব দুঃখ বোধ করছি। কারণ যে সময়ে ঘটনাটা ঘটে তখন লাইভ টেলিকাস্ট হচ্ছে, সারা পৃথিবীর মানুষ দেখছেন। খুবই অনভিপ্রেত ব্যাপার। উদ্যোক্তাদের আয়োজনে খামতি ছিল। আর এরকম একটা ঘটনার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে হচ্ছে, সেই বিষয়টিও ভীষণ লজ্জাজনক। কত দূরদূরান্ত থেকে বাইরের রাজ্যের মানুষেরা পাগলের মতো মেসিকে একটিবার দেখতে এসেছিলেন, তাঁদের জন্য এটা খুব কষ্টকর।"
ফুটবলপ্রেমী অভিনেতা ঋষভ বসু জানালেন, "খুবই দুঃখজনক আমার কাছে। আমি যেহেতু নিজে ফুটবলের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ১৯৯৭ সালে ফেড কাপ মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল সেমিফাইনাল, যেখানে রেকর্ড সংখ্যক দর্শক ভিড় করেছিলেন যুবভারতীতে, সেটা আমার দেখা প্রথম ফুটবল ম্যাচ মাঠে বসে। আমার কাছে ফুটবল এবং মেসি মানে একটা অন্য আবেগ। সেখানে এই যে বিশৃঙ্খলা হল, এটা বাংলার লজ্জা। এবং ফুটবলপ্রেমী বাঙালিদের আবেগে ধাক্কা! অনেকে এত কষ্ট করে টাকা জমিয়ে এত হাজার টাকা দিয়ে টিকিট কেটে স্বপ্নের নায়ক মেসিকে দেখতে চেয়েছিলেন। যাকে আমরা টিভিতে দেখি, যাঁর খেলা এতবছর ধরে আমাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে, তাঁকে একটু চোখের দেখা দেখতে চেয়েছিল সামনে থেকে। সেটা তো হলই না। দেখলাম, একদল লোক ওঁকে ঘিরে রেখেছে। এবং মেসিকে দেখেও বোঝা যাচ্ছিল যে, উনি বিরক্ত হচ্ছেন। যুবভারতীকে বলা হয়, ভারতীয় ফুটবলের মক্কা, এখান থেকে বাইচুং , সুনীল ছেত্রী উঠেছে। সেখানে ইন্ডিয়ান ফুটবলের এতটা দুর্দশা। আমরা কোথায় চলে গেছি যে বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলতে পারি না। সেখানে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ফুটবলারকে এনে এমন একটা অভিজ্ঞতার সাক্ষী করা হল যেটা গোটা দুনিয়া দেখল। এবং গোটা বিশ্বের কাছে আমাদের মাথা হেঁট হয়ে গেল। যাঁরা বঞ্চিত হলেন, তাঁদের জন্য খারাপ লাগছে। টাকা হয়তো ফেরত পাওয়া যাবে কিন্তু মুহূর্তটা তো ফেরত পাব না। এতগুলো মানুষের আবেগ নিয়ে না খেললেও হত। আশা করি, এই ঘটনা থেকে ভবিষ্যতে শিক্ষা নেওয়া হবে। এখানেই শেষ নয়!
কথাপ্রসঙ্গে ঋষভ জানালেন, "এখানে প্রাথমিকভাবে একটা সেলিব্রিটি ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল, যেখানে আমারও খেলার কথা হয়। কিন্তু সেটা শেষমুহূর্তে বাতিল হয়ে যায়। অব্যবস্থার চূড়ান্ত নিদর্শন!" মেসির কলকাতা সফরে বিশৃঙ্খলার খবরে মন ভেঙেছে মায়ামি নিবাসী টলিউড পরিচালক সুমন ঘোষেরও। তাঁর বিদ্রপবাণ, "আমি ফেসবুকে লিখেছিলাম- ঘরের ছেলে ঘরে ফেরো, মায়ামি ফিরে এসো। কারণ মেসি আমার ঘরের মাঠেই খেলেন।" ক্রীড়াপ্রেমী অভিনেতা বনি সেনগুপ্ত বলছেন, "এটা একেবারে চূড়ান্ত অব্যবস্থাপনা। এত মানুষ যাঁরা নিজের গ্যাঁটের টাকা খরচ করে মেসিকে দেখতে গেলেন, তাদের যদি সেই স্বপ্নপূরণ না হয়, তাহলে তারা ক্ষোভপ্রকাশ করবেই। যুবভারতীতেও সেই রাগের বিস্ফোরণ ঘটেছে। তবে খারাপ লাগছে এমন অনভিপ্রেত ঘটনার সঙ্গে বাংলার নামটা জুড়ে গেল। রাগ হওয়া স্বাভাবিক। উদ্যোক্তারা যখন এতদিন আগে থেকে পরিকল্পনা করছিলেন, তখন ব্যবস্থাপনায় আরও নজর দিলে এমন ঘটনা ঘটত না।"
সঙ্গীতশিল্পী অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় এপ্রসঙ্গে বলেন, "আজ সত্যি সত্যিই মেসিকে দেখব বলে গিয়েছিলাম। আর তার একটা বড় কারণ আমার ছেলে। সে মুম্বই থেকে এসেছে। আমরা দু'জনে মিলে আজ গিয়েছিলাম। আমরা দু'জনেই মেসির বড় ভক্ত। তবে আজ যেটা ঘটল সেটা সত্যিই খুব হতাশাজনক। শুধুই মেসিকে দেখব ভেবে গিয়েছিলাম আজ। তাঁকে কীভাবে দেখব ভেবেছিলাম? মনে হয়েছিল হয়তো, মেসি মাঠ থেকে সকলের দিকে হাত নাড়বেন। হয়তো মারাদোনার মতো মাঠ থেকে দর্শকের গ্যালারিতে সোজা ফুটবলটা পাঠিয়ে দেবেন। হয়তো তাঁর একটা সাক্ষাৎকারও হতে পারত। আর এসব কিছু না হলেও অন্তত মেসি মাঠটাকে প্রদক্ষিণ করবেন। আর আমরা একা মেসিকে দেখব মাঠে। কলকাতার মানুষের উদ্দেশ্যে মেসি কিছু বলবেন। এটুকুই আশা ছিল। কিন্তু ওইসময় মাঠে মেসিকে যেভাবে সকলে ঘিরে ধরেছিল তাতে তাঁকে সত্যিই দেখা যাচ্ছিল না। আর তাই যেটা হল সেটা দর্শক ভালোভাবে নেননি। আমাদের অনেকের কাছে মেসি ভগবান। সেখানে বড়দিনের আগে কলকাতায় মেসি আসছেন এটা নিয়ে সকলেরই মনে একটা আশা ছিল। দর্শক তাঁদের জমানো অর্থ দিয়ে টিকিট কেটে মেসিকে দেখতে গিয়েছিলেন। তাই একবার যদি তাঁর দর্শনই না পাওয়া যায় তাহলে সেটা সত্যিই খুব দুঃখজনক।"
